নিজস্ব প্রতিবেদক,সাইবারবার্তা: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নমুনা দিতে গিয়ে ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন নম্বরে এসএমএস দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হচ্ছে। ওই নম্বর থেকে ফেরত এসএমএস না এলে ল্যাবটিতে করোনার নমুনা নেওয়া হচ্ছে না।
ফলে নমুনা দিতে গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে অনেককে। লকডাউনে দোকানপাট ও বাজার বন্ধ থাকায় কম্পিউটারের দোকানও বন্ধ। ফলে অন্যের সাহায্যে রেজিস্ট্রেশনও করাতে পারছেন না লেখাপড়া না জানা সাধারণ মানুষ। এ কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। অথচ এ ধরনের নিয়ম আগে ছিল না।
তানোরের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম (৩৫) জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকছিলেন। তবে বুধবার কিছুটা শ্বাসকষ্ট হয়। নমুনা দিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ আরটি-পিসিআর ল্যাবে শনিবার আসেন শরিফুল। কিন্তু নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে গেলে তাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আসতে বলা হয়। শরিফুল দুই ঘণ্টা চেষ্টা করেও নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে এসএমএস দিয়ে রেজিস্ট্র্রেশন করতে পারেননি। ফেরত এসএমএসও তিনি পাননি। বাজারে কম্পিউটারের কোনো দোকান খোলা না থাকায় তিনি কারও সাহায্যও নিতে পারেননি। রোববার নগরীর সাহেব বাজারে এন্টিজেন র্যাপিড টেস্ট ক্যাম্পে নমুনা দিলে তার নেগেটিভ আসে।
রাজশাহীর মেহেরচন্ডি বুথপাড়ার অটোচালক আমিনুল ইসলামের জ্বর কয়েক দিন ধরে। বাড়িতেই তিনি জ্বর সর্দির ওষুধ নিচ্ছেন চিকিৎসকের পরামর্শে। করোনা পরীক্ষা করাননি। তবে পরিবারের চাপে তিনি বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল ল্যাবে নমুনা দিতে গেলে তাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমিনুল বলেন, আমি পড়ালেখা তেমন জানি না। কি লিখে কোথায় এসএমএস দিতে হবে তাও জানি না। লকডাউনের কারণে সারা শহরের দোকানপাট বন্ধ। একটি দোকানও খোলা নেই। শেষ পর্যন্ত তিনিও নগরীর রেলগেটে গিয়ে এন্টিজেন র্যাপিড টেস্ট করিয়ে বাড়ি ফেরেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন সন্দেহভাজনদের ক্ষেত্রে করোনার টেস্ট করাতে সমস্যা হচ্ছে না। জানা গেছে, যারা করোনার উপসর্গ নিয়ে করোনা ইউনিটে ভর্তি হচ্ছেন তাদের নমুনা হাসপাতাল থেকেই নেওয়া হচ্ছে। নমুনা হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলাফল দিনের শেষে ল্যাব থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগী অথবা স্বজনের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে উপসর্গ নিয়ে অথবা সন্দেহবশত যারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নমুনা দিতে যাচ্ছেন তাদের নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশনে করে ফেরত এসএমএস নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। অথচ এ ধরনের নিয়ম আগে ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর রানীনগর এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। তবে অনেকে আরও নিশ্চিত হতে আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা দিতে আগ্রহী। কিন্তু রাজশাহীতে তারা সহজে নমুনা দিতে পারছেন না। রেজিস্ট্রেশন বিড়ম্বনায় তারা করোনা টেস্ট করাতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, ল্যাবে গেলে বলা হচ্ছে এসএমএস করে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। যাদের স্মার্টফোন নেই, আবার যাদের পড়াশোনাও নেই তারা এসএমএস করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে এ নিয়ম চালু করায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা গেছে, গত বছর করোনার শুরুতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ল্যাবে নমুনা দেওয়ার সময় রেজিস্ট্রেশনের জন্য হেল্প ডেস্ক ছিল। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা রেজিস্ট্রেশনের কাজটি করে দিতেন। এখন ল্যাবের নমুনা কালেকশন সেন্টার থেকে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল ফোর নম্বর ধরিয়ে দিয়ে ফেরত এসএমএস নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। ফলে নতুন বিড়ম্বনায় পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সাবেরা গুল নাহার বলেন, রাজশাহীতে নমুনা দিতে আসা মানুষের অস্বাভাবিক চাপ থাকায় আমরা ল্যাবের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন চিকিৎসকের ফোন নম্বরে এসএমএস দিতে বলছি। সেখান থেকে ফেরত এসএমএস এলে সেটিকেই আমরা রেজিস্ট্রেশন বলছি। যাদের কাছে ফেরত বার্তা আসবে সেই বার্তাটি কালেকশন বুথে দেখালে তাদের নমুনা নেওয়া হবে। এসএমএস করতে কারও অসুবিধা হলে বা করতে না জানলে কালেকশন বুথের কর্মীরা সাহায্য করছেন বলেও তিনি দাবি করেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, এমন নিয়ম নেই সরকারের বা স্বাস্থ্য বিভাগের। কালেকশন বুথে গিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে নিজের মোবাইল ফোন নম্বর লিখে নমুনা দেবেন। নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে ফেরত এসএমএস পাওয়ার পর নমুনা নেওয়ার কোনো কথা তিনি জানেন না। এ ধরনের নিয়ম স্বাস্থ্য বিভাগে চালু নেই।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২৮ জুন ২০২১)