সাইবারবার্তা ডেস্ক: বর্তমান যুগকে বলা হয় অনলাইনের যুগ। এটার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি রয়েছে এর ধারাপ দিকও। বর্তমানে অনলাইনকে ব্যবহার করে এক প্রতারক চক্র ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। যারা নিজেদেরকে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে জব হোল্ডার পরিচয় দিয়ে সাধারণ জনতাকে প্রতারিত করছে। এমনি এক অভিযোগ পাওয়া যায় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় অনলাইন সাইট সিগন্যাচার মাইন্ড ইন্সিটিটিউটের বিরুদ্ধে এবং সেখানে কর্মরত কয়েকজন ফ্রিল্যান্সারের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, জগন্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের(জবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্ররোচনায় সিগন্যাচার মাইন্ড ইন্সটিটিউটে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে ভর্তি হয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী। তবে ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে নিয়মিত প্রতারণার শিকার হন তরা।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- মার্কেটিং ডিপাটমেন্টের ১৪তম ব্যাচ তন্ময় তানভির, জিসানুর রহমান মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট ১৪তম ব্যাচ, সাব্বির হোসেন সকাল নাট্যকলা ডিপার্টমেন্ট ১১তম ব্যাচ, খাদিমুল ইসলাম আসিফ আইইআর ডিপার্টমেন্ট ১ তম ব্যাচ প্রমুখ।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগ ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার কারিশমা বলেন, ২০২০ এর মার্চে লকডাউন ঘোষণা হয় এবং অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি ঝোঁক অনেক আগে থেকেই ছিল। লকডাউন আমাকে সুযোগ করে দিল। আমি পিসি কিনলাম। আহাদ নামের একটা ছেলে আমাকে সিগন্যাচার মাইন্ড ইন্সিটিউটের হদিস দেয়। আমাকে ওদের আইটি তে ভর্তি হতে বলে। আমি আমার ব্যাচম্যাটকে বিশ্বাস করে কিছু পেমেন্ট করলাম।
সেখানে সাব্বির হাসান সকাল( সিগন্যাচার মাইন্ড ইন্সটিটিউটের মার্কেটিং ম্যানেজার) নামে একজন নানা প্ররোচনা দিয়ে আমার ব্রেইন ওয়াস করে দিলেন। আমিও ক্যাম্পাসের সিনিয়র ভেবে বিশ্বাস করে ভর্তি হয়ে গেলাম। এরপরই বুঝতে পারলাম এরা আসলে কি করে, শুধু মানুষের মগজ ধোলাই করে এড করতে হবে এবং সেখান থেকে টাকা পাওয়া যাবে। যেটা হলো নেটওয়ার্কিং (তারা এফিলিয়েট বলে)। তিনি বলেন, আমি এখানে ডিজিটাল মার্কেটি কোর্স করার জন্য আসছি কিন্তু তারা এ সম্পর্কিত কোনো কোর্স না করিয়ে ওদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে (এনেক্স) মানুষ এড করার জন্য প্ররোচিত করে, এতে করে প্রতি জনে ৫০০ টাকা করে পাওয়া যাবে বলে প্রলোভন দেখায়। আমি কোর্সের ব্যাপারে বাধ্য করলে দীর্ঘদিন গরিমসী করে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি কোর্স দেয়, যেটার মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত কোনো ক্লাসই নেই। তিনি আরও বলেন, এভাবে আমার মতো কয়েকশত শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে কিন্তু সবাই মুখ খুলছেনা, তাই আমরা প্রক্টর স্যার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছি।
তাছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপাটমেন্টের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আহাদুল ইসলাম আহাদ বলেন, ফ্রিল্যান্সিয়ের স্বপ্ন নিয়ে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সে সিগন্যাচার মাইন্ড ইন্সিটিউটে ৬হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হই। কিন্তু তাদের প্রতারনার কাছে হার মেনে যায় আমার স্বপ্ন। নানা প্ররোচনার মুখে নিজের স্বপ্নকে চোঁখের সামনে তলিয়ে যেতে দেখেও কিছু বলতে পারিনি। তিনি বলেন, তারা আমাকে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করাবে বলে ভর্তি করায় কিন্তু দীর্ঘদিন ক্লাস করার পরেও ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত কোনো কোর্সই পাইনি, প্রতি ক্লাসে তারা এনেক্সে অ্যাফিলিয়েট করার জন্য বাধ্য করে, পরে নিজের স্বপ্নকে বলিদান দিয়ে চলে এসেছি।
এমনি করে শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতারণার শিকার হন। তাদের মধ্যে মার্কেটিং ডিপাটমেন্টের ১৪ব্যাচের শিক্ষার্থী নিলয় সাহা, ভুগোল ও পরিবেশ ডিপাটমেন্টের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রুকুনুজ্জামান সবুজ সাইফুল ইসলাম শান্ত, মোঃ রাশেদ ইসলাম, অংকন সাহা অদরূপ, সায়েদ জোনায়েত হোসাইন সহ নাম না জানা আরও অনেক। অনেকে নাম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদিমুল ইসলাম আসিফ বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে তাদেরকে আমি ব্যক্তগতভাবে চিনিনা। আমাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে তারা সরাসরি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিতে পারে। তারা হয়তো ভুল করে আমার নাম দিয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ৩০মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। এবং শতাধিক শিক্ষার্থী আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি তাদেরকে কোতোয়ালি থানায় জিডি করতে বলি এবং থানা থেকে ওনারা ব্যবস্থা নিবেন, এবং ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের আওতায় এনে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২ জুন ২০২১)