বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১ ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের টেলিকম খাতে আবারও গুগলের বিনিয়োগ ১০০ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা:

বছর দুয়েক আগে ভারতে ১০ হাজার কোটি ডলার (প্রায় ৭৫ হাজার কোটি রুপি) বিনিয়োগের কথা জানিয়েছিল গুগল। কোম্পানির ভারতীয় প্রধান নির্বাহী (সিইও) সুন্দর পিচাই ঘোষণা করেছিলেন, আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে ওই পরিমাণ অর্থ ভারতের ডিজিটাল পরিষেবায় বিনিয়োগ করবে তারা। সেই লক্ষ্য পূরণে এবার তারা এয়ারটেলে বিনিয়োগ করল। এর আগে তারা ভারতীর প্রতিদ্বন্দ্বী রিলায়েন্স জিয়োতে বিনিয়োগ করেছিল, যদিও ভারতের বাজারে এ দুটি কোম্পানি পরস্পরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

গুগলের ঘোষণা অনুযায়ী, এয়ারটেলে ৫ বছরে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে গুগল। ৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে তারা ভারতীর ১ দশমিক ২৮ শতাংশ অংশীদারি নেবে তারা। প্রতিটি শেয়ার ৭৩৪ রুপি দিয়ে কিনবে তারা। বাকি ৩০ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার ২৩৫ কোটি রুপি দিয়ে ক্রেতাদের জন্য নানা রকম সস্তার প্রকল্প আনা, পরিষেবা সম্প্রসারণ, ফাইভ–জি (ভারতীয় ডোমেইন তৈরি) চালুর পুঁজি জোগাবে গুগল। এ ছাড়া সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক চুক্তির জন্য ক্লাউড বা পেমেন্ট পরিষেবার মতো আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্র চিহ্নিত হতে পারে।

এর আগে মুকেশ আম্বানির জিয়োয় ৩৩ হাজার ৭৩৭ কোটি রুপি দিয়ে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ অংশীদারি কিনেছে গুগল। তাদের জোট ভারতে সস্তা স্মার্টফোন এনেছে। এখন অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করছে।

দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিতে একই সঙ্গে গুগলের বিনিয়োগ নিয়ে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন উঠেছে। তবে এয়ারটেল প্রধান ভিত্তলের জবাব, তারাও অনেক কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাজ করছে গুগলের মতো। আর ভারতের মতো বড় বাজারে ডিজিটাল বাঁকবদলের জন্য বহুমুখী কৌশলের পথ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিরোধ নেই। কারণ, এয়ারটেল-গুগল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এগোবে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, নেট পরিষেবা হোক বা স্মার্টফোন—ভারতের মতো সম্ভাবনাময় ও বিশাল বাজার গুগলের মতো বহুজাতিকের কাছে সোনার খনি। আর সস্তার স্মার্টফোন বা পরিষেবা প্রকল্প সেখানে হিস্যা বাড়ানোর হাতিয়ার।

পিচাইয়ের বার্তা, ভারতকে গুগলের ডিজিটাল তহবিল জোগানোর প্রকল্পেরই অংশ এই বিনিয়োগ, যাতে আরও বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন, উন্নত সংযোগ ও পরিষেবা পান। ভারতীয় এয়ারটেলের চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তালের দাবি, উদ্ভাবনী পণ্য এনে দেশের ডিজিটাল যাত্রায় অগ্রগতির রূপরেখা তৈরি করতেই এয়ারটেল-গুগলের এ জোট।

রেট্রসপেকটিভ ট্যাক্স আইন বাতিলের প্রভাব
রেট্রসপেকটিভ কর আইনের কারণে ভারতে টেলিকম খাতে দীর্ঘদিন বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ স্থবির ছিল। এ নিয়ে বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছিল। সম্প্রতি ভোডাফোনকে আয়করসংক্রান্ত মিথ্যা মামলা নিয়ে চরম নাজেহাল করার পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছে। আর তেল কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি ভারত সরকারের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য প্যারিসে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের বাড়ি আদালতের হুকুমে দখল নিতে বসেছিল প্রায়। এখানেই শেষ নয়, কেয়ার্ন বিদেশের মাটিতে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী বিমান ক্রোক করার হুমকি দিয়ে বসেছিল।

এরপর মোদি সরকার গত বছর আগস্টে এ আইন বাতিল করে। ইউপিএ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির উদ্যোগে এ আইন প্রণীত হয়েছিল। সে জন্য এটি প্রণব মুখার্জির আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়। ধারণা করা হয়েছিল, এ আইন বাতিলের পর ভারতের টেলিকম খাতে আবার বিনিয়োগ আসবে। গুগলের এ বিনিয়োগ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা হলেও রেট্রসপেকটিভ ট্যাক্স আইন বাতিল হওয়ায় তারা যে স্বস্তি পেয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলাই যায়।

বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবে ভারতের তেমন খ্যাতি নেই। তারপরও ভারতের প্রতি গুগল ও ফেসবুকের আস্থার মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করছেন, তাদের টেলিযোগাযোগ খাতের নীতিমালার সুস্পষ্টতা, বাংলাদেশে যার অভাব খুবই প্রকট।

বিশ্লেষকেরা বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে দূরদৃষ্টির অভাব আছে। তা ছাড়া এ খাতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি সব সময়ই বৈরী মনোভাবাপন্ন—এমন অভিযোগও এন্তার। প্রযুক্তির চলমান ব্যাপক এবং দ্রুত বিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতিমালার প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়ন থমকে আছে বলেই মনে করেন তাঁরা।

ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন
ভারতের স্বাধীনতাপ্রাপ্তির ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে এ বছর পৃথিবীর কক্ষপথে একই সঙ্গে ৭৫টি উপগ্রহ পাঠিয়েছে তারা। ভারতের ইন্টারনেট–ব্যবস্থা আরও দ্রুতগতির ও দক্ষ করে তুলতে এ উদ্যোগ নিয়েছে তারা। বিশাল দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা পৌঁছে দিতে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরোর প্রেরিত এ উপগ্রহ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকেরা।

এ ছাড়া রেলওয়ের সহায়তায় ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফাইবার অপটিক লাইন নিয়ে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।

সব মিলিয়ে ভারতের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট–ব্যবস্থায় বড় ধরনের গুণগত পরিবর্তন আসছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ফলে মহামারি–পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারত যে নেতৃত্ব দেবে বলে দাবি করছে, তার বস্তুগত ভিত গড়ে নিচ্ছে তারা।

(সাইবারবার্তা.কম/কেএম/৩১জানুয়ারি২০২২)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ