সাইবারবার্তা ডেস্ক:
রাজধানী ঢাকায় বড় বড় ভবন বেড়েছে। ভবনে এসেছে চাকচিক্য। অফিস-আদালতে নানা ডিজিটাল সুবিধা যুক্ত হয়েছে। সরকারি দপ্তরে চালু হয়েছে ডিজিটাল হাজিরা। ঢাকার পরিবহনব্যবস্থার উন্নতিতে ডিজিটাল সুবিধা চালু করতে টাকা ঢেলেছে সরকার। কিন্তু সড়কে যানবাহন পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের সবকিছুই চলছে অ্যানালগ ব্যবস্থায়, সেকেলে পদ্ধতিতে।
পৃথিবীর বেশির ভাগ বড় শহরে এখন পরিবহনে চড়তে হাতে হাতে ভাড়া দেওয়ার প্রচলন উঠে যাচ্ছে। মাস, এমনকি বছরওয়ারি র্যাপিড পাস বা বিশেষ কার্ড কিনছে মানুষ। এর মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশে সাত বছর আগে কার্ডের মাধ্যমে সব ধরনের গণপরিবহনে ভাড়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ব্যবহার দেখা যায় না।
রাজধানী ঢাকায় শ খানেক মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতির ব্যবস্থা আছে। গত দুই দশকে এই সিগন্যাল বাতি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বারবার পরিবর্তনে প্রায় দুই শ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখনো যানবাহন চলে ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায়। ট্রাফিক পোস্টে লাল বাতি জ্বললে গাড়ি চলে, আর সবুজ বাতিতে থেমে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সিগন্যাল বাতিই অকেজো।
ঢাকার ব্যস্ততম মোড়গুলোতে সিগন্যাল বাতি অনুসারে যানবাহন তো চলেই না। উল্টো বাঁশ, রশি, সিমেন্ট-প্লাস্টিকের প্রতিবন্ধক দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। এই ব্যবস্থা কেউ মানছে, কেউ মানছে না। আবার কোনো কোনো চালক ট্রাফিক পুলিশের ইশারা না বুঝতে পেরে পড়ছেন বেকায়দায়।
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যুক্ত হয়েছে লেজার লাইট। দূর থেকে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা গাড়ি লক্ষ্য করে লেজারে সবুজ আলো ফেলছেন। থামার জন্যও সবুজ, চলার জন্যও সবুজ আলো বিভ্রান্তিতে ফেলছে চালকদের। অনেক সময় চালকের চোখে আলো পড়ার পর অস্বস্তিতে পড়ছেন তাঁরা।
হাজার কোটি টাকায় বিআরটিএ ডিজিটাল
প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যকে লক্ষ্য করে টাকা ছুড়ে মারছেন এক বিদেশি, এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই বিদেশি ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে বারবার বলছেন, ‘ইউ ওয়ান্ট মানি, আই গিব ইউ দিস…মানি (তুমি টাকা চাচ্ছ, আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি)।’ এই বলে তিনি টাকা ছুড়ে মারছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের অধীনে থাকা রাওয়া ক্লাবের সামনের রাস্তায় ১৮ জানুয়ারি কেউ এই ভিডিও ধারণ করে। পরে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বিদেশি চীনের নাগরিক। একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন তিনি। যে গাড়িতে তিনি ছিলেন, সেটি তাঁর অফিসের। পুলিশ পরে জানিয়েছে, ওই বিদেশি অফিসে যাচ্ছিলেন। গাড়ি থামিয়ে নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় দেরি হওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এই কাজ করেছেন।
একটি যানবাহনের যত ধরনের নথি থাকা দরকার—গত এক দশকে এর সবকিছুই ডিজিটাল হয়েছে। চালকের লাইসেন্স এখন স্মার্ট কার্ডের। যানবাহনের মালিকানার দলিল (ব্লু-বুক) ডিজিটাল কার্ডে রূপান্তরিত হয়েছে। যানবাহনের নম্বরপ্লেট ডিজিটাল। এর সঙ্গে যানবাহনে যুক্ত হয়েছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ। এর বাইরে যানবাহনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) যাবতীয় কর ও ফি আদায় এবং সংস্থাটির সারা দেশের কার্যক্রম অনলাইনে সমন্বয় করার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। এই অর্থের পুরোটাই নেওয়া হচ্ছে দেশের প্রায় ৪৫ লাখ যানবাহনের মালিক ও চালকদের কাছ থেকে।
২০১২ সালে ডিজিটাল নম্বরপ্লেট ও আরএফআইডি চালুর সময় বলা হয়েছিল, এই যন্ত্র লাগানো কোনো গাড়ি ঢাকার ভেতর ১২টি স্থান দিয়ে অতিক্রম করলে কম্পিউটার সার্ভারে সার্বিক তথ্য দেখাবে। যেমন কর, গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিটের মতো তথ্যগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখতে পাবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে তথ্যভান্ডারে গাড়ির মালিকের নাম, গাড়ির রংসহ বিস্তারিত তথ্য জমা থাকবে। এর মাধ্যমে রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে মুঠোফোনে খুদে বার্তায় (এসএমএস) জানানো হবে হালনাগাদ করার তথ্য। নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসেই গাড়িটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ঢাকার বাইরে ট্রাফিক পুলিশের কাছে থাকা বিশেষ মুঠোফোনের মাধ্যমে এ কাজ করা হবে। এ ব্যবস্থায় খোয়া যাওয়া গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করে সেটা উদ্ধার করাও সম্ভব।
এই ব্যবস্থা চালু থাকলে রাস্তায় কোনো গাড়ি আটকে পরীক্ষা করার দরকারই ছিল না। ওই বিদেশি নাগরিকেরও বিরক্তির উদ্রেক হওয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ডিজিটাল সুবিধার এত সব তালিকা গালভরা গপ্পে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে এর কোনো কার্যকারিতা নেই।
চাঁদাবাজি সহজ করতে হাতে হাতে লেনদেন?
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরোনো। সারা দেশে পরিবহনমালিক, শ্রমিক, স্থানীয় মাস্তান, রাজনীতিকদের নামে বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। শুধু ঢাকাতেই বছরে প্রায় পৌনে চার শ কোটি টাকা চাঁদা উঠে বলে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসেছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং এই খাতের সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহনশ্রমিকেরা নগদ টাকায় ভাড়া কাটেন। সেই টাকা আঙুলের ফাঁকে নিয়ে সারা দিন শহরময় ঘুরে বেড়ান। ফলে তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়াটা সহজ হয়ে গেছে। কার্ডের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা থাকলে নগদ টাকার লেনদেন কমে যেত। এতে চাঁদাবাজিও অনেকটাই কমে যেত।
কার্ডের মাধ্যমে গণপরিবহনে ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগও ছিল। ২০১৪ সালে ঢাকার গণপরিবহনের ভাড়া স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আদায় এবং তা সমন্বয়ের জন্য জাইকার সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ক্লিয়ারিং হাউস। স্মার্ট কার্ড কিংবা র্যাপিড পাস ব্যবহার করে যাত্রীরা এই ব্যবস্থায় ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন বাস-ট্রেনসহ যেকোনো গণপরিবহনে। সেই ভাড়ার অর্থ জমা হবে ক্লিয়ারিং হাউসে। তখন ৬০ হাজার র্যাপিড পাস এবং এ-সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছিল। বিআরটিসির কিছু বাসে এ ব্যবস্থা চালুও হয়েছিল। কিন্তু এখন আর সেই ব্যবস্থার কিছুই দেখা যায় না।
লাল বাতিতে চলে, সবুজে বন্ধ
রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে গতকাল রোববার বেলা দুইটায় দেখা গেল, সড়কের চার মুখে ট্রাফিক লাইট আছে। হলুদ, লাল থেকে সবুজ হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী যানবাহন চলছে না। দেখা গেল ট্রাফিক পোস্টে লাল বাতি থাকা অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জাহাঙ্গীর গেটমুখী যানবাহনগুলোকে চলতে ইশারা দিচ্ছেন। অন্য তিনটি মুখে পুলিশের তিন সদস্য হাত দিয়ে থামিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলার পথ রোধ করে আছেন। অর্থাৎ সিগন্যাল বাতি নয়, পুলিশের হাতের ইশারাতেই চলছে যানবাহন। সেনানিবাস বাদ দিলে পুরো ঢাকার মোটামুটি একই চিত্র।
অথচ গত দুই দশকে মোড়ে মোড়ে ডিজিটাল বাতি লাগানো, অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮৯ কোটি টাকা। এসব ট্রাফিক বাতি ও এর যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ এবং কর্মীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিবছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের খরচ হচ্ছে আরও প্রায় ৮০ লাখ টাকা করে।
ঢাকার সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ডিজিটাল ট্রাফিক বাতি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০১ সালে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট (ডিইটিপি) প্রকল্পের অধীনে ৬৮টি মোড়ে বাতি বসাতে ব্যয় হয় ১৩ কোটি টাকা। আনুষঙ্গিক আরও অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ মিলিয়ে এই কাজে ব্যয় হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। এই সিগন্যাল ব্যবস্থা কেনা, এর নিয়ন্ত্রণকক্ষ ছিল সিটি করপোরেশনের হাতে। কিন্তু বাতি লাগানোর পর টানা এক মাসও তা মেনে যান চলাচল করেনি। একপর্যায়ে অধিকাংশ বাতি অকেজো হয়ে পড়ে।
২০১০-১১ অর্থবছরে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস)’ নামে বিশ্বব্যাংকের আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। মূলত পরিবেশ খাতের প্রকল্প হলেও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এতে যুক্ত হয়। বরাদ্দ করা হয় ১১২ কোটি টাকা। এর আওতায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ৭০টি মোড়ে সোলার প্যানেল এবং সময় গণনার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীর ৩১টি মোড়ে স্থাপন করা হয় ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড। এতে সড়ক ব্যবহার পদ্ধতি, যানবাহন চলাচল, এ-সংক্রান্ত আইন এবং আইন অমান্যের নানা শাস্তির কথা বাংলা ও ইংরেজিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল।
প্রথমে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে কিছু কিছু স্থানে সিগন্যাল বাতি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল রোববার সকালে এই ব্যবস্থা চালুর পর যানজটে ঢাকা শহর প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এরপর পরীক্ষাতেই শেষ হয় এই প্রকল্প।
জাপানের সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। চলবে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। ৫২ কোটি টাকায় জাপান চারটি ব্যস্ত মোড়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে। এগুলো হচ্ছে গুলশান ১, মহাখালী, পল্টন ও ফুলবাড়িয়া। ব্যবস্থাটি হচ্ছে মোড়ে ক্যামেরা লাগানো থাকবে। কতগুলো গাড়ি চলাচল করল, সেই হিসাব সংরক্ষণ করা হবে। সেই অনুযায়ী কোন দিকে গাড়ির চাপ বেশি, সেটি বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য সিগন্যাল বাতির সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু এর মধ্যে পাঁচবার প্রকল্পের সময়সীমা পরিবর্তিত হয়েছে। তিনবার ব্যয় বাড়ানো হয়। এরও কোনো সুফল পায়নি ঢাকাবাসী। এমনকি এটি পুরোপুরি চালুই করা যায়নি।
যানবাহন চলাচল ব্যবস্থায় এমন বিশৃঙ্খলা সড়কে যানজটসহ নানা ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) ঢাকায় যানজটের ক্ষতি নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, যানজটে ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যানজটের কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে পাঁচ কিলোমিটার, যা হাঁটা গতির সমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ গতিতে যানবাহন চলাচলে দুর্ঘটনায় পড়ার কথা নয়। এরপরও ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মূলে সড়কে বিশৃঙ্খলা দায়ী।
পুলিশ, বিআরটিএ এবং এআরআইর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকায় প্রতিবছর গড়ে ৩০০ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। এর বড় অংশই পথচারী।
অবস্থা বদলানোর উপায় কী
পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক পরিবহনব্যবস্থার এই দুরবস্থার কারণ ও এর সমাধান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রাফিক বাতি অনুসারে যানবাহন চলাচল, র্যাপিড পাসের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ এবং যানবাহনের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সেই অনুযায়ী আইন প্রয়োগের বিষয়টি তো নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন ব্যবস্থা ভালোভাবে চলছে।
সামছুল হক বলেন, মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছে। কিন্তু এসব বাতি বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরিচালনা করার মতো লোকবল তৈরি করা হয়নি। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে হাজারো প্রকৌশলগত ত্রুটি আছে। তা না সারিয়ে কেবল বাতি স্থাপন করে সফল হওয়া যাবে না।
বিআরটিএর ডিজিটাল ব্যবস্থা সম্পর্কে এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, যেসব সুবিধা দেওয়া হবে বলে বিআরটিএ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে, তা দিতে না পারা অন্যায়। ঠিকাদার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা দিচ্ছে না অথবা সেই সুবিধা নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন না করেই বিআরটিএ ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করেছে। র্যাপিড পাসের মাধ্যমে গণপরিবহন পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় চালক ও এর সহকারীর হাতে চুক্তিতে বাস চালাতে দেওয়া হয়। ছয় বছর চেষ্টা করে কোনোরকমে একটা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ (অল্প কিছু কোম্পানির অধীনে বাস চলাচল নিয়ে আসা) চালু করা গেছে। পুরো ঢাকায় রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ না হলে র্যাপিড পাস সফল হবে না।
সামছুল হকের মতে, উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া, কেনাকাটা করা এবং ফিতা কেটে তা উদ্বোধন করা সহজ কাজ। কেন উন্নয়ন, কী তার লক্ষ্য, অর্জন কী—এই প্রশ্নটা পরিকল্পনা কমিশন করতে পারত। তাদেরও সে রকম দক্ষ মানুষ নেই।
সৌজন্যে: প্রথম আলো
(সাইবারবার্তা.কম/কেএম/৩১জানুয়ারি২০২২)