সাইবারবার্তা ডেস্ক: আদালতের জেরায় কঠিন সব প্রশ্ন প্রতিপক্ষের উকিলের কাছ থেকে আসবে বলেই আমরা ধরে নেই। এপিক বনাম অ্যাপলের মামলায় স্বয়ং বিচারক গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন করেছেন বিবাদী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ভাষায়, শুক্রবার ফেডারেল বিচারক অ্যাপলকে আগুনে ঝলসেছেন। আর সেই তাপের বড় অংশ গিয়ে পড়েছে অ্যাপল প্রধান টিম কুকের ওপর।
অ্যাপল প্রধান নির্বাহী’র দিকে ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নগুলোর মধ্যে ছিল আইফোন নির্মাতার অ্যাপ স্টোর ডেভেলপারদের কাছ থেকে লাভ করে কিনা, সেই লাভের পরিমাণ ন্যায্য কিনা এবং অ্যাপল ওই লাভের অনুপাত পরিবর্তনের জন্য সত্যিকার অর্থে কোনও প্রতিযোগিতামূলক চাপের মুখোমুখি হয় কিনা। ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডের আদালতে দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অ্যাপল প্রধান টিম কুক সাক্ষ্য দিয়েছেন, এপিকের অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনে বিবাদী পক্ষের সর্বশেষ সাক্ষী হিসাবে। অভিযোগ, আইফোন নির্মাতার অ্যাপ স্টোরের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং কমিশনের বিষয়টি একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে এবং অ্যাপল সেটির অবৈধ অপব্যবহার করছে।
১৯৮৪ সালে সাড়া জাগানো এক বিজ্ঞাপনে অ্যাপল নিজেকে পরিচিতি দিয়েছিল ‘বিগ ব্রাদারে’র বিপক্ষে দাঁড়ানো বিদ্রোহী চেতনার এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তিন যুগ পরে এসে স্পটিফাইয়ের মতো অ্যাপ নির্মাতা, মার্কিন জনপ্রতিনিধিরা এবং ইউরোপীয় নীতি নির্ধারকরা প্রশ্ন তুলছেন, অ্যাপল নিজেই কি এখন সেই বিগ ব্রাদার হয়ে উঠেছে কি না, যে এখন অসম্ভব বড় এবং সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী। সাক্ষ্য শেষে বিচারক ইয়োভন গঞ্জালেজ রজার্স কুককে প্রশ্ন করেন– তাকে আসলে স্বীকার করার জন্যই চাপ দেন যে, অ্যাপ স্টোরের আয়ের বেশিরভাগই আসে গেইম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এবং অন্যান্য যে সব অ্যাপ বিনামূল্যেই ডাউনলোড করা যায়, তারা কোনও কমিশন দেয় না। ফলে গেইম ডেভেলপারদের আয় থেকেই কার্যত ওইসব বিনামূল্যের অ্যাপগুলোর ভর্তুকি আসে।
বিচারক গঞ্জালেজ বলেন, অ্যাপল গেইম ডেভেলপারদের কাছ থেকে যে মুনাফা আয় করে তা “অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।” তিনি বলেন, “আমি এইটুকু বুঝতে পারি যে, কোনওভাবে অ্যাপল গ্রাহককে অ্যাপস্টোরে নিয়ে আসছে। কিন্তু সেই প্রথম বারের পরে, সেই প্রথম মিথস্ক্রিয়ার পরে, ডেভেলপাররাই গ্রাহকদের গেইমের সঙ্গে রাখছে। আর অ্যাপল (পরের ধাপগুলোয় কোনো ভূমিকা না রাখা সত্ত্বেও) শুধু শুধু এ থেকে লাভ করছে। তেমনই মনে হচ্ছে আমার।” কুক বিচারকের সঙ্গে একমত হননি। “বিনামূল্যে অ্যাপ্লিকেশন অনেক কিছুই এনে দেয়। তিনি বলেন, কেবল যারা বড় আকারে লাভবান হচ্ছে তারাই কেবল ৩০ শতাংশ কমিশন দিচ্ছে।
এপিক দেখানোর চেষ্টা করেছে যে অ্যাপলের আইফোন একটি লাভজনক প্ল্যাটফর্ম যা ব্যবহারকারীদের এর মধ্যে আটকে ফেলে। এপিক একটি অভ্যন্তরীণ অ্যাপল নথির দিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করে যে, অ্যাপ স্টোরের অপারেটিং মার্জিন ছিল শতকরা ৭৮ ভাগ। জবাবে কুক বলেন, ওই নথিতে অ্যাপ স্টোর চালানোর সম্পূর্ণ ব্যয়ের প্রতিফলন নেই। অ্যাপ স্টোর নিয়ে এই প্রথম এতো বিস্তৃতভাবে ৫৩.৮ বিলিয়ন ডলারের পরিষেবা ব্যবসার হিসাব দিলেন টিম কুক।
বিচারক গঞ্জালেজ রজার্স তার প্রশ্নের সময়ই একটি জরিপের উদ্ধৃতি টেনে বলেন, শতকরা ৩৯ ভাগ সফটওয়্যার ডেভেলপার অ্যাপলের অ্যাপ বিতরণ পরিষেবায় সন্তুষ্ট নন। সেইসঙ্গে তিনি যোগ করেন, “আমার মনে হয় না যে, আপনি ডেভেলপারদের সাথে যেভাবে কাজ করেন সেটি পরিবর্তন করার জন্য আপনি কোনো চাপ অনুভব করেন।” কুক জবাবে বলেন, ডেভেলপারদের অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে “আমরা জায়গাটি তছনছ করে ফেলি”। কিন্তু পরে তিনি স্বীকার করেন যে, অ্যাপলের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ডেভেলপারদের ফিডব্যাক তিনি নিয়মিত পান না।
তিন সপ্তাহ আগে এই বিচারের শুরুতে, গঞ্জালেজ রজার্স এপিকের প্রধান নির্বাহী টিম সুইনিকেও কঠিন প্রশ্নে জর্জরিত করেছেন। এপিকের এই দাবি কীভাবে অ্যাপলের গোটা ব্যবসা বদলে দিতে বাধ্য করতে পারে এবং সফটওয়্যার জগতে আলোড়ন তৈরি করতে পারে তিনি তা ভেবেছেন কি না। জবাবে সুইনি বলেছিলেন, তিনি বিষয়টিকে এভাবে দেখেননি। অ্যাপল বিচারক রজার্সকে বোঝাতে চেয়েছে, ডেভেলপারদের জন্য নিয়মগুলি আনা হয়েছে গ্রাহক তথ্য গোপন ও ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ রাখার বিষয়টি মাথায় রেখে। কুক বলেন, “ব্যবহারকারীর ওপর আমাদের অসম্ভব মনোযোগ রয়েছে গ্রাহক দৃষ্ঠিকোণ থেকে সঠিক কাজ করা বিষয়ে।” “সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা হল সেই ভিত্তি যার উপর গোপনতা গড়ে উঠছে। প্রযুক্তির মানুষের কাছ থেকে সমস্ত রকম ডেটা শুষে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, এবং আমরা মানুষকে সেটি এড়িয়ে যাওয়ার টুল সরবরাহ করতে পছন্দ করি।”
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২৩ মে ২০২১)