শনিবার, এপ্রিল ২০ ২০২৪ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল | ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

অনলাইনে এলএসডি কারবারি ১৪ গ্রুপের পেছনে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু তদন্তে আলোচনায় আসে ভয়ংকর মাদক ‘লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড’ তথা এলএসডি সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৪টি গ্রুপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে তৈরি হওয়া এসব গ্রুপ সারাদেশে এলএসডির বিস্তার ঘটিয়েছে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ।

 

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে রাজধানীর পল্টন থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সবাই শিক্ষার্থী।

 

মো. আ. আহাদ বলেন, গতকাল রাত থেকে রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলএসডি সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করি।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাইফুল ইসলাম সাইফ, এসএম মনওয়ার আকিব, নাজমুস সাকিব, নাজমুল ইসলাম ও বিএম সিরাজুস সালেকীন। এ সময় তাদের কাছ থেকে এ মাদকের ২ হাজার মাইক্রোগ্রাম এলএসডি, আইস ও গাঁজা জব্দ করা হয়।

 

গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনের বরাত দিয়ে ডিসি আহাদ বলেন, তারা সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা গত এক বছর ধরে এলএসডি সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তারা অনলাইনে তাদের এই ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা আসক্ত হয়ে তারা এলএসডি সেবন শুরু করে। তারা মূলত বিদেশ থেকে এলএসডি মাদক সংগ্রহ করে থাকে। রাজধানীতে ১৪টি গ্রুপ রয়েছে যারা এলএসডি বিক্রি করে আসছে। গ্রুপগুলো গত এক বছর ধরে এলএসডি বিক্রিও সেবনের সঙ্গে জড়িত।

 

১৪টির গ্রুপকে শনাক্ত করা গেছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি এরা সরাসরি ব্যবসা ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। অনলাইনের মাধ্যমে তারা এলএসডি মাদক নিয়ে আসত। তবে তাদের শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারের কাজ চলছে।

 

তারা কোনো দেশ থেকে এলএসডি নিয়ে আসতো জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, এরা মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এলএসডি নিয়ে আসতো। ১৯৩৮ সালে সুইজারল্যান্ডের একজন বিজ্ঞানী ওষুধ হিসেবে এলএসডি আবিষ্কার করেন। পরে এটি মাদক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

দেশে এলএসডি কিভাবে আসে এমন প্রশ্নের ডিসি মতিঝিল বলেন, কুরিয়ার ও ল্যাগেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে এলএসডি আসে।

 

তারা আরও জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ১৩ থেকে ১৪টি গ্রুপ দেশে এলএসডি আনার সঙ্গে জড়িত। আমরা এই গ্রুপের সকল সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করি।

 

দেশে এই গ্রুপগুলো কতদিন ধরে সক্রিয় জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা গত এক বছর ধরে এসএসডি মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া গত এক বছর ধরে তারা এলএসডি সেবন করছে বলে জানা গেছে। তবে গ্রুপের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করলে বুঝতে পারব তারা দেশে কতদিন ধরে সক্রিয়।

 

আট দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২৩ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শনাক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের লাশ।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র হাফিজুর রহমান ছিলেন একজন মূকাভিনয়শিল্পী। টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের ইমাম মুজিবুর রহমানের ছেলে হাফিজুর ১৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কেটে ফেলেন। তখন হাফিজুর মারা গেলেও তাঁর পরিচয় শনাক্ত হয়নি।

 

তার মৃত্যু তদন্ত করতে গত বুধবার ২৬ মে রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডি ও লালমাটিয়া এলাকা থেকে হাফিজের বন্ধুসহ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এলএসডির ২০০টি ব্লট (মেশানো কাগজ) উদ্ধার করা হয়। এরপরই আলোচনায় আসে এলএসডি।

 

(সাইবারবার্তা.কম/এমএ/৩০মে২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ