বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮ ২০২৪ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল | ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

এবার চট্টগ্রামে ৪৮ কোটি টাকায় সাইবার পুলিশ সেন্টার

সাইবারবার্তা ডেস্ক: সাইবার অপরাধের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। সদরদপ্তরের ল্যাবের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি এবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সিআইডির এই উদ্যোগে সহযোগিতা করবে দক্ষিণ কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)। ইতোমধ্যে সিআইডির সঙ্গে তাদের চুক্তিও হয়েছে।

 

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই ল্যাব চালু হলে এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ মামলার ডিজিটাল ফরেনসিক করা সম্ভব হবে। সাইবার অপরাধের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অনেক মামলার দ্রুত ফরেনসিক করা যাবে। এতে করে আদালতে মামলা জটও কমবে।

 

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক বিভাগ আরও আধুনিক করতে দীর্ঘদিন ধরে ‘কোইকা’র সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল, যা এখন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব অপরাধ হচ্ছে বিশেষ করে পর্ণগ্রাফি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট মামলার ডিজিটাল ফরেনসিক রিপোর্ট দ্রুত দেয়া যাবে। এতে মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা যাবে।’

 

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ল্যাব নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সিআইডি সদরদপ্তর ছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্থাপিত হবে এই ল্যাব। চট্টগ্রামে ১০তলা বিশিষ্ট ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার’ ও কক্সবাজারে ‘মিনি ল্যাব’ স্থাপন করা হবে। তবে চট্টগ্রামে আপাতত চারতলা ভবন নির্মাণ হবে।

ডিজিটাল ফরেনসিকের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের আলামত বা প্রমাণাদি বের করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

দেশে সাইবার নিরাপত্তা তৈরি করতে পুলিশে জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ডিজিটাল তদন্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ‘কোইকা’র এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৭২ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৪২ কোটি ৩৩ লাখ ২২ হাজার টাকা দিবে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। আর ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার।

 

জানা গেছে, দেশে ২০১২ সালে ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠার পর ফরেনসিক করার জন্য সিআইডির কাছে আসে মাত্র সাতটি মামলা। কিন্তু ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সেই সংখ্যা। ২০১৯ সালে আসে এক হাজার ৪২৩টি মামলা। পরের বছর এই সংখ্যা আরও বেড়ে এক হাজার ৮৮১টি মামলা আসে। কেন্দ্রীয় দপ্তরের ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নতুন করে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব চালু হলে প্রায় দ্বিগুণ মামলা ফরেনসিক করা সম্ভব হবে।

 

গত বছরের ৩ মে সিআইডি প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের দক্ষতা ও কার্যক্রমের উন্নয়নে কাজ করছেন। বিশেষ করে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগকে আরও উন্নত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।

 

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে দেশে অনলাইন কার্যক্রম বেড়েছে। ফলে গত বছর মামলার সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে নারী নির্যাতন ও পর্ণগ্রাফি আইনের মামলা বেশি।

 

গবেষণার তথ্যমতে, দেশে সাইবার অপরাধের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী মেয়েরা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০.৫২%, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩.৭১%, ৩০ থেকে ৪৫ বছর ১২.৭৭% এবং ৪৫ বছরের বেশি ৩%।

 

এছাড়াও অ্যাকাউন্ট জাল ও হ্যাক করে তথ্য চুরির মাধ্যমে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারীরা। দেশে ১৪.২৯ শতাংশ নারী গড়ে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। একই ধরনের অপরাধের শিকার হন ১২.৭৮ শতাংশ পুরুষ। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকিং/তথ্য চুরির শিকার নারী-পুরুষের অনুপাতে পুরুষের অবস্থান দ্বিগুণের চেয়ে বেশি।

 

নতুন এই ল্যাব চালু করতে সম্প্রতি মালিবাগে সিআইডি সদরদপ্তরে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কইকা) ও সিআইডির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে সিআইডির প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান ও ‘কোইকা’র কান্ট্রি প্রধান দো ইয়ং আহ্ উপস্থিত ছিলেন।

 

জানা গেছে, কোরিয়ান ডিজিটাল ফরেনসিক ও তদন্তের বিশেষজ্ঞ দল প্রশিক্ষণের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের পাশাপাশি, উন্নয়ন এবং বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এছাড়া প্রশিক্ষকদের কোরিয়াতেও প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাবেন। মে মাসে বিশেষজ্ঞ দলটির দেশে আসার কথা রয়েছে।

 

সিআইডির কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, ‘ঢাকার ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবটি কোইকা’র প্রথম প্রজেক্টের মাধ্যমে শুরু হয়। তারা আগ্রহী হয়ে দ্বিতীয় প্রজেক্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে ঢাকার ল্যাবের পরিধি বাড়ানোর জন্য যন্ত্রপাতি দেবে। আর চট্টগ্রামে হবে ডিজিটাল সাইবার ফরেনসিকের কাজ। কক্সবাজারে ছোট আকারে স্টুডিও ফরেনসিক ল্যাব তৈরি করা হবে। সেখানে প্রাথমিক কাজগুলো হবে। এতে আগের তুলনায় সিআইডির সক্ষমতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে ফরেনসিকের জন্য যেসব মামলা ঝুলে আছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং মামলার জট আরও কমবে।’ সৌজন্যে:  ঢাকাটাইমস

 

(সাইবারবার্তা.কম/এমআর/২৯মার্চ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ