নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: একক নয়, গ্লোবাল ভিলেজে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেই বিকশিত হবে ডিজিটাল অর্থনীতি। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তির সুরক্ষা। সঙ্গে আছে ব্যবসায় নিয়োজিত বিদ্যমান দেশগুলোর মধ্যে সমান্তরাল নীতি-আইন ও অবকাঠামো এবং পরিবর্তীত প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সামনের কাতারে থাকতে আলোচিত এসব বিষয় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে অংশীজনদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল।
ওয়াশিংটন ডিসি’র হিলটন গার্ডেন ইনে ১৪-১৯ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইউএস-বাংলাদেশ আইসিটি কনসালটেশন শীর্ষক এই বৈঠকে আইসিটি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের আইসিটি ও ই কমার্স খাতের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রম তুলে ধরেন বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল।
দেশটির কমার্সিয়াল ল’ ডিপার্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণে এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের (বিআইজিএফ) উদ্যোগে অংশীজনদের নিয়ে গঠিত ৯ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিআইজিএফ সভাপতি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু।
পাঁচ দিনের এই বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে জানিয়ে প্রতিনিধি দলের প্রধান হাসানুল হক বলেছেন, ইন্টারনেটে সার্বোভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী কী ধরনের উদ্যোগ এখন আমাদের নেয়া দরকার সে বিষয়ে বৈঠক থেকে আমরা অংশীজনদের ভূমিকা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছি। ইন্টারনেট তথা প্রযুক্তি সার্বজনীন ব্যবহার এর মাধ্যমে কেউ ক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিবিধান যেমন জরুরী, তেমনি জাতি-রাষ্ট্রের নীতিগত ভিন্নতার মাধ্যমে এই গ্লোবাল ভিলেজের অধিবাসীদের নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে তাদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতেও আমরা এই বৈঠকের আলোকে একটি কিছু দিক-নির্দেশনা পেয়েছি।
প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক, বিটিআরসি’র মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ নাসিম, বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সিইও এএইচ এম বজলুর রহমান, ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, বাংলাদেশ কম্পউটার কাউন্সিলের পরিচালক তারেক এম বরকতুল্লাহ, বিজিডি ই-গভ সার্টের সিনিয়র টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট তৌহিদুর রহমান, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ক্লাউড অপরাসেন ম্যানেজার ইফতেখার আহমেদ তুরাজ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সদস্য আফরোজা হক।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডেটা প্রাইভেসি অ্যাক্ট, ক্রস বার্ডার ই-কমার্স ট্রেড পলিসি, ন্যাশনাল সিকিউরিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়, সুরক্ষার আগাম প্রযুক্তি, বিভিন্ন দেশের সিকিউরিটি র্যাংকিং, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে ডিজিটাল ব্যবসায়ের পাশাপশি ডিজিটাল সুরক্ষায় আন্তঃদেশীয় চুক্তি; সর্বোপরি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি, আইন, অবকাঠামো ও প্রাযুক্তিক সুরক্ষার বিষয়গুলো উঠে আসে বৈঠকে।
গত ১৫ নভেম্বর, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের চেয়ারপারসন হাসানুল ইক ইনুর সভাপতিত্বে সফরের প্রথম বৈঠকে আলোচক ছিলেন ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের সিএলডিপি বিভাগের সিনিয়র অ্যাটর্নি অ্যাডভাইজার জো গাতিসু (Joe Gattuso) মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের ডেপুটি জেনারেল কাউন্সিল জার্মি লিচ (Jeremy Licht); দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেবা রিজুদ্দিন Zeba Reyazuddin এবং নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের জন্য নিযুক্ত পরিচালক স্কট আরবম (Scott Urbom)।
অপর এক বৈঠকে ডেটা গভর্নেন্স এর প্রাইভেসি অ্যাপ্রোচ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন আইন ও বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সদস্য সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মাদ শহীদুল হক। এই উপস্থাপনার ওপর আলোচনায় অংশ নেন মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের ডিজিটাল সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির কর্মকর্তা ক্রিস্টিনা জেনসি (Krysten Jenci) এবং আইসিটি সার্ভিস অ্যান্ড ডিজিটাল ট্রেডের পরিচালক জিলিয়ান ডিলুনা (Jillian DeLuna)।
বৈঠকের দ্বিতীয় দিন ডাটা প্রাইভেসিতে বেসরকারি অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনা করেন Carnegie Endowment for International Peace এর সিনিয়র ফেলো মাইকেল নেলসন (Michael Nelson) ও Information Technology and Innovation Foundation এর সহযোগী পরিচালক নিজেল কোরি (Nigel Cory)।
এদিনে বৈঠকের পর ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্যোগে ডাটা প্রশাসন ও সুরক্ষা কৌশল বিষয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক ছাড়াও ইউএস ফেডারেল কমিশনের সঙ্গে একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তৃতীয় দিন আলোচনা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা/ক্লাউড কম্পিউটিং এবং সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো জসুয়া পি মেলজার (Joshua P. Meltzer)। সঞ্চালনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বিভাগের প্রধান হিলারি সাদলার (Hilary Sadler)।
শেষ দিন আলোকপাত করা হয় এনআইএসটি সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেম ওয়ার্ক নিয়ে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হেলথকেয়ার, সাইবার সুরক্ষা, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং বিচার বিভাগের ডিজিটাল অবকাঠামোর নিরাপত্তা দেখভাল করা অলাভজন প্রতিষ্ঠান মাইটার (Mitre) করপোরেশনের ভার্জিনিয়ার সদর দপ্তর পরিদর্শন করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি।
এসব বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে সাইবার সিকিউরিটি এবং ট্রেড পলিসি নিয়ে কাজ করছে এমন বেশ কিছু সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গুগল,ফেসবুক, ভিসা, মাস্টার কার্ড সহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পলিসি ডিসকাশন করেছেন বলে জানিয়েছেন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।
বৈঠক শেষে তিনি জানিয়েছেন, সাইবার সিকিউরিটি, ডাটা প্রটেকশন, ক্রসবর্ডার ট্রেড সহ ইউএসএ-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন পলিসি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের আইসিটি অ্যাডভাইজার সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় যুগোপযোগী পলিসি প্রণয়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে একত্রে কাজ করার ব্যাপারে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
অপরদিকে ইন্টারনেট গর্ভনেন্স ফোরামের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু বলেছেন, বৈঠকে আমরা দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামোর নিরাত্তা এবং তথ্য সুরক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামীতে তথ্য যে ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে তা আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। আশা করি, এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের ক্রসবর্ডার ডিজিটাল কমার্স এবং নিজস্ব সংস্কৃতিতে বৈশ্বিক ডিজিটাল আন্ত সম্পর্ক উন্নয়নের পথকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবো।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/১৯ নভেম্বর ২০২১)