বুধবার, এপ্রিল ১৭ ২০২৪ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল | ৭ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সহিংস গেম সেন্সরশিপের পরামর্শ আইসাকা-সিসিএ ফাউন্ডেশনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি ক্ষতিকর গেম নিষিদ্ধ ও এ সম্পর্কিত সেন্সরশিপ ব্যবস্থাসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার পরামর্শ তুলে ধরেছে তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইনফরমেশন সিস্টেম অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন (আইসাকা) ও বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)।

 

সংগঠন দুটি বলছে, ক্ষ‌তিকর দিক বি‌বেচনায় দেশে প্রচলিত স‌হিংস গেমগু‌লো বন্ধ করা যে‌তে পা‌রে, ত‌বে শুধু বন্ধ কর‌লেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হ‌বে না, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে সেরকম গল্প দিয়ে গেম তৈরির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উৎসাহ দিতে হবে। মানসম্পন্ন গেম তৈরিতে গুরুত্ব দিলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও নজরে পড়বে বাংলাদেশের গেম ইন্ডাস্ট্রি। একইসঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের গাইডলাইন তৈরির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সংগঠন দুটির নীতিনির্ধারকরা।

 

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার পরামর্শ তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে এ বিবৃতি দিয়েছেন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন ও সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ। এতে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেমসহ ক্ষতিকর অন্যান্য সহিংস গেম নিষিদ্ধ করার পক্ষে মতামত দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রত্যয়ের সঙ্গে দেশে ‘সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠন দুটি।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের খেয়াল রাখতে হবে আমাদের বাস্তব জীবন ও অনলাইন জীবনযাপনের মধ্যে ভারসাম্য যেন থাকে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট ব্যবহার যেন আসক্তিতে পরিণত হয়ে স্থায়ী রূপ না নেয় সেদিকে অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ নজরদারি প্রয়োজন। সন্তান কোন কাজে কতোক্ষণ সময় দেবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে অভিভাবককে। এসব নিয়ে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সারাদেশে ব্যাপকভাবে সাইবার সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়মিত রাখতে হবে।

 

সংগঠন দুটি বলছে, এখনকার তরুণদের খেলা প্রায় সব ভিডিও গেম সন্ত্রাসী ধরনের হয়ে থাকে। কীভাবে একজনকে মেরে একটি শহর দখল করা যায়,কীভাবে একটি জাতিকে শেষ করে দেওয়া যায়, তা তরুণেরা ভিডিও গেমস থেকে শিখছে। এর ফলে পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং তৈরির মাধ্যমে সহিংস ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এর থেকে পার পেতে হলে পরিবার ও রাষ্ট্রের বড় ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকরী উদ্যোগ নিয়ে ‘সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। অংশীজনদের নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব গেমের গল্প এমনভাবে তৈরি যা কৌশল এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো গেমারদের মস্তিষ্কে শিক্ষণীয় বার্তা দেয়। এ ধরনের গেম শিশুদের বুদ্ধিভিত্তিক মেধা বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনো কিছুই যেন আসক্তিতে পরিণত না হয়। গেমের গল্প তৈরির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং সার্বিকভাবে মানবিক মূল্যবোধের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অ্যাভাটার চরিত্রগুলোর নকশায় দেশীয় বা মহাদেশীয় ঐতিহ্যকে লালন করার সুযোগ রাখা যেতে পারে।

 

গেম তৈরি ও খেলার নিয়মের সঙ্গে বাস্তবতার মিল রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন ও স্থানীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী মহাদেশভিত্তিক গেমিং সংস্করণ তৈরিতে নির্মাতাদের একটি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা যায়। সিনেমাগুলো যেভাবে সেন্সর করা হয় এক্ষেত্রেও সেই বিষয়টি প্রয়োগ করলে ইতিবাচক ফল দেবে। এই নীতিমালা দেশ অথবা মহাদেশভিত্তিক হলে পৃথিবীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য ধরে রাখার ক্ষেত্রেও কাজে দেবে।

 

দেশের গেমের বাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নে আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সব কিছুরই ভালো ও মন্দ দুধরনের দিক আছে। তাই ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে বর্জন করে ইতিবাচক বিষয়গুলোর উন্নয়নে সবাইকে নজর দিতে হবে। মানসম্পন্ন গেম তৈরিতে গুরুত্ব দিলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও নজরে পড়বে বাংলাদেশের গেম ইন্ডাস্ট্রি। এটিকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে।

 

ইন্টারনেট ব্যবহারের গাইডলাইন:

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো গাইডলাইন এখনো হয়নি। উন্নত দেশগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ে গাইডলাইন আছে। বাংলাদেশেও এটি করতে হবে। ইন্টারনেটের অপব্যবহারের কারণে আমাদের সামাজিক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের মাধ্যমেই সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তোলা যায়। অনলাইনের কারণে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এখন যোগাযোগ খুবই কম হয়। সবাই নিজের মতো অনলাইনে ব্যস্ত থাকে। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছে ঠিকই কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মনোযোগ অনলাইনে। পরিবারের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক না থাকায় সন্তানেরা সহিংস উগ্রবাদের মতো জীবন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লেও সেই খবর বাবা-মার কাছে থাকছে না।

 

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।  বাংলাদেশেও পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল, পরে আবার চালু করা হয়।

চীনা প্রতিষ্ঠানের ২০১৯ সালে তৈরি করা যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও গেমটির মতোই। ২০১৯ সালে এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ডাউনলোড করা মোবাইল গেম। গেমটি অন্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুট থেকে পড়ে আসা ৫০ জন ও তার অধিক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে ফ্রি ফায়ারের উন্নত সংস্করণে কাজ চলছে যা ফ্রি ফায়ার ম্যাক্স নামে পরিচিত।

অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বন্দুক দিয়ে মসজিদে মুসলমানদের হত্যা এবং সেই দৃশ্য ফেসবুক লাইভের বিষয়টি অনেকেই পাবজির সঙ্গে তুলনা করেন।এসব গেম কোমলমতিদের ওপর মনস্তাত্বিক প্রভাব ফেলছে এবং তরুণদের আগ্রাসী করে তুলছে বলে মত দিয়েছেন মনোবিদরা।

 

(সাইবারবার্তা.কম/এমএ/৩১মে২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ