মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩ ২০২৪ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল | ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

ফ্রিল্যান্সারদের প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

সাইবারবার্তা ডেস্ক: দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় ফ্রিল্যান্সিং খাত ঝুঁকির মুখে পড়লেও পরে সামলে ওঠে।  এখন এ খাত বেশ ভালো করছে বলে জানা গেছে।  ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি অন্তত ২০ শতাংশ।  অন্যান্য ব্যবসা, বিভিন্ন খাত যখন লোকসান গুনছে, ধুঁকছে তখন এ খাত কীভাবে প্রবৃদ্ধি দেখছে? সুলুক সন্ধান করতে গিয়ে জানা গেলো করোনার জন্যই এমন হয়েছে।

 

বিশ্বে করোনা দেখা দিলে দেশ-বিদেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যায়। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষতি পোষাতে কর্মী ছাঁটাই, বেতন কমিয়ে দেওয়া, অফিস ছেড়ে দেওয়ার মতো কাজ করে প্রতিষ্ঠানের নামটা বাঁচিয়ে রাখে।  সেসময় ফ্রিল্যান্সাররাও কাজ হারিয়ে অনেকটা ধুঁকতে থাকেন।  পরিস্থিতি একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও অনেকেই পুরনো কর্মীদের আর কাজে ফেরায় না।  যাদের ফেরায় তাদের হোম অফিস (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) দেয়।  আর অতিরিক্ত যা কাজ থাকে তা কোম্পানিগুলো আউটসোর্সিং করতে থাকে।  এতে করে ফ্রিল্যান্সাররা আবারও কাজ পেতে শুরু করেন।  লোকসান কাভার করে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ ও আয়ের মুখ দেখতে শুরু করেছে।

এদিকে ফ্রিল্যান্সার উদ্যোক্তাদের এই খাতে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে কাজ করতে প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সরকারের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন।  সেই চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার ওপর ১০ শতাংশ হারে রফতানি ভর্তুকি সুবিধা তথা নগদ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য সুপারিশ করেছেন।

 

চিঠিতে লেখা হয়েছে, আইসিটি খাতে রফতানি বিকাশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুদূর প্রসারী উদ্যোগের ফলে যৌক্তিকভাবেই ২০১৮ সালে সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যারের আওতাভুক্ত পণ্য ও সেবা খাতে ১০ শতাংশ হারে রফতানিকারককে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৩ নম্বর সার্কুলারের মাধ্যমে বাস্তাবায়িত হয়েছে।  কিন্তু ওই সার্কুলারে রফতানি ভর্তুকি প্রাপ্তব্য তালিকায় এমন কিছু সেবা বা পণ্যের উল্লেখ রয়েছে যা ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি পর্যায়ে এই ভর্তুকির সুবিধা প্রাপ্যতা রাখা হয়নি। ফ্রিল্যান্সারদের এ ভর্তুকির আওতায় আনা হলে তাদের রফতানি আয়ের পুরো অর্থ বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।

 

জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, করোনার প্রথম দিকে মনে হয়েছিলো ফ্রিল্যান্সাররা কাজ হারাবে।  ইউরোপের বাজারগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।  এখন তারা  আউটসোর্স করছে।  দেখা গেলো ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ কমেনি।  কাজ বেড়েছে, কাজের পরিধিও বেড়েছে।  গত ১৪ মাসে ফ্রিল্যান্সিং খাত পজিটিভ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ফ্রিল্যান্সার উদ্যোক্তাদের একই প্ল্যাটফর্মে এনে তাদের পেশার স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে আইডি কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  তারা নিবন্ধনের আওতায় এসেছে।  ফলে ক্যাশ ইনসেন্টিভ দেওয়া হলে ফ্রিল্যান্সাররা আরও উৎসাহী হয়ে কাজ করবে বলে মনে করেন পলক।

 

প্রসঙ্গত, দেশে সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে এখন সক্রিয় এক লাখেরও বেশি।  যারা ভালো আয় করছেন।  কয়েক হাজার ফ্রিল্যান্সার আছেন যাদের বার্ষিক আয় কোটি টাকারও বেশি।  আইসিটি বিভাগ বলছে, দেশের ফ্রিল্যান্সারদের বার্ষিক আয় বর্তমানে ৫০০ মিলিয়ন ডলার।

 

ফ্রিল্যান্সাররা খুশি

 

দেশের ফ্রিল্যান্সারদের কাছে জনপ্রিয় দুই সাইট হলো আপওয়ার্ক ও ফাইভার।  এই দুটো সাইট থেকে ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন কাজ পেয়ে থাকেন।  তবে কাজের জন্য আরও অনেক সাইট ও মার্কেটপ্লেস রয়েছে।  তাদের আয়ও ভালো।  ডেয়োট্রনের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রিল্যান্সার সাইদুর মামুন খান ঢাকায় বসে কাজ করেন।  তিনি আপওয়ার্কের হেড অব মার্কেটিং ডাটা অপারেশনস।  পাশাপাশি নিজেও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন।  গত বছরের তুলনায় এ বছর তার কাজের পরিমাণ বেড়েছে।  তিনি জানান, তাদের কাজের গ্রোথ ২০ শতাংশ।  কখনও কখনও বেশিও হচ্ছে।

 

মাগুরার আড়পাড়া গ্রামে বসে কাজ করেন অয়ন।  মোবাইল ইন্টারনেটই তার ভরসা।  গত বছর করোনা শুরু হলে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।  কাজ কমে তা নেমে গিয়েছিল ১০০ ডলারে।  এখন তা আবার মাসে ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে পৌঁছে গেছে।  ফাইভার ডট কমে কাজ করা অয়ন বললেন, নতুন নতুন কাজ আসতে শুরু করেছে।  ইমেজ প্রসেসিং, ওয়েবসাইট তৈরি, বিভিন্ন টুল তৈরির কাজ করছেন অয়ন।  নিজের বাড়িতে বাসে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করাকে বেশ ভালো বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় বসে মাসে এই পরিমাণ আয় করলে তা দিয়ে নিজের চলা ও পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হতো।  জানালেন, এভাবে কাজ এলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন।সৌজন্যে:বাংলা ট্রিবিউন

 

(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/৩ জুন ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ