বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১ ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস: বিটিআরসিতে দিনব্যাপী কর্মশালা, বিশিষ্টজনদের আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার, সাইবারবার্তা: সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর’২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের উদ্যোগে এবং সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দিনব্যাপী যুব কর্মশালা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে কমিশনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে বিটিআরসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অ‌তি‌থি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
আলোচনা সভার স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বহুল আলোচিত এবং বিশ্বের প্রতিটি দেশই সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। তরুণ সমাজ যাতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হয়, সে বিষয়ে অধিক প্রচার প্রচারণা ও কর্মশালা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিশ্বে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু সাইবার আক্রমনের ঘটনায় বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বিটিআরসি’র সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে: জেনা: মো: নাসিম পারভেজ বলেন, ২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন হয়রানির হার ছিল ৭.৬৯ ভাগ, আপত্তিকর ছবি ৫.৮৫ ভাগ, সাইবার বুলিং ৫০.১৬ ভাগ এবং ২০২২ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যৌন হয়রানির হার ছিল ৯.৩৪ ভাগ, আপত্তিকর মেসেজ ৬.৯৩ভাগ এবং সাইবার বুলিংয়ের হার ৫০.২৭ ভাগ। ২০২১ সালে ওয়েবসাইট/ডোমেইন থেকে লিংক অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে ১২৩৫টি এর মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে ১২৩৫টি, অপসারণের হার ১০০ ভাগ। ২০২২সালে ওয়েবসাইট/ডোমেইন থেকে লিংক অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে ৬৪৫টি এর মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে ৬৪৫টি, অপসারণের হার ১০০ ভাগ।
উপস্থাপনায় তিনি ২০২১ ও ২০২২ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমুহে অপসারিত লিংকের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ২০২১ সালে ফেসবুক থেকে ৮ হাজার ৯১৬ টি এবং ২০২২ সালে ৮ হাজার ২২৮ টি লিংক অপসারিত হয়েছে। ২০২১ সালে ইউটিউব থেকে ১ হাজার ১৩ টি এবং ২০২২ সালে অপসারিত হয়েছে ২২২ টি লিংক। ২০২২ সালে টিকটক থেকে অপসারিত হয়েছে ১হাজার ১৫৯ টি লিংক, ২০২২ সালে বিগো, লাইিক ও ইমো থেকে অপসারিত হয়েছে ৬৭ টি এবং টুইটার থেকে অপসারিত হয়েছে ২৯ টি লিংক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন এবং জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তি সচেতন না থাকলে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখা খুব কঠিন। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি সরকার কর্তৃক জারিকৃত ২৯টি ক্রিটিক্যাল অবকাঠামো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য প্রাপ্তিতে কোনো বাধা নেই। শিশু-কিশোরদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের প্যারেন্টাল গাইডলাইন অনুসরণের পরামর্শ দেন তিনি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ সাইবার আক্রমণের সম্মুখিন হলে সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে ঘটনাটি গোপন রাখে, ফলে সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধানে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা যায়না। ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সিকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাইবার সচেতনা ও সুরক্ষার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’র পরিচালক (অপারেশন) জনাব তারেক এম. বরকতউল্লাহ বলেন, আগামীতে সক্ষম ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিজস্ব প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নের জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিদেশি প্রযুক্তির অনুকরণ কমিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো সাইবার সিকিউরিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার বেশি ব্যবহার হওয়ায় সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইবার সুরক্ষায় সাইবার ইনসিডেন্ট রিসপন্স টিমের (সিআইআরটি) পরিধি প্রতিটি সেক্টরে বাড়ানোর কাজ চলছে।
কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ফিশিং, হ্যাকিং এবং সাইবার পর্নোগ্রাফি শিকার বেশি হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত উপ—পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত ঘটনায় অপরাধের হার বেশি হলেও বর্তমানে তা অনেকাংশ কমে গেছে। তিনি আরো বলেন, মোবাইল স্ফুফিং তথা মোবাইল নাম্বার ক্লোনের মাধ্যমে সন্দেহজনক কোনো কল আসলে কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলে মোবাইল স্ফুফিং প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। উন্নত দেশের মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স ট্রিটির (এমএলএটি) বাস্তবায়ন করা হলে দেশে বসে বিদেশী অবস্থান করা অপরাধীদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তার সহজ হবে বলেও জানান তিনি।
কম্পিউটার তথা প্রযুক্তি ব্যবহারে শিশু-কিশোরদের বিরত না রেখে বরং তাদের নিরপাদ রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার প্রতি আহবান জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রযুক্তি বিষয়ে তেমন দক্ষ না হওয়ায় সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে টেলিযোগাযোগ সেবা ও সাইবার নিরপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাইবার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে সচেতনতা ক্যাম্পেইন করলে তা ফলপ্রসু হবে এবং এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে । সাইবার সিকিউরিটি, সাইবার অ্যাওয়ারনেস ও সাইবার সেফটি-এই তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নুরুল হাফিজ এবং যুব কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বি‌ভিন্ন দে‌শে ২০০৪ সাল থে‌কে সাইবার নিরাপত্তা স‌চেতনতা মাস অ‌ক্টোবরের কর্মসূ‌চি শুরু হয়। বাংলাদে‌শে ২০১৬ সা‌লে বেসরকা‌রিভা‌বে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ার‌নেস ফাউ‌ন্ডেশন এই কর্মসূ‌চি শুরু ক‌রে।
(সাইবারবার্তা/১৩ অক্টোবর ২০২২/বিজ্ঞপ্তি/কেএম) 

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ