রবিবার, মে ১৯ ২০২৪ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল | ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

ল্যাপটপ হ্যাং হলে কী করবেন

সাইবার বার্তা ডেস্ক: ল্যাপটপ হ্যাং হলে কী করবেন? তার আগে আমাদের জানতে হবে কি কি কারণে ল্যাপটপ হ্যাং হয়, ল্যাপটপ হ্যাং এর কারণ কি, কিভাবে ল্যাপটপ হ্যাং সমস্যা সমাধান করা যায় উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিন ল্যাপটপ হ্যাং মেরামত করার স্টেপ-বাই-স্টেপ নিয়ম।

 

ল্যাপটপ স্লো চলছে বা হ্যাং করছে ? হ্যাং সমস্যা হলে কি করবেন, ল্যাপটপ হ্যাং হলে করণীয় বিষয় হলো: আপনি যদি দেখেন ল্যাপটপ যদি স্লো চলছে অথবা হ্যাংক করছে, তাহলে বুঝতে হবে এর দুটি কারণ হতে পারে। যেমন-  হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যা, সফটওয়্যার জনিত সমস্যা।

 

সাধারণ ভাবে আমরা যদি ল্যাপটপের এই কারণ দুইটা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে;ফেলি তাহলে ল্যাপটপের প্রায় ৯০% সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারবো। তাহলে চলুন বিষয় গুলো সম্পর্কে একটু গভীরভাবে জানি।

 

ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যা:

আপনি কি জানেন? আপনার ল্যাপটপ হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যার কারণে হ্যাং করতে পারে আবার রিস্টার্ট নিতে পারে। যদি কখনো আপনার ল্যাপটপ হ্যাং করে বা বার বার রিস্টার্ট নেয় তা হলে কি কারণে এমন হতে পারে সে কি কখনো ভেবেছেন? না সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে মেরামত করে নিয়ে এসেছেন। আসলে এটা একটা সাধারণ কমন সমস্যা একটু বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করলেই এর সমাধান পাওয়া যায়।

 

ল্যাপটপ হ্যাং সমস্যার সমাধান:

সাধারণত ল্যাপটপ ২ বছরের বেশি পুরনো হলে ল্যাপটপের ভিতরে অনেক ময়লা জমে যায়, ভিতরের কুলিং সিস্টেম ঠিকমত কাজ করেনা, ফ্যানগুলো সব ময়লা জমে জ্যাম হয়ে ধীরগতি হয়ে যায়। তাই দুই-এক বছরের বেশি পুরনো ল্যাপটপ হলে অবশ্যই একবার আপনার ল্যাপটপ ফুল সার্ভিসিং করে নেওয়া উচিৎ।

 

যেমন- ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক, র‌্যাম, প্রসেসর, পাওয়ার সাপ্লাই, মাদারবোর্ড, কুলিং ফ্যান, কভার ইত্যাদি খুলে থিনার দিয়ে ভালো ভাবে পরিস্কার করে আবার নতুন ভাবে সেটিং করে নেওয়া উচিৎ। যাকে আমরা ল্যাপটপের প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে পারি। কারণ বেশির ভাগ সময় দেখা যায় এ থেকে ল্যাপটপের অনেক সমস্যা অটোমেটিক সেরে যায়।

 

ল্যাপটপের ভিতরের হার্ডওয়্যার সমস্যা :

ল্যাপটপ হ্যাং সমস্যা কয়েকটি হার্ডওয়্যার এর পার্টস জনিত কারণে হতে পারে। যেমন- র‍্যাম, হার্ডডিস্ক, প্রসেসর। যদি আপনার ল্যাপটপে সফটওয়্যার জনিত সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলে হার্ডওয়্যার- র‍্যাম, হার্ডডিস্ক, প্রসেসর পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ র‍্যাম এর কনফিগারেশন ধারণ ক্ষমতা কম থাকলে যেমন-৫১২ র‍্যামে আপনি যদি গ্রাফিক্স এর কাজ করেন তাহলে তো ল্যাপটপ কম্পিউটার হ্যাং করবে। এজন্য সফটওয়্যার এর সাথে হার্ডওয়্যার মিল রেখে সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।

 

বর্তমানে দিনে দিনে যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রতিটা সফটওয়্যার আপডেট হতে আছে ঠিক সেভাবে আমরা কখনো হার্ডওয়্যার আপডেট করে না বা করিনা। আপডেট সফটওয়্যার গুলো সব সময় আপডেট হার্ডওয়্যার চাই কিন্তু আমরা কতবার হার্ডওয়্যার আপডেট করি? যার কারণে এক সময় কম্পিউটার প্রোগ্রাম ভারি হয়ে যায়, কম্পিউটার স্লো হয়ে যায়, হ্যাং করে।

 

ল্যাপটপ পাওয়ার অ্যাডাপ্টার সমস্যা :

আপনার ল্যাপটপের চার্জার পাওয়ার অ্যাডাপ্টার সমস্যা হতে পারে। এজন্য অ্যাডাপ্টারের আউটপুট ভোল্টেজ পরীক্ষা করে দেখুন। অ্যাডাপ্টারের গায়ে আউটপুট ভোল্টেজ আছে দেখুন তারপর পরীক্ষা করে দেখতে হবে ভোল্টেজ কত কম বেশি আছে। যদি আউটপুট ভোল্টেজ রেগুলার ভোল্টেজ এর তুলনায় ২-৩ কম বেশি হয় তাহলে অ্যাডাপ্টার পরিবর্তন করে দেখতে হবে।

 

ল্যাপটপ 1-2 বছরের পুরোনো হলে অটোমেটিক হ্যাং করে এজন্য বেশি পুরোনো ল্যাপটপ হ্যাং করলে সার্ভিসিং করা প্রয়োজন। যদি ল্যাপটপ সার্ভিসিং না করেন তাহলে হ্যাং করবে এটাই স্বাভাবিক।

 

র‍্যাম এর সমস্যার কারণে হ্যাং :

ল্যাপটপের র‍্যাম এর কানেক্টর কার্বন জমে গেলে র‌্যাম ঠিক মত কাজ করতে পারে না, পরিষ্কার করুন। আবার র‌্যামের কাভারেজের তুলনায় সফটওয়্যার ভারি হলে হ্যাং করে। যেমন- আপনার গ্রাফিক্স বা গেম এর জন্য আপনার র‍্যাম একই রেট কি-না পরীক্ষা করে দেখুন।

 

প্রসেসর ওভার হিটিং সমস্যা :

প্রসেসরের কুলিং পেস্ট শুকিয়ে গেলে ওভার হিট হয়ে কম্পিউটার হ্যাং করতে পারে। এজন্য সার্ভিসিং করার সময় নতুন ভাবে কুলিং পেস্ট লাগিয়ে সেটিং করুন। আর কুলিং ফ্যান ঠিকমতো বাতাস প্রবাহ করছে কি-না সেদিকে খেয়াল রাখুন।

 

সিম মেমোরি ব্যাটারি নষ্ট হলে :

আপনার ল্যাপটপের জন্য আলাদাভাবে মেমোরি ধরে রাখার জন্য একটা এক্সট্রা ৩ ভোল্ট ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় সেটা কি সিমস ব্যাটারি বলা হয়। সিমস ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে সিস্টেমের অনেক কিছু ঠিক মত কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য ব্যাটারি পরীক্ষায় পরিবর্তন করে দেখুন।

 

ল্যাপটপের কম্পোনেন্ট জনিত সমস্যা :

সব কিছু করার পরেও যদি আপনার ল্যাপটপ ঠিক নাহয় তাহলে মাদারবোর্ড কম্পোনেন্ট জনিত সমস্যা থাকতে পারে। যেমন- ডায়োড, ক্যাপাসিটর, আইসি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় এগুলো পরীক্ষা করার জন্য পাওয়ার অ্যাডাপ্টার লাইন দিয়ে আলাদা আলাদা আইসি এর উপর ১০ সেকেন্ডের মত হাত দিয়ে দিয়ে দেখুন। যদি হাত দিয়ে থাকা যায় তাহলে বুঝতে হবে পার্টস ঠিক আছে। আর যদি খুব গরম হয় হাত না রাখা যায় তাহলে বুঝতে হবে পার্টস টি নষ্ট এজন্য ওভার হিট হচ্ছে। এগুলো পরিবর্তন করা এডভান্স লেভেলের কাজ। আপনি যদি সার্ভিসিং এ দক্ষ না হন তাহলে এগুতে হাত দেওয়ার দরকার নেই। তখন কাছের কোন সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যেতে পারেন।

 

ল্যাপটপ এর সফটওয়্যার জনিত সমস্যা:

যেসকল সফটওয়্যার জনিত কারণে ল্যাপটপ হ্যাং করে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভাইরাস জনিত কারণ এবং উইন্ডোজ ফাইল কারাপ্ট সমস্যা জনিত কারণ। আপনার ল্যাপটপে যদি কোন ভাইরাস ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে ল্যাপটপ হ্যাং করবে আবার রিস্টার্ট জনিত সমস্যা হতে পারে। সফটওয়্যার জনিত সমস্যা আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার ল্যাপটপে ভাইরাস জনিত কারণে হ্যাং করবে না উইন্ডোজ সমস্যা হচ্ছে তাহলে একটা প্রিমিয়াম এন্ট্রি-ভাইরাস সেটআপ করে ল্যাপটপ ফুল স্ক্যান করুন। অথবা নতুন ভাবে উইন্ডোজ দিয়ে ফরম্যাট করুন বা ফাইল ওপেন না করে ফুল ল্যাপটপ স্ক্যান করুন।

 

ল্যাপটপ স্লো বা ভারী হলে করণীয়:

সাধারণত যেসব কারণে ল্যাপটপ ভারি হয় সে বিষয় গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো এবং ভারী হওয়া হ্যাং ল্যাপটপ কিভাবে ফাস্ট করতে পারেন সে ব্যাপারে বলা হলো।

ভাইরাসের কারণে ভারী হলে এন্টিভাইরাস দিয়ে ভালোভাবে ল্যাপটপ স্ক্যান করে ভাইরাস রিমুভ করতে হবে।

উইন্ডোজ অনেক পুরনো হলে নতুন ভাবে উইন্ডোজ দিতে হবে।

কম্পিউটারের কনফিগারেশন এর বাইরে ভারী সফ্ওয়্যার ব্যবহার করা যাবেনা।

সফটওয়্যার বা উইন্ডোজ করাপ্টেড হলে সাথে সাথে পরিবর্তন বা রিপেয়ার করতে হবে।

ভারী সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য আপনার কম্পিউটার উপযোগী কি-না জেনে তারপর ইন্সটল করতে হবে। যেমন-গ্রাফিক্স জনিত সফটওয়্যার।

সি ড্রাইভের মধ্যে সব সময় ৪০%+ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে।

ল্যাপটপের ডেস্কটপে বড় ভিডিও/সফটওয়্যার ফাইল রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে।

নতুন অবস্থায় ল্যাপটপ হ্যাং হলে করণীয়:

ল্যাপটপ নতুন অবস্থায় হ্যাং হলে অর্থাৎ নতুন ল্যাপটপ কিনে নিয়ে আসার কয়েক মাস পর ব্যবহারের পর যদি হ্যাং করে তাহলে বুঝতে হবে ল্যাপটপের র‍্যাম এর কোন সমস্যা হয়েছে। এমতাবস্থায় ল্যাপটপ এর র‍্যাম খুলে র‌্যামে পয়েন্টার গুলো সহ র‌্যাম ভালোভাবে থিনার দিয়ে কার্বন গুলো পরিষ্কার করে আবার লাগাতে হবে যদি সম্ভব হয় তাহলে নতুন র‌্যাম পরিবর্তন করে দেখতে হবে। তারপর না হলে নতুন ভাবে উইন্ডোজ দিতে হবে কারণ অনেক সময় ভাইরাস ঢুকে উইন্ডোজ ফাইল ক্রাপ্ট হয়ে যায় ফলে সিস্টেম ঠিকমত কাজ করতে পারে না। এর পরেও না হলে ল্যাপটপের ওয়ারেন্টি নিয়ে সার্ভিসিং দিতে ভূলবেন না কারণ ওয়ারেন্টি কালীন সার্ভিস একদম ফ্রি। সৌজ‌ন্যে: ই মেকার বি‌ডি।

 

(সাইবার বার্তা.কম/এন‌টি/এমএ/৫ এপ্রিল ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ