:: সাইবারবার্তা ডেস্ক :: বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চম প্রজন্মের বা ৫জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে চীন বেশ অগ্রগতি করেছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), স্বচালিত গাড়ি ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির প্রসারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হয়েছে।
আগের ৪জি প্রযুক্তির তুলনায় বহুগুণ দ্রুত গতি সরবরাহ করে থাকে ৫জি নেটওয়ার্ক। একসঙ্গে লাখ লাখ ডিভাইস সংযোগে সক্ষম প্রযুক্তিটি। কম লেটেন্সি ও উচ্চ ব্যান্ডউইডথের মাধ্যমে বড় পরিসরে তথ্য দ্রুততার সঙ্গে প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয়, যা স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চীন সরকার ৫জি প্রযুক্তির সম্প্রসারণে অপারেটর ও নির্মাতাদের জন্য বড় আকারের প্রণোদনা দিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ৪০ লাখের বেশি ৫জি বেজ স্টেশন চালু রয়েছে। তাছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ ৪৫ লাখ বেজ স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। হুয়াওয়ে ও জেডটিইর মতো চীনা টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে ও বিদেশে সাশ্রয়ী ৫জি অবকাঠামো স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২০২৪ সালের শেষ নাগাদ চীনের ৫জি গ্রাহক সংখ্যা ১০০ কোটি অতিক্রম করেছে। দেশটিতে ৫জি প্রযুক্তিতে প্রবেশমাত্রা ৭১ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫জি প্রযুক্তির অবদান ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ৫জি নেটওয়ার্ক উন্নয়নে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করেছে। দেশটিতে মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ৫জি অবকাঠামো নির্মাণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি) হুয়াওয়ে ও জেডটিইর মতো বেশ কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য ও কানাডাও চীনা টেলিকম যন্ত্রপাতির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও হুয়াওয়ে বিশ্বের অনেক বাজারে এখনো শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে, বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু অঞ্চলে।
চীনা প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল অপারেটররা এখন সুইডেনের এরিকসন, ফিনল্যান্ডের নকিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব বাজার চীনা প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক, সেখানে এসব কোম্পানির চাহিদা বাড়ছে।
যদিও বেজ স্টেশন নির্মাণে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম, তবে ৫জি ইকোসিস্টেমে তাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, চিপ নির্মাতা কোয়ালকম স্মার্টফোনের জন্য ৫জি মডেম সরবরাহ করে। ওরাকল ও সিসকো নেটওয়ার্ক অবকাঠামো সফটওয়্যার সরবরাহ করে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ষষ্ঠ প্রজন্মের বা ৬জি প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীন এরই মধ্যে বিশ্বের প্রথম ৬জি টেস্ট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে ৬জি গবেষণা ও উন্নয়নে বড় পরিসরে বিনিয়োগ করছে। – আনাদোলু এজেন্সি।
(সাইবারবার্তা.কম/৩০এপ্রিল২০২৫/১৪০২)