শুক্রবার, মে ৩ ২০২৪ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে এক নারী গ্রেফতার

 

জোবাইদার মা খাদিজা বেগম গত রোববার রাতে  বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে পড়লেও পারিবারিক আবহের কারণে ছোটবেলা থেকে নামাজ পড়ত। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিল। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তবে এসএসসি পাস করার পর জোবাইদা কলেজে আর ভর্তি হতে চায়নি, চেয়েছিল কোরআনের হাফেজ হতে। অনলাইনে লেখাপড়া করত বলেই আমাদের জানাত জোবাইদা।’
জোবাইদার মা দাবি করেন, জোবাইদা উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েছেন, সেই বিষয়টি তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের সদস্যরা কিছুই জানতেন না।

 

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জোবাইদার উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তাঁর পরিবার টের পেয়েছিল। এ জন্য একবার জোবাইদার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এতে জোবাইদা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন। পরে আবার তাঁর কাছে মুঠোফোন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

আসাদুজ্জামান জানান, গত বছরের শুরুর দিকে জোবাইদা নিজের নাম–পরিচয় গোপন করে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। ফেসবুকেই আনসার আল ইসলামের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ ‘তিতুমীর মিডিয়া’র সন্ধান পান। এ ফেসবুক পেজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও এবং লেখা পড়তে শুরু করেন। তারপর তিতুমীর মিডিয়ার পেজের অ্যাডমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

 

এরপর জোবাইদা উগ্রবাদী মতাদর্শ কঠোরভাবে অনুশীলন করতে থাকেন। উগ্রবাদে যুক্ত হওয়ার অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার হন জোবাইদা। এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে পাঁচ দিন জোবাইদাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১ সেপ্টেম্বর জোবাইদা ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে। অবশ্য জোবাইদা নিরপরাধ বলে আদালতে দাবি করেন তাঁর আইনজীবীরা।

চিকিৎসক দেখাতে এসে জোবাইদা গ্রেপ্তার হন

জোবাইদার বাবা শাহ গোলাম মাওলা ভোলার লালমোহনের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তাঁর চাচা সাখাওয়াত হোসেন পেশায় একজন আইনজীবী। লালমোহন সদরে পাশাপাশি ভবনে থাকেন তাঁরা। তাঁদের গ্রামে বাড়ি রমাগঞ্জে কেউ বসবাস করে না।
উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে জোবাইদার গ্রেপ্তারের সংবাদে অবাক হন চাচা আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন। রোববার রাতে মুঠোফোনে তিনি  বলেন, ‘আমার ভাতিজি জোবাইদা যে উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েছে, অনলাইনে উগ্রপন্থা প্রচার করত, সেই বিষয় আমার জানা ছিল না। ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর যখন টেলিভিশনে খবর প্রচার হয়, তখন বিষয়টি আমি জানতে পারি। আমি জানতাম, জোবাইদা অনলাইনে লেখাপড়া করে। কিন্তু কী পড়ে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতাম না।’

 

জোবাইদারা দুই বোন, এক ভাই। বড় বোন তাঁর স্বামী নিয়ে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করেন। তাঁর বোন জামাই পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। জোবাইদা গ্রেপ্তারের দুই দিন আগে ভোলার লালমোহন থেকে ঢাকায় এসে উত্তরায় বড় বোনের বাসায় ওঠেন।
জোবাইদার মা খোদেজা বেগম  দাবি করেন, জোবাইদার শারীরিক জটিলতা ছিল। তাই চিকিৎসক দেখানোর জন্য মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। সেদিন মেয়ের বাসা থেকে বাড্ডার একটি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য যান। তখন ডিবি পুলিশের নারী সদস্যরা তাঁদের ঘেরাও করে ফেলেন। একজনকে বলতে শুনেছিলেন, ‘নাবিলা, তুমি ধরা পড়ে গিয়েছ।’ পুলিশের মুখে এ কথা শুনে অবাক হন তিনি।

 

সিটিটিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জোবাইদা আনসার আল ইসলামের প্রথম নারী উগ্রবাদী, যিনি গ্রেপ্তার হলেন। উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয় জানার পর পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু জোবায়দা পাত্রের সঙ্গে দেখা করে ‘শহীদ’ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং বিয়ে ভেঙে দেন। অবশ্য জোবাইদার মা খাদিজা বেগম বলেন, এসএসসি পাস করার পর জোবাইদা প্রথমে কলেজে ভর্তি হতে না চাইলেও পরে কলেজে ভর্তি হতে রাজি হন। লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন, সে জন্য বিয়ে করতে চাননি।

 

মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, জোবাইদার কাছ থেকে একটি রেডমি নোট ফোন জব্দ করা হয়। এর সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে আরও চারটি মুঠোফোন। জব্দ করা হয়েছে জোবাইদার ফেসবুক পেজের বিভিন্ন উগ্রবাদী পোস্ট।

 

সিটিটিসি জানিয়েছে, জোবাইদার দুটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, একটি ‘চার্পওয়্যার’ ও চারটি টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, জোবাইদা উগ্র সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও আল–কায়েদার মতাদর্শ প্রচারের জন্য ১৫টির বেশি টেলিগ্রাম চ্যানেল খোলেন। উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার জন্য উসকানিমূলক প্রচারণা চালাতেন। জব্দ করা কাগজপত্রের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, তালেবান আফগানিস্তান দখল করায় শুভেচ্ছা বার্তা প্রচার করা হয়।
সিটিটিসির আসাদুজ্জামান বলেন, জোবাইদার সঙ্গে কোন কোন উগ্রর যোগাযোগ ছিল, সেসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ