শনিবার, অক্টোবর ১২ ২০২৪ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল | ৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ধামাকার অস্বাভাবিক মূল্যছাড়: ভেতরের খবর জানতেন না মার্চেন্টরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,  সাইবারবার্তা: অস্বাভাবিক মূল্য ছাড় দিয়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রি করে বাজার দখল করার যে নীতি নিয়েছিল ধামাকা শপিং, সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানতেন না প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা। তারা বলছেন, মূল প্রতিষ্ঠান ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড মার্চেন্টদের জানিয়েছিল, গ্রাহকদের ছাড় দেয়ার বিষয়টি তারা বুঝবে।

 

মার্চেন্টদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট দামে পণ্য নেবে প্রতিষ্ঠানটি। একইসঙ্গে গ্রাহকদের যে পরিমান ছাড় দেবে সেই পরিমাণ টাকা মূল প্রতিষ্ঠান এক বছর পর বিনিয়োগ করবে। এছাড়া এ বিষয়ে মার্চেন্টদের ভাবনার কোনো বিষয় নেই। তাই এ সম্পর্কিত ব্যবসার নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না মার্চেন্টরা।

 

শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ধামাকা শপিংয়ের গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ী বা মার্চেন্টরা। ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড সেলার অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে ৬৫০টি মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠান নিজেদের বিনিয়োগকৃত প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফেরত পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।  তারা জানান, এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের এক লক্ষাধিক অর্ডার পেনডিং আছে, যেগুলোর টাকার পরিমান প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

 

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন  সেলার অ্যাসোসিয়েশনের গণমাধ্যম সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমন। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে মার্চেন্টদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে ধামাকা শপিংয়ের চেয়ারম্যান ডা. এম আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিমউদ্দিন চিশতী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

 

কথিত ই-কমার্স ব্যবসার নামে অস্বাভাবিক স্বল্পমূল্যে পণ্য দেওয়ার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ১১৭ কোটি টাকা পাচার করেছে “ধামাকা শপিং”। এ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।  এজন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতি, তার স্ত্রী, তিন সন্তান ও ধামাকা শপিংয়ের এক পরিচালক এবং চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর মামলা করেছে সিআইডি।

 

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলোর জমা ও উত্তোলন স্লিপ এবং দেশের বাইরে সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে পাচার করা অর্থ এবং সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

 

ধামাকা শপিং প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন লোভনীয় অফারে পণ্য দেওয়ার নামে ৮০৩ দশমিক ৫১ কোটি টাকা নেয়। শুরুতে কিছু গ্রাহককে পণ্য দিলেও পরবর্তীতে আর কাউকেই পণ্য না দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে এ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও ৬৫০টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পণ্য নিলেও এখন পর্যন্ত তাদেরকে কোনো টাকা পরিশোধ করেনি ধামাকা শপিং।

 

দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ধামাকা শপিংয়ের এমডি জসিম উদ্দিন চিশতি, তার স্ত্রী ও সন্তান গত জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে দেশে আছেন কেবল পরিচালক (অপারেশন) সাফওয়ান আহমেদ। এই পাচারের একটি অংশ চিশতি পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছে বলেও উঠে এসেছে সিআইডির তদন্তে।

 

অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্সের নামে বিভিন্ন পণ্যের লোভনীয় অফার ও ভার্চুয়াল সিগনেচার কার্ড বিক্রি করে অর্থ পাচারের অভিযোগে ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুন থেকে অনুসন্ধানে নামে সিআইডি।

 

(সাইবারবার্তা.কম/কম/১৮সেপ্টেম্বর২০২১/১২৩৯)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ