এম শরীফ ভূঞা, সাইবারবার্তা: ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান। চলতি বোরো মৌসুমে ২৮০ শতক জমির ৮০ মন ধান ঘরে তুলেছেন তিনি। সেচব্যবস্থা ভালো থাকায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো ধানের দাম নিয়ে। স্থানীয় ব্যাপারিদের কাছে ধানের ভালো দাম না পাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তার কপালে।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষক আব্দুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয় স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মারফের। সমস্যার কথা খুলে বললে কৃষি কর্মকর্তা জানালেন চিন্তার কোনো কারণ নেই, ন্যায্যমূল্যে সরকারিভাবেই কেনা হবে ধান। সেজন্য তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামক মোবাইল অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, তারপর নির্ধারিত সময়ে সরকারি গুদামে কেনা হবে ধান। কৃষি কর্মকর্তার কথা শুনে চিন্তামুক্ত হলেন এই কৃষক।
শুধু এই একজন কৃষক নন, কৃষিখাতে তথ্য-প্রযুক্তি সেবা বৃদ্ধির ফলে উপকৃত হচ্ছেন এমন হাজারো কৃষক। এখন কৃষি কাজ করতে হলে অনেক বছরের অভিজ্ঞতার দরকার পড়ে না। বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক অ্যাপ, ওয়েভ সাইট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করেই কৃষিকাজ করে সফল হচ্ছেন অনেকে।
তেমনই একজন জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ফাজিলের ঘাট এলাকার মো. জাকির হোসেন। প্রবাসে একটি আন্তর্জাতিক হোটেলের ব্যবস্থাপনায় চাকরি করতেন। বিদেশের মাটিতে আয়-রোজগারও বেশ ভালো ছিল। নানা প্রতিকূলতায় বয়স বেড়ে যাওয়ায় পরিবারের তাগিদে শেষ পর্যন্ত আর সেখানে থাকা হয়নি তার। ফিরে এলেন দেশে। হতাশ হয়ে এদিক-সেদিক ঘুরছিলেন। পরিচিতদের পরামর্শে শুরু করেন কৃষি ও মৎস্য খামার। কারোর কাছ থেকে তাকে কৃষি কাজ শিখতে হয়নি- কৃষিভিত্তিক অ্যাপ ‘কৃষকের জানালা’ ও ‘আজকের কৃষি’ অ্যাপ এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখে নিজে নিজেই পরিণত হয়েছেন পুরোপুরি কৃষকে।
এখন প্রতি মাসে পরিবার চলার মতো আয় হয়। তার কৃষি খামারে গড়ে প্রতিদিন ৫/৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রবাস ফেরত জাকির হোসেন বলেন, তাদের পারিবারিক ৩০ ডিসিমেল জমিতে তিনি চাষাবাদ করছেন। বোরো, আউশ আমন ধানসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদের পাশাপাশি মাছ ও মুরগির খামারও আছে তার।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মারুফ জানান, কৃষিতে তথ্য-প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার যেসব কৃষক করছেন তারা কম শ্রমে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। কৃষিতে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকার ইতিমধ্যে কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।
ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নে আলোকদিয়া গ্রামে গেল বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন কৃষক রবিউল হক। জমি তৈরি করার পর চারা লাগাতে গিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। লকডাউনের কারণে মিলছিল না শ্রমিক। সমাধান দিলো স্থানীয় সদর উপজেলা কৃষি অফিস। তার ধান রোপণ করা হয় আধুনিক মেশিন রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে। কৃষক রবিউল বলেন, এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করতে তিন থেকে চারজন শ্রমিক লাগতো। এতে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচও হতো। আধুনিক এই যন্ত্রের সাহায্যে মাত্র এক ঘণ্টায় এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায়। খরচও লেগেছে অনেক কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তাহের বলেন, কৃষকদের আধুনিক কৃষক হিসেবে গড়ে তুলতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি বিভাগ কৃষকদের সুবিধার্থে ভর্তুকির মাধ্যমে এই যন্ত্রসহ অন্যান্য আধুনিক যন্ত্র সরবরাহ করছে। এতে করে কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফেনীর উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, এককালে হালের বলদ, লাঙল-জোয়ালই ছিল কৃষকের মূল ভরসা। সারাদিন কায়িক শ্রমের বিনিময়ে মাঠে ফলতো স্বপ্নের ফসল। আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেই দিন বদলে গেছে। নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারে দেশের কৃষিখাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এসব যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে কৃষকের কমেছে শ্রম ও খরচ, অপরদিকে কয়েকগুণ বেড়েছে উৎপাদন। সৌজন্যে: ঢাকাটাইমস
(সাইবারবার্তা.কম/এমএ/২৮মে২০২১)