একজন হ্যাকারকে আপনি অভিনেতার সঙ্গে তুলনা করতে পারেন। হ্যাকার কখনো চোর, কখনো ডাকাত, কখনো পুলিশ, কখনো ভাল মানুষ, কখনো শিক্ষক কখনো আবার ছাত্র। একাধিক চরিত্রের মূলে একটাই উদ্দেশ্য, তা হলো টাকা উপার্জন। এ জন্য তারা নানা বেশে নিজেকে উপস্থাপন করে।
একইভাবে একজন হ্যাকার মানুষের সামনে নিজেকে জনদরদী, ব্যাবসায়ী, ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পপতি আবার কখনো সুন্দরী নারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে। যেকোনো উপায়েই হোক লক্ষ্য হলো- মানুষের গোপন তথ্য চুরি করা। তথ্য চুরি করার পর নির্ধারণ হয়, অ্যাকশন কী ধরনের হবে।
হ্যাকার যখন শিক্ষক
একজন হ্যাকার কখন কখন শিক্ষক হয়ে কাউকে জ্ঞ্যানের ভাণ্ডারের ঈশ্বর বানিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে থাকে। তখন সে টার্গেট করা ভিক্টিমকে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করে। দুর্লভ সফটওয়্যার ফ্রী সরবরাহ করে। বিভিন্ন ওয়েব লিঙ্ক দেয় ভিসিট করার জন্য। আসলে এগুলো করেই সে ভিক্টিমের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেয়। হ্যাকার তার সরবরাহ করা সামগ্রীর সঙ্গে ম্যালওয়ার যুক্ত করে দেয়।
হ্যাকার যখন শিল্পপতি
শিল্পপতির মুখোশ পরে হ্যাকাররা বিভিন্ন মানুষের কাছে ইমেইল করে চাকরির প্রলোভন দেখায়। বায়োডাটা সাবমিট করার জন্য অনুরোধ করে।
হ্যাকার যখন ব্যবসায়ী
হ্যাকারেরা ব্যবসায়ী সেজে সাধারণ মানুষের কাছে ইমেইল পাঠায়। তাদের ইমেইলের ধরন হয়ে থাকে এ রকম, আপনি আমাদের কোম্পানির লটারি জিতেছেন বা আপনি যে পন্যটি ক্রয় করতে চেয়েছে তার পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছে। আপনার ঠিকানা ব্যাক্তিগত তথ্য আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। অল্প দিনের মধ্যে আপনার কাছে আমাদের পণ্য পৌঁছে যাবে। আবার কখন কখন ব্যাংক থেকে স্টেটমেন্ট পাঠানো হয়। তাদের ফাঁদে পা দিলেই আপনার সব তথ্য হারাবেন।
হ্যাকার যখন সুন্দরী নারী
সুন্দরী নারীর বেশ ধরে আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আপনার তথ্য চুরি করা তাদের উদ্দেশ্য। এসব ক্ষেত্রে তারা আপনাকে ইমেইল পাঠাবে। সে একজন বিধবা নারী, তার ব্যাংক এক্যাউন্টে অনেক টাকা আছে তুলতে পারতেছে না। আপনার সাহায্য প্রয়োজন। অথবা সুন্দরী নারী সে বাড়ী থেকে পালিয়েছে, তার এক্যাউন্টে অনেক টাকা আছে ক্যাশ উঠানো সম্ভব নয় কেবল মাত্র ব্যাংক টু ব্যাংক ট্র্যান্সফারই সম্ভব। এছাড়া মুসলিম সংখ্যা গরিস্ট দেশগুলতে। অমুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে ইমেইল আসে। যেমন লিবিয়া বা ইরাক থেকে আপানার কাছে ইমেইল আসতে পারে। গাদ্দাফির মেয়ে, বা ছেলের বউ টাকা তুলতে পারতেছে না। ইত্যাদি ইত্যাদি।
জনসচেতনতা
আপনি হয়ত ভাবছেন আপনি বারাক ওবামা নন, অথবা তাদের কন্যা বা পুত্র নন। তাহলে আপনাকে হ্যাক করে বা আপনার তথ্য চুরি করে হ্যাকারের লাভ কি? অবশ্যই লাভ আছে।
মনে করুন আমি একজন ক্রিমিনাল। আমি আপনার ইমেইল ব্যাবহার করে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলাম বা কাউকে হত্যার হুমকি দিলাম। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাথমিক অবস্থায় এসে কাকে ধরবে, একটু চিন্তা করুন।
• আমি আপনার তথ্য চুরি করে আপনার সব তথ্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে পারি।
• আমি আপনার কম্পিউটার/স্মার্টফোনের থেকে ব্যাক্তগত তথ্য চুরি করে আপনাকে ব্লাকমেইল করতে পারি।
• আমি আপনার ওয়েব/স্মার্টফোন/গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে আপনার কাছে টাকা দাবি করতে পারি লক খুলে দেয়ার চুক্তিতে।
• আমি আপনার একটা/২টা পাসওয়ার্ড পেলে বুঝতে পারব অনন্য ক্ষেত্রে আপনার পাসওয়ার্ড কেমন হতে পারে। সুযোগ বুঝে আপানাকে ব্লাকমেইল করে পারি।
• আপনার পাসওয়ার্ড ও গোপন তথ্য আমার সংগ্রহে থাকলে এবং এই মুহূর্তে আপনার কাছে মূল্যবান কিছু না পাওয়া গেলেও, পরবর্তীতে কোনো দিন যদি সুযোগ আসে আপনাকে তৎক্ষণাৎ পাকড়াও করা হবে।আরও অনেক টেকনিক তারা অনুসরণ করে। তারা অনেকভাবে মানুষের ক্ষতি করে। সুতরাং সাবধান।। দরকার শুধু সচেতনতা।
লেখক: মেহেদি হাসান, অ্যাডভাইজার, সিসিএ ফাউন্ডেশন