মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৪ ২০২৫ | ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

জৌনপুরী পীর সা‌হে‌বের আলোচনা: রাসুলের চরিত্র মুসলমানদের মধ্যে থাকলে ওয়াজ লাগবে না

:: নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা.কম ::

মুসলমানদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জীব‌নের প্রথম ৪০ বছর ধরে মানুষকে নিজের চরিত্রের গুন দেখিয়ে গেছেন। এর মাধ্যমে বিশ্বাসী হিসেবে মানুষের কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুয়ত পেয়েছেন। নবীজীর চরিত্র দেখে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। রাসুলের চরিত্রের গুণ আমাদের মাঝে থাকলে বিভিন্ন স্থানে যে ওয়াজ-নসিহত আয়োজন হয়, এর প্রয়োজন হবে না। অথচ দুঃখজনক, আজ মুসলমানদের মধ্যে কাফেরদের দৃষ্টিভঙ্গি এসে গেছে।

 

ভারত থেকে আগত মাওলানা হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী জৌনপুরী পীর সা‌হে‌বের মাহফিলে তার বক্তব্যের অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় রবিবার এসব বলেছেন মাওলানা এএমএম নুরুল আবছার। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পূর্ব চরপাতায় আবদুল হক কাজী বাড়ির সামনে রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এই মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গোলাম মোস্তফা (সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক প্রধান সহকারী)।

 

মাওলানা হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর বংশধর। পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তারা প্রতি বছর বাংলাদেশে আসেন মানুষের মধ্যে ইসলামের চেতনা প্রচারের উদ্দেশ্যে। তিনি মাহফিলে উর্দু ভাষায় বক্তব্য দেন। বাংলাভাষীদের জন্য বক্তব্যের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করেন দাগনভূঞা আজিজিয়া সিনিয়র মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা এএমএম নুরুল আবছার।

 

মাহফিলে সুরা আ’লার ১৪-১৫ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় আলোচনা করেন হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে সফলতার মানদণ্ড তিনটি- আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা, আল্লাহর জিকির করা এবং নামাজ কায়েম করা। বর্তমানে দু‌নিয়ায় তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত আছে। এগুলো হলো- কাফেরদের দৃষ্টিভঙ্গি, রাহেবদের দৃষ্টিভঙ্গি (বৈরাগ্য জীবন) এবং ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি। তৃতীয়টি তথা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি হলো- দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

 

আলোচনায় নবীজীর সময়ের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী বলেন, এক ব্যক্তি নবীজীর কাছে এলেন এবং তার শরীর ছিল একেবারে শুকনো-জির্ণশীর্ণ। নবীজীর সঙ্গে আলাপে তিনি জানালেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন আল্লাহ যেন তাকে তার কৃতকর্মের শাস্তিগুলো পরকালে না দিয়ে দুনিয়ায় দিয়ে দেন। এ কারণে তার শরীরের এ পরিস্থিতি দেখে নবীজী বলেছেন- না, এভাবে দোয়া করা যাবে না। দোয়া করার জন্য তাকে শিখিয়ে দিলেন সুরা বাকারার ২০১ নম্বর আয়াত থেকে (‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দাও এবং আখেরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা কর।’)।

মুসলমানদের বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী বলেন, আজ বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় চোর ধরা পড়েছে, তার পরিচয় মুসলমান, ডাকাত ধরা পড়েছে, তার পরিচয় মুসলমান। দুঃখজনক বিষয় হলো আজ মুসলমানদের মধ্যে কাফিরদের দৃষ্টিভঙ্গি এসে গেছে, হিংসা-বিদ্বেষ এসে গেছে। এসব থেকে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে আমাদের।

 

জামায়াতে নামাজের গুরুত্বপারোপ করে জৌনপুরি হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী বলেন, এর সুফল হলো যখন একসঙ্গে নামাজ পড়া হয় তখন অনেক মানুষের মধ্যে আল্লাহ যার নামাজ পছন্দ করেন তার উসিলায় অন্যদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে নামাজ কবুল করে নেন।

 

আলোচনার শুরুতে মাহফিলে তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন হাসান ইব্রাহিম ছিদ্দিকী। এমন আয়োজনের জন্য আয়োজকদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। আলোচনা শেষে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের তাওবা করানো হয়।

(সাইবারবার্তা.কম/১২জানুয়ারি’২৫/০৭৫৭)   

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ