মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২১ ২০২৫ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ২০শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

অনলাইন সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ

:: সাইবারবার্তা ডেস্ক :: অনলাইন সহিংসতার বিভিন্ন রূপ, এর প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারাভিযান (ক্যাম্পেইন), কর্মশালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীতে এক কর্মশালায় বক্তারা এসব বলেন। ‘কম্বেটিং টেকনোলজি-ফ্যাসিলিটেড জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করে গবেষণাভিত্তিক অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ভয়েস ফর ইন্টারেক্টিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস)। সভাপতিত্ব করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ মাহমুদ স্বপন। 

‘প্রমোটিং উইমেনস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড রাইটস’ (পাওয়ার) প্রকল্পের অধীনে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।  

সাইবার স্পেসে নারীদের হয়রানির সমাধানকল্পে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন কার্যক্রম শুরু করে ২০২০ সালে। গত সাড়ে তিন বছরে (২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত) তাদের কাছে সাইবার অপরাধের শিকার ৬০ হাজার ৮০৮ জন নারী প্রতিকার চেয়েছেন। সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগী এসব নারীর ৪১ ভাগই ডক্সিংয়ের শিকার হয়েছেন।

এছাড়া ১৮ ভাগ ফেইসবুক আইডি হ্যাক, ১৭ ভাগ ব্ল্যাকমেইলিং, ৯ ভাগ ইমপার্সোনেশন, ৮ ভাগ সাইবার বুলিংজনিত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না কী করবেন বা কোথায় গেলে প্রতিকার পাবেন। তারা প্রাথমিক পর্যায়ে অভিভাবক বা পরিচিতজনকেও জানাতে চান না।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহার নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টির পাশাপাশি নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটিয়েছে। কিন্তু এর একটি অন্ধকার দিক হলো ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাড়ছে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা। 

সভায় বক্তারা বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানি মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার হলো জনসচেতনতা। অনলাইন সহিংসতার বিভিন্ন ধরন, এর প্রভাব এবং সম্পৃক্ত আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযান, কর্মশালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি।

 

তারা ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বরকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং অনলাইন যৌন সহিংসতার ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

 

সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (সাইবার ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশন), মো. মোহাইমিনুল ইসলাম, বলেন, ‘তদন্ত প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো ধাপ আছে যেমন- ডিভাইসটি জব্দ করা, ফরেনসিকে পাঠানো, সংশ্লিষ্ট মাধ্যম যেমন ফেইসবুকের সাথে যোগাযোগ করা। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কাছে যে সব মামলা আসে তার সংখ্যা অতি নগণ্য, অসংখ্য ঘটনা নথিভুক্ত হয় না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ নাভিলা কাশফি বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারীরা মামলা করেন ঠিকই কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার কারণে এক পর্যায়ে আপস করতে বা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন। সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের মামলা পরিচালনায় আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায় না।’

দৈনিক আমার দেশের সহ-সম্পাদক সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতাবিষয়ক যে প্রতিবেদনগুলো হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে জেন্ডার ও মানবাধিকারের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি।’

আহমেদ মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে অনলাইনে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নারীর জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা জরুরি। এক্ষেত্রে কীভাবে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করতে হয়, অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা যায় এবং অনলাইনে হুমকি চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা যায় তার জানতে বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও নারীদের জন্য এমন কিছু পরিসর তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে নারী তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারবে, এতে তাদের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় হবে ও ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।’ -বাসস

(সাইবারবার্তা.কম/২১জানুয়ারি২০২৫/১১২৪)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ