সাইবারবার্তা ডেস্ক: অদেখাকে দেখা আর অচেনাকে চেনা কিংবা অবসর যাপনে সুযোগ পেলেই ছুটে চলে ভ্রমণপিপাসু মন। সমসাময়িক সময়ে ভ্রমণপ্রিয় সমমনাদের বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আকারে যোগাযোগের অন্যতম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। হরেক নামে শত-শত ট্রাভেলার গ্রুপে প্রায় সারাক্ষণই চলে ভ্রমণ বিষয়ক আলোচনা, থাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। ইদানিং এসব গ্রুপভিত্তিক বিভিন্ন ইভেন্ট খুলে পরিচিত-অপরিচিত মিলে ভ্রমণে যেতে দেখা যায় প্রায়ই। আর এমনই একটি ফেসবুক ট্রাভেলার গ্রুপকেন্দ্রীক অভিনব প্রতারণার ফাঁদের তথ্য পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক ট্রাভেলার গ্রুপের মাধ্যমে ভ্রমণে গিয়ে পরিচয়। একপর্যায়ে বন্ধুত্ব থেকে ব্যবসায়ের প্রস্তাব। সুযোগ বুঝে মোটা অঙ্কের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারকরা। ডিবি পুলিশ বলছে, এ প্রতারকরা বিভিন্ন মানুষের কাছে নানা পন্থায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ মে) রাজধানীর কল্যাণপুর, ঢাকার আশুলিয়া ও চাঁপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- জাকারিয়া (২৪), জাহিদ ইবনে জাহান (৩০) ও সোহরাব হোসেন টিটু (৩৮)। এ সময় তাদের ব্যবহৃত নামে-বেনামে ১৮টি ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ জানায়, এক ভুক্তভোগী প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা খুইয়েছেন এমন অভিযোগে গত ২৩ মে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় অভিনব এ প্রতারণার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী মনপুরা ভ্রমণে গিয়ে প্রতারক জাকারিয়ার সঙ্গে পরিচয়ের একপর্যায়ে ভালো সম্পর্ক হয়। এরপর তারা একসঙ্গে চাঁপুর-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে যান। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে একসময় ভুক্তভোগী ওই যুবককে আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বিপনন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজান, ইবে’র সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী রাজি হলে ডোমেইন কেনা, ওয়েবসাইট বানানোর নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন জাকারিয়া।
যত বেশি ডোমেইন তত বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে একে একে ৪২টি ডোমেইনের টাকা নেওয়া হয়। ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে, উদ্ধার করতে কিংবা সিকিউরিটির কথা বলে নেওয়াও হয়েছে টাকা। আমেরিকা থেকে উন্নত ওয়েবসাইট বানানোর কথা বলেও টাকা আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে নিজেই বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কখনো হ্যাকার সেজে, কখনো আমেরিকান প্রবাসী কিংবা আইটি এক্সপার্ট সেজে কথা বলেছেন জাকারিয়া।
বিনিয়োগের মুনাফা দেওয়ার সময় এলেই জাকারিয়াসহ তার সঙ্গীরা শুরু করতেন টালবাহানা। এমনকি ভুক্তভোগীর মেয়ের ছবি যুক্ত করে ওয়েবসাইটে পর্নো ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে নানা পন্থায় ভুক্তভোগী যুবকের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
জোবায়ের নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ গ্রুপের মাধ্যমে ভ্রমণে গিয়ে জাকারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই ওই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ট্যুরগুলো পরিচালনা করতেন। পরিচয় থেকে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একপর্যায়ে অ্যামাজানের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েট ব্যবসার প্রস্তাব দেন তিনি। এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো লাভ হবে এবং এজন্য একটা ওয়েবসাইট বানাতে হবে বলেও জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা এ যুবক বলেন, ওই প্রতারকের কথামতো প্রথমে এক লাখ এবং পরে আরো দুই লাখ টাকা দেই। আমার টিউশনির জমানো টাকা এবং বাবার কাছ থেকে কিছু নিয়ে আমি তাকে দেই। টাকা দেওয়ার পর কিসের ওয়েবসাইট আর কিসের লাভ বিভিন্ন অযুহাতে আমাকে ঘোরাতে থাকেন জাকারিয়া।
রাসেল নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, ফেসবুকের ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ গ্রুপটি সাধারণত নৌযান কেন্দ্রিক ভ্রমণগুলো পরিচালনা করে। এ গ্রুপের আয়োজনে একটি ট্যুরে যাওয়ার সুবাদে অ্যাডমিনের সঙ্গে পরিচয়। একপর্যায়ে অ্যাডমিন তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মায়ের চিকিৎসার কথা বলে কিছু টাকা ধার চান। আমি তাকে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে ১৬ হাজার টাকা পাঠাই। পরে টাকা চাইতে গেলেই আমার সঙ্গে বাজে আচরণসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো শুরু করেন তিনি।
এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নামী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। শুধুমাত্র একজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারের খবরে অনেকেই ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ে ওয়েবসাইট বানানোর নামে প্রথমে টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি। তারপর নির্দিষ্ট সময় পর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য কাউকে মুনাফার কিছু টাকাও ফেরত দেওয়া হতো। দেখা গেছে সেই টাকা আবার অন্য কারো কাছ থেকেই প্রতারণার মাধ্যমে এনেছে। এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। গ্রেফতারদের তিনজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ।সৌজন্যে:বাংলানিউজ২৪
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২৬ মে ২০২১)