সাইবারবার্তা ডেস্ক: সরকারি গোপন নথি চুরির অভিযোগে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন একজন উপসচিব।
সোমবার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী এই অভিযোগ দায়ের করেন বলে ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান।
সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলেছেন। যেসব নথির ছবি তোলার নিয়ম নেই। আবার কিছু কাগজপত্র তিনি তার ব্যাগে নিচ্ছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সহকারীর কক্ষে। এটা কারো স্বার্থ না, এটা রাষ্ট্রের স্বার্থ। এমনিতেই ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক রাজনীতি হচ্ছে বিশ্বে। কিছু বিষয় যদি আগে পাবলিশ হয়ে যায় তাহলে অন্য দেশ আমাদের বিশ্বাস করবে না। কিছু দিন আগে রাশিয়ার একটি নিউজ করেছিলেন। যা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে।’
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একইসঙ্গে তারা একটি লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিয়েছেন। সেখানে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগটি গ্রহণ করেছি।’
লিখিত অভিযোগে যা বলা হয়েছে
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, “অদ্য ১৭.০৫.২০২১ তারিখ সোমবার বিকেল ২.৫৫ ঘটিকায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের একান্ত সচিব এর দপ্তরে রোজিনা ইসলাম, পিতা মৃত মুসলিম মিয়া, মাতা মোছা. তাসলিমা বেগম, স্বামী মো. সফিকুল ইসলাম, বাসা ৯৭২, ৫ম তলা, থানা শাহজাহানপুর, ঢাকা; নামীয় একজন নারী প্রবেশ করে। এ সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিব মহোদয়ের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। উক্ত নারী দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকানো এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। এ সময় সচিব মহোদয়ের দপ্তরে দায়িত্বরত সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান (কং নং ৩৩২৬১, সচিবালয়, ডিএমপি, ঢাকা) দেখতে পান এবং তাকে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কি করছেন মর্মে জানতে চান। এ সময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় প্রদান করেন।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা বেগম, উপসচিব জাকিয়া পারভীন, সিনিয়র সহকারী সচিব শারমীন সুলতানা, সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞা, সিনিয়র সহকারী সচিব মোসাদ্দেক মেহদী ইমাম, অফিস সহায়ক মো. মাহফুজুল ইসলাম, সোহরাব হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফগণ ঘটনাস্থলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেসা ব্যাগ তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজগপত্র এবং ডকুমেন্টসের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
এতে প্রতীয়মান হয় যে, ডকুমেন্টগুলো তিনি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে শাহবাগ থানার মহিলা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাকে জিম্মায় নেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ভ্যাকসিন ক্রয়/সংগ্রহ সংক্রান্ত নেগোসিয়েশন চলমান রয়েছে এবং খসড়া সমঝোতা স্মারক ও নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সমঝোতা স্মারক নিয়ে পক্ষদ্বয়ের মাঝে প্রতিনিয়িত পত্র এবং ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে।”
এর আগে সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহবাগ থানা পুলিশের একটি টিম সচিবালয় থেকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যায়।
এদিকে রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর বিকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সহকর্মীরা তার পক্ষ অবলম্বন করে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেন। রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নেয়ার খবরে সেখানে ছুটে যান অনেক সহকর্মী। তারা থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
রাত ১০টার দিকে শাহবাগ থানার ওসির কক্ষ থেকে বেরিয়ে রোজিনার বোন সাবিনা পারভীন সুমী বলেন, ‘ও অসুস্থ। ওর শরীর ভালো না। গায়ে জ্বর। সকালে টিকা নিয়েছে। ওর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’ সৌজিন্যে: ঢাকা টাইমস
(সাইবারবার্তা.কম/জেডআই/১৮ মে ২০২১)