বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫ ২০২৫ | ২২শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ৫ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

অ্যামাজনে ফুলেফেঁপে উঠেছে ‘ফেইক রিভিউ’ বাণিজ্য

সাইবারবার্তা ডেস্ক: রোমের এক ৪০ বছর বয়সী মা তার দুই শিশু সন্তানের জন্য মোটামুটি দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন কাটাচ্ছিলেন। এর পরই এলো করোনাভাইরাসের আঘাত। তিনি চাকরি হারান। শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে তার ঠাঁই হয় ইতালিয়ান অ্যামাজনের ফেইক রিভিউ দাতার তালিকায়।

শত শত মিলিয়ন ডলারের দ্রুত সম্প্রসারণশীল ব্যবসা এখন এই ফেইক রিভিউয়ের জগত। আর অর্থ উপার্জনের উপায় অনলাইনে খুঁজতে গিয়ে তিনি এসে ঠোক্কর খান এখানেই।

হাজার হাজার মানুষ অ্যামাজনের টেলিগ্রাম ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং চ্যানেলে যোগ দিচ্ছেন। এখানে নামপরিচয় অজ্ঞাত মধ্যস্থতাকারীরা তাদের কাজে নেন। সেই কাজটি হলো অর্থের বিনিময়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেইসের পণ্যের জন্য “ফাইভ স্টার রিভিউ” লিখে দেওয়া।

“এটি খুব নৈতিক কাজ হচ্ছে না, আইনসঙ্গতও নয়। তবে এটি আমাকে কয়েকটি জিনিসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে যেটি আমি আর কোনো ভাবে মেটাতে পারছিলাম না।” — রয়টার্সের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলছিলেন রোমের ওই মা। তিনি নিজ পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। কারণ, পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে অ্যামাজনের ইতালিয়ান সাইট তাকে নিষিদ্ধ করে দেবে।

বারবার লকডাউনে যাওয়ার ফলে বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো ইতালিতেও অ্যামাজন ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি যদিও বিক্রয় পরিসংখ্যান দেয় না, তবে মিলান পলিটেকনিকো ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, গত বছরের তুলনায় ইতালিতে পণ্যের অনলাইন বাণিজ্য বেড়েছে শতকরা ৩১ ভাগ।

অ্যামাজন বলছে, ভুয়া রিভিউ ঠেকানোর জন্য তারা যথেষ্ট উদ্যোগী। যে সব রিভিউ ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোতেও তারা সবসময়ই ফেইক রিভিউয়ের লক্ষণগুলো খুঁজে দেখেন। সেইসঙ্গে, বিধি লঙ্ঘন করেছে এমন কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হলে তার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া বা নিষিদ্ধ করার জন্যও প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তুত।

“গ্রাহকদের রিভিউয়ের মান বজায় রাখতে আমরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অ্যামাজনে প্রকাশিত প্রতিটি রিভিউ যেন সঠিক এবং প্রাসঙ্গিক হয় সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা উদ্ভাবন চালিয়ে যাব,” বলেছে অ্যামাজন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলভিত্তিক এই রিটেইল জায়ান্ট প্রায় এক দশক আগে ইতালিতে যাত্রা শুরু করে। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এখানে দুটি বিতরণ কেন্দ্র চালু করে। এ বছরই আরও তিনটি সাইট যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

বুট জুতা আকৃতির ইতালির ম্যাপের একেবারে পায়ের আঙ্গুলের অংশটি হচ্ছে ক্যালাব্রিয়া। সেখানকার ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর বলেছে, টেলিগ্রাম অ্যাপের জনপ্রিয় চ্যানেলগুলোয় চীনা কিছু প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রেই এদের নামটিই ইঙ্গিত দেয় এদের কাজ সম্পর্কে। যেমন কারো নাম হয়তো “অ্যামাজন রিভিউ দিয়ে ফ্রি পণ্য”।

এই মধ্যস্থতাকারীরা অ্যামাজনে পণ্য প্রচার করতে ইচ্ছুক লোকদের খোঁজ করে। অ্যামাজন যেহেতু পণ্যের ক্রে‌তা না হলে রিভিউ করতে দেয় না, তাই, যিনি রিভিউ করবেন তিনি বিশেষ পণ্যটি কেনেন। তারপর যখন ওই পণ্যের ফাইভ স্টার রিভিউ অ্যামাজন সাইটে ওঠে তখন রিভিউদাতাকে ওই পণ্যটির মূল্য পেপালের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এই কিশোর জানান, তার মতো মধ্যস্থতাকারীরা যখন কাউকে দিয়ে রিভিউ করান তখন প্রতিটি ফাইভ স্টার রিভিউয়ের জন্য তিনি দুই থেকে আড়াই ইউরো (আড়াই থেকে তিন ডলারের কাছাকাছি) কমিশন পান। এভাবে প্রতি মাসে তার আয় হয় তিন থেকে চারশ’ ইউরো। “মেসেজ আকারে কিছু আলাপ আর প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমার বয়সে এটি কোনোভাবেই খারাপ আয় নয়।” বলা বাহুল্য, তিনিও নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

গত বছর প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেসের গবেষণা অনুসারে, এইসব ফেইক রিভিউ একটি পণ্যের রেটিং বাড়িয়ে দিতে পারে, পণ্যটিকে অ্যামাজন তালিকায় সামনে নিয়ে আসতে পারে এবং আরও বেশি সংখ্যক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে।

“ফ্রি পণ্যের বিনিময়ে রিভিউয়ের বিষয়টি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অস্বাভাবিক সংখ্যায় বেড়েছে।” — বলছিলেন ৩৭ বছর বয়সী এক সিসিলিয়। তিনি বলেছেন, উপার্জন বাড়াতে প্রতিমাসে এমন কয়েক ডজন ফ্রি পাওয়া পণ্য তিনি নিজেই ফের বিক্রি করে দিয়েছেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভয়াবহতম মন্দা পার করছে এবং এক বছরেই প্রায় সাড়ে চার লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন এমন একটি দেশে কিছু বাড়তি নগদ আয় অনেকের জন্যই স্বস্তির বিষয়।

এদিকে ভোক্তাস্বার্থ সমর্থক গোষ্ঠীগুলো বলছে ফেইক রিভিউ ঠেকাতে। তাদের মতে, ক্রেতাদের বিভ্রান্তি থেকে বাঁচাতে অ্যামাজনের অনেক কিছুই করার আছে।

“অ্যামাজন দাবি করেছে যে তারা যথাসাধ্য করছে এবং তারা নিয়মিতই হাজার হাজার রিভিউ মুছে ফেলে। তবে বাস্তবতা হল এমন রিভিউ আছে লাখ লাখ।” — বলছিলেন ইতালির ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ কনজিউমার্স-এর প্রধান মেসিমিলিয়ানো ডোনা।

“বাস্তবতা হচ্ছে, বাজারটিতে কারচুপি চলছে” তিনি রয়টার্সকে বলেন।

সৌজন্যেঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
(সাইবারবার্তা.কম/আরআই/জেডআই/২৭মার্চ,২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ