বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫ ২০২৫ | ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ৫ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

আইটি খাতে নারী উদ্যোক্তা বাড়লেও শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান ১ শতাংশের কম

সাইবারবার্তা ডেস্ক:  দেশে করোনাকালে ই-কর্মাসে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ওমেনস অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)-এর তথ্যমতে, তাদের ১১ লাখ ২১ হাজার সদস্যের মধ্যে ৪ লাখই নারী উদ্যোক্তা। এর একটা বড় অংশ লকডাউনের সময় ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ভর করে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তবে দেশে প্রায় তিন দশক আগে তথ্যপ্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলেও আইটি পণ্য উত্পাদন ও বাজারজাতকরণে শীর্ষপর্যায়ে নারীর অবস্থান ১ শতাংশের নিচে। সরকারি ও বেসরকারি গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।

সরকারি হিসাবমতে, কর্মক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে মাত্র ১২ শতাংশ নারী কাজ করছেন। তার মধ্যে অধিকাংশই প্রাথমিক বা মধ্যম পর্যায়ের কাজ করেন, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীর অবস্থান শতকরা ১ শতাংশের চেয়েও কম। ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্স-বিপিও’ শিল্পে দেশে ৪০ শতাংশ নারী কাজ করছেন বলে জানা যায়। বিশ্বব্যাপী বিপিও শিল্পের ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজারে বাংলাদেশের দখলে মাত্র ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ‘কল সেন্টার ও আউটসোর্সিং’-এর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশের ১৭০টি শীর্ষ আইটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টির বেশি হবে না, যেখানে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে বা নেতৃত্বে রয়েছেন।

বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)-এর গবেষণামতে, পড়াশোনা করে মাত্র ১ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে প্রোগ্রামিং পেশায় আগ্রহ দেখান। ইন্টারনেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার অব বাংলাদেশ-আইএসপিএবির প্রেসিডেন্ট আনিসুল হাকিম ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমাদের সেক্টরে ৮ শতাংশ নারী কাজ করছেন। সিংহভাগই ফোনে ইন্টারনেট সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান দেন। প্রধান নির্বাহী বা ম্যানেজার পর্যায়ে কোনো নারী নেই।’

দেশে ১৯৮৬ সালে কম্পিউটার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটে। প্রথম ব্যাচে ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন জন নারী ছিলেন। বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বর্তমান অধ্যাপক মাহবুবা নাজনীন ইত্তেফাককে বলেন, তাদের সময় ১০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী ছিল। আর বর্তমানে কোনো কোনো সময় ১৫ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে কম হয়। তবে কম্পিউটর-নির্ভর পেশা বলে তাদের শিক্ষার্থীরা ১০০ শতাংশই কাজ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ বিষয়ে ১৯৯২ সালে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৪ সালে স্নাতক সম্মান চালু হয়। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. লাফিফা জামাল বলেন, বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তবে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করে অনেক নারী অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ধরাবাঁধা সময়ের বাইরে কাজ করা, পরিবারের সহযোগিতা না পাওয়া প্রভৃতি কারণে নারীরা এ পেশায় আসতে বা টিকতে পারছেন না। তবে কোনো কোনো নারী চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করছেন।

বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লি­উআইটি) প্রযুক্তি খাতে নারীর পেশাগত অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করছে। এই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানা খান জানান, এই সংস্থার প্রায় ৩০০ সদস্য আছেন। তারা উদ্যোক্তা, পেশাগত ও করপোরেট—এই তিন ক্ষেত্রে নারীদের নিয়ে কাজ করেন।

এসবিকে টেক ভেনচার্সের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন সোনিয়া বশির কবির দেশ-বিদেশে শীর্ষপর্যায়ে কাজ করা অন্যতম আইটি উদ্যোক্তা। সোনিয়া বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা না থাকায় ১০ ঘণ্টার কাজ করতে আমাদের ৩০ ঘণ্টা লাগছে। নারী ঘরসংসার ফেলে এত সময় দিতে পারছেন না। অন্য দেশে ১০ ঘণ্টা কাজ করে ১০ ডলার পান। একই কাজ ৩০ ঘণ্টায় করে আমরা ৮-১০ ডলার পাই। ইকো সিস্টেম উন্নত করার ওপর জোর দেওয়া, দক্ষতা উন্নয়ন আর রোল মডেল তৈরি করা গেলেই নারীর জন্য প্রযুক্তির ভয়কে জয় করা যাবে বলে মনে করেন এই আইটি বিশেষজ্ঞ। সৌজন্যেঃইত্তেফাক

(সাইবারবার্তা.কম/আরআই/জেডআই/২৪মার্চ,২০২১)

 

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ