Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wordpress-seo domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/cyberbar42/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the soledad domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/cyberbar42/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
অগমেন্টেড রিয়েলিটির বিস্ময় - CyberBarta.com
  বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১ ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অগমেন্টেড রিয়েলিটির বিস্ময়

 সাইবারবার্তা ডেস্ক: কল্পনা করুন, আপনি মঙ্গল গ্রহে হাঁটছেন। মঙ্গলের মাটি থেকে একটা পাথর তুলে নিলেন। পাথরটা নেড়েচেড়ে দেখলেন। তারপর মনে হলো ভেঙে দেখা যাক! পাথরটা গুঁড়ো করছেন এমন সময় আপনার বন্ধু চাঁদ থেকে ভিডিও কল দিল। চাঁদের বালুভর্তি একটা প্যাকেট দিলো আপনার হাতে। আপনি মঙ্গলের পাথরের গুঁড়োর সঙ্গে চাঁদের বালু মিলিয়ে দেখলেন। এরমধ্যে সময় হয়ে গেল আপনার প্রিয় টিভি শো’র, তাই নিমেষে মঙ্গল থেকে চলে এলেন আপনার বাসার ড্রয়িং রুমে! এবার সোফায় গা এলিয়ে দেখতে লাগলেন আপনার প্রিয় শো!

 

এটা সায়েন্স ফিকশন মুভির দৃশ্য নয়, বাস্তব। এ প্রযুক্তির নাম অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা সংক্ষেপে এআর (AR)। বাস্তব আর ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মেলবন্ধন। বছর দুয়েক ধরে ছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জয়জয়কার। অধিকাংশ প্রযুক্তিবিদের মতে, এআর হতে যাচ্ছে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি দুনিয়ার মূল চমক!

 

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটার সিম্যুলেশনে তৈরি করা ত্রিমাত্রিক জগৎ। যেখানে মানুষের দৃষ্টি, শ্রবণ এবং স্পর্শের অনুভুতিকে উদ্দীপ্ত করা হয়। একটি সাধারণ ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে একজন ব্যবহারকারী স্টেরিওস্কোপিক বা ত্রিমাত্রিক স্ক্রীন সংবলিত একটি হেলমেট পরে এবং তার মধ্য দিয়ে বাস্তব থেকে অনুকরণকৃত অ্যানিমেটেড ছবি দেখে। গতি নিয়ন্ত্রণকারী সেন্সরের মাধ্যমে স্ক্রিনে প্রদর্শিত ছবির গতিকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীর গতির সঙ্গে মেলানো হয়। যখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারীর গতির পরিবর্তন হয় তখন স্ক্রিনে প্রদর্শিত দৃশ্যের গতিও পরিবর্তিত হয়। এভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহারকারী কৃত্তিম ত্রিমাত্রিক জগতের সঙ্গে মিশে যায় এবং ব্যবহারকারী সেই জগতের একটি অংশে পরিণত হয়।

 

অগমেন্টেড রিয়েলিটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ধারণাকেই আরো বাস্তব রূপ দেয়। এখানে সিমুলেটেড কোনো জগৎ নয় বরং বাস্তব জগৎকেই আপনার কল্পনার জায়গা বানিয়ে দেয়া হয়। ধরুন, আপনার পড়ার টেবিলই দেখছেন আপনি। কিন্তু অগমেন্টেড রিয়েলিটিতে আপনি চাচ্ছেন আপনার টেবিলের ওপর শার্লক হোমস সমগ্র থাকুক। তাই দেখতে পাবেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যেখানে আপনাকে আরেকটা সিমুলেটেড জগতে নিয়ে যায়, সেখানে এই প্রযুক্তি আপনাকে সুযোগ দিচ্ছে আপনার জগৎকে ইচ্ছেমতো সাজানোর। এছাড়া অগমেন্টেড রিয়েলিটিতে ইন্দ্রিয় ব্যবহারের সুযোগ অনেক বেশি। তাই অদূর ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির স্থান দখল করবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি।

 

অগমেন্টেড রিয়েলিটির জন্য দরকার রিয়েল টাইম ডাটা। রিয়েল টাইম ডাটা বলতে আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানতে হবে এআর ডিভাইসকে। এজন্য দরকার উচ্চ গতির প্রসেসর, মোশন সেন্সর, ক্যামেরা, জিপিএস ইত্যাদি। সাধারণত পুরোটা একটা হেড সেটের মধ্যে দেয়া থাকে। ক্যামেরা থেকে আপনার দৃশ্যমান জগতের ছবি তোলা হয়, সেখানে ত্রিমাত্রিক হলোগ্রামের মাধ্যমে আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে তুলে ধরা হয়। অথবা গল্পের মতো কোনো রেকর্ড করা পরিবেশের পুরোটাই হলোগ্রামে তুলে ধরা হয়। কম্পিউটারের স্ক্রিনের মতো ত্রিমাত্রিক পরিবেশে আপনার কাঙ্খিত টুলগুলো থাকে, সেখান থেকে আপনি স্পর্শের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন কম্পিউটার স্ক্রিনে কোন ফাইলকে সরাতে আপনি কার্সর রেখে ক্লিক করে কার্সর সরান। কিন্তু এখানে আপনার হাতই কার্সরের কাজ করে। এজন্য আপনার শরীরের অঙ্গগুলোকে প্রতিমুহূর্তে ট্র্যাক করা হয় এবং কম্পিউটার অ্যালগোরিদম দিয়ে পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আপনার চোখের দৃষ্টিকে ট্র্যাক করে যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই আপনার কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে উপস্থাপন করা হয়।

 

 

১৯৬৮ সালে ইভান সাদারল্যান্ড হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হেড মাউন্টেড এআর ডিসপ্লে তৈরি করেন। ১৯৭৫ সালে মাইরন ক্রুগার উদ্ভাবন করেন ‘ভিডিও প্লেস’। ভিডিও প্লেসে ব্যবহারকারী ভার্চুয়াল বস্তুর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার সুযোগ পায়। ১৯৯০ সালে টমাস কডেল প্রথম অগমেন্টেড রিয়েলিটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন। ইউএস এয়ারফোর্স রিসার্চ ল্যাবে ১৯৯২ সালে প্রথম কার্যকর এআর সিস্টেম তৈরি করা হয়, যার নাম ছিল ভার্চুয়াল ফিক্সচার (Virtual Fixture)। সেই বছরই এই বিষয়ে প্রথম রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই নতুন নতুন কাজ হতে থাকে।

 

অগমেন্টেড রিয়েলিটি সবার নজরে আসে ২০১৩ সালে গুগল প্লাসের ঘোষণার পর। ২০১৫সালে মাইক্রোসফট বাজারে আনে হলোলেন্স নামের হেড সেট। এতে মাইক্রোসফট যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে তাকে মিক্সড রিয়েলিটি বলা হচ্ছে। এটি মূলত এআর এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এর সংমিশ্রণ। পোকেমন গো গেমের কল্যাণে অগমেন্টেড রিয়েলিটি মানুষের হাতে এসেছে। ফোনের ক্যামেরায় দেখছেন আপনার বাস্তব দুনিয়া আর সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে রং বেরঙের পোকেমন। কল্পনার পোকেমন বাস্তব জগতে বিচরণ করছে। অবশ্য মূল ধারার প্রযুক্তিবিদেরা পোকেমন গো গেমকে ঠিক সত্যিকারের অগমেন্টেড রিয়েলিটি মানতে রাজি নন। তাদের মতে অগমেন্টেড রিয়েলিটি কেমন হতে পারে, পোকেমন গো তার একটা ট্রেলার মাত্র!

 

অগমেন্টেড রিয়েলিটি আমাদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের ধারণার আমূল পাল্টে দেবে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে আক্ষরিক অর্থেই ত্রিমাত্রিক কনফারেন্সে যোগ দেয়া যাবে। এআর হেডসেট মূলত একটা কম্পিউটার, তাই কম্পিউটার বলতে আমাদের সামনে যে রকম একটা ধারণা আসে, তা বদলে দিতে চলেছে এয়ার প্রযুক্তি। ই-কমার্সের জগতে পরিবর্তন আনতে চলেছে এই প্রযুক্তি, কেননা এখন আর শো-রুমের দরকার পড়বে না। প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হয়ে উঠবে অপরিহার্য। ডিজাইনিং শিক্ষা বিনোদন সব ক্ষেত্রেই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে।

 

২০১৩ সালে সাধারণ মানুষের কাছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি পৌঁছে দিতে গুগল প্লাস বাজারে আসে। এতে ছিলো ক্যামেরা, সর্বাধুনিক ডিসপ্লে এবং চশমার এক পাশে একটি টাচপ্যাড। সে সময় এটি বেশ সাড়া ফেলে দিলেও ব্যবসায়িকভাবে তেমন সফল হয়নি। গুগল এখন এর উন্নয়নে সাবেক অ্যাপল এক্সিকিউটিভ টনি ফ্যাডেলকে নিয়ে কাজ করছে।

 

এআর প্রযুক্তি পাল্টে দিতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ। চিকিৎসা, শিক্ষা, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, কনফারেন্স, ডিজাইনিং, বিনোদন সব ক্ষেত্রেই আছে এর ব্যাপক চাহিদা। অ্যাপল, সনি, কোয়ালকম, স্ফেরোর মতো কোম্পানিগুলো তাদের অগমেন্টেড রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করছে। প্রযুক্তি যেভাবে এগোচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে বাস্তবতা আর কল্পনার মাঝে বিভেদ থাকবে না। তখন হয়তো আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের একেকটা ফ্যান্টাসির জগতে বিচরণ করে বেড়াব।

 

সৌজ‌ন্যে: ডেইলি বাংলা‌দেশ

সাইবারবার্তা.কম/এন‌টি/জেডআই/২ এ‌প্রিল ২০২১

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ