শুক্রবার, মার্চ ১৪ ২০২৫ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল | ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরে ইন্টেলিজেন্ট শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত

সাইবারবার্তা ডেস্ক: ‘এমব্রেসিং দ্য নিউ এরা অব ইন্টেলিজেন্ট এডুকেশন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে লাইভ স্ট্রিমের মাধ্যমে এশিয়া-প্যাসিফিক হায়ার এডুকেশন ইনোভেশন ফোরামের আয়োজন করে হুয়াওয়ে। ফোরামে ইউনেস্কো আইসিএইচইআই, এনইউএস, ওপেন ইউনিভার্সিটি, থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটি, ন্যশনাল ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া ও পিডব্লিউসি এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সাড়ে চারশ’ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিত অতিথিগণ স্মার্ট ক্যম্পাস, অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি ও স্মার্ট ক্লাসরুমের ওপর গুরুত্ব প্রদান করে আইসিটি শিক্ষার বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি, বৈশ্বিক মহামারি পরবর্তী যুগে তথ্যভিত্তিক শিক্ষার (এডুকেশন ইনফরম্যাটাইজেশন) চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়েও ফোরামে আলোচনা করা হয়।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ের এশিয়া প্যাসিফিক এন্টারপ্রাইজ বিজনেস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে উচ্চশিক্ষায় আইসিটির বিকাশে হুয়াওয়ের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যতে স্মার্ট উচ্চশিক্ষা নিয়ে হুয়াওয়ের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। হুয়াওয়ে এডুকেশন আইসিটি সল্যুশনের মাধ্যমে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ৩শ’রও বেশি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সেবা প্রদান করেছে। একইসাথে, প্রতিষ্ঠানটি ২২৪টি স্কুলে আইসিটি অ্যাকাডেমি নির্মাণ করেছে ও ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষিত করে তুলেছে। বিভিন্ন দেশে চার হাজার তিনশ’রও বেশি আইসিটি প্রফেশনালদের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে হুয়াওয়ে এবং শিক্ষাখাতে গ্রাহকদের সেবাদানে প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মেধাবীদের গড়ে তুলতে কাজ করে যাবে।

 

ইউনেস্কো আইসিএইচইআই’র সিনিয়র স্পেশালিশট অধ্যাপক ঝাও জিয়ানহুয়া শিক্ষার নতুন ধারা সম্পর্কে তাঁর চিন্তাধারা তুলে ধরেন। তাঁর মতে, বর্তমানে শিক্ষাখাত নতুন আকার লাভ করছে পাঁচটি প্রধান ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্বারা। প্রযুক্তিগুলো হলো: এআর, পার্সোনালাইজড হাইব্রিড লার্নিং, গ্যামিফিকেশন, এআই ও আইওটি। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে পাঁচটি ধারা শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হবে; সেগুলো হলো: দক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, পার্সোনালাইজড ডিসট্যান্ট এডুকেশন, স্বয়ংক্রিয় ডাটা প্রক্রিয়াকরণ ও পার্সোনালাইজড কোলারোভেটিভ এডুকেশন।

 

গত ১৮ মাসে বৈশ্বিক মহামারি বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অসংখ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি। ফোরামের প্যানেল অধিবেশন চলাকালীন প্যানেল আলোচকগণ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে আইসিটি ব্যবহার করে মহামারির প্রভাবের সাথে ভারসাম্য রেখে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন সে ব্যপারে আলোকপাত করেন। তারা ভবিষ্যতে শিক্ষাদানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা মডেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে ডিজিটাল ব্যবস্থায় রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাবে তা নিয়ে আলোচনা করেন।

 

আইসিএইচইআই’র (ইউনেস্কো) সিনিয়র স্পেশালিস্ট ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির সেন্টার ফর হায়ার এডুকেশন রিসার্চের ডেপুটি ডিরেক্টর অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ঝাও বলেন, সম্প্রতি আইসিএইচইআই ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অনলাইন এডুকেশন (আইআইওই)’ শীর্ষক উচ্চশিক্ষার শিক্ষকদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করেছে। আইআইওই- এর অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার রূপান্তরের সাথে মানিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আইসিটি সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের টিচিং ইনোভেশন অ্যান্ড কোয়ালিটি’র ভাইস প্রভোস্ট, সহযোগী অধ্যাপক এরলে লিম বলেন, শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিখছে ও দক্ষতা অর্জন করছে তা মূল্যায়নে প্রযুক্তি আমাদের সুবিধাজনক কম্পিউটার-ভিত্তিক মানানসই শিক্ষাদান ও শেখার পদ্ধতি উন্নয়নে সহায়তা করবে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাথমিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে থাম্মাসাত ইউনিভার্সিটির আইটি’র ভাইস রেকটর সহযোগী অধ্যাপক জিরাপন সানকফো জোর দিয়ে বলেন, অনলাইন শিক্ষায় উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য সঠিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা প্রথম কাজ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু দেশে নিয়ম ও বিধিমালা এখনও প্রতিকূলতার সৃষ্টি করছে।

 

মূল্যায়ন ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে হংকং -এর ওপেন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অ্যান্ড সাপোর্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রিকি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষিতে পরীক্ষা একটি সনাতন পদ্ধতি। সুবিধাজনক মনে হলেও, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে পরীক্ষা নেয়াই সর্বোত্তম পদ্ধতি নয়, বরং এখন বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি রয়েছে ডেটা ইনফরমেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়ন করা যায়। উচ্চশিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের প্রধান দিকগুলো তুলে ধরে পিডব্লিউসি স্ট্র্যাটেজিঅ্যান্ড’র পরিচালক জোসেফ হো বলেন যে, বর্তমানে বিদ্যমান সেটআপ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষাদানের বাইরেও আরও বেশি কিছু করতে অনলাইন সম্পৃক্ততায় আরও প্রযুক্তি সমন্বয়ের ব্যাপারেও জানতে হবে। মূল ব্যাপার হচ্ছে, যোগাযোগ বজায় রাখা এবং শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত রাখা।

 

একইভাবে ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যালামনাইয়ের ডেপুটি ডিন ও আইএসটি ফ্যাকাল্টি সহযোগী অধ্যাপক ড. নূরহিজাম সাফি বলেন, উচ্চশিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করা।

 

বর্তমানে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় একই ধরণের সমস্যা মোকাবিলা করছে, যেমন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাসের অংশগ্রহণের সমস্যা, শিক্ষা উপকরণের অপর্যাপ্ততা, বিক্ষিপ্তভাবে থাকা স্কুল সেবার জটিল ব্যবস্থাপনা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব। তদুপরি, এখন শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের এই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করা প্রাধান্য পেয়েছে। উক্ত ফোরামে হুয়াওয়ে অ্যাপাক’র শি রি উচ্চশিক্ষার জন্য ডিজাইন করা হুয়াওয়ের স্মার্ট ক্যম্পাস সল্যুশন ও স্মার্ট ক্লাসরুম সল্যুশন সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। হুয়াওয়ে শিল্পখাতে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারিত্ব করছে এবং ইটুই স্মার্ট এডুকেশন সল্যুশন প্রদানে হুয়াওয়ে এর ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এই ইটুই স্মার্ট এডুকেশন সল্যুশন দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাহকদের স্মার্ট ডিভাইস, কনভার্জড নেটওয়ার্ক ও শিক্ষাদান এবং ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজি অ্যান্ড ডিজাইন (এসইউটিডি) এর সিনিয়র লেকচারার ড. তিও তি হুই হুয়াওয়ে ক্লাউডের সাথে এসইউটিডির সহযোগিতামূলক যৌথ প্রকল্প সবার সামনে তুলে ধরেন। নির্দিষ্টভাবে তিনি স্মার্ট হাইব্রিড লার্নিং সল্যুশনের ওপরে আলোচনা করেন। স্মার্ট হাইব্রিড লার্নিং সল্যুশনে আছে ক্লাউড নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতি, স্মার্ট হাইব্রিড লেসন, অনলাইন পরীক্ষা, এআই প্রোকটোরিং, ভার্চুয়াল কম্পিউটার ল্যাবরেটরি এবং ভিডিআই। এটি অনলাইন ও অফলাইন শিক্ষাদানে হুয়াওয়ে আইডিয়া হাব ব্যবহার করে।

 

একটি দেশের জন্য উদ্ভাবনী প্রতিভা গড়ে তোলার, গবেষণায় সাফল্য অর্জন করার এবং অর্থনীতিকে পরিবর্তন করার মূল ভিত্তি উচ্চশিক্ষা। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে হুয়াওয়ে এর উদ্ভাবনী ধারা অব্যাহত রাখবে এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলসহ বিশ্বজুড়ে সহজতর, নিরাপদ ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন পণ্য সেবাদান করে যাবে। পাশাপাশি, শিক্ষাখাত ও শেখার ক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তরে সহায়তা করতে নিজেদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাবে হুয়াওয়ে।

 

(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/১৫ জুন ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ