নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চালু করা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া অনলাইন কোরবানির পশুর হাটে’ বিক্রিও বেড়েছে। গত ৯ দিনে অনলাইনে ১ হাজার ১৭টি কোরবানির পশু বিক্রি করেছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। ৫ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ১০ কোটি ৮২ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৩ টাকার পশু বিক্রি হয়েছে।
বেচাকেনায় খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে প্রশাসন সবাইকে অনলাইনে গরু কেনার আহ্বান জানায়। এ কাজে সহযোগিতা করছেন জেলা ও উপজেলার প্রাণিসম্পদ কার্যালয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও তত্ত্বাবধানে ফেসবুকে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া অনলাইন কোরবানির পশুর হাট’–এর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে অনলাইন পশুর হাট আছে। ৫ জুলাই এর কার্যক্রম চালু করে জেলা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত ১২ হাজার সদস্য ফেসবুক পেজটিতে যুক্ত হয়েছেন। পশু বিক্রিসংক্রান্ত ৪২ হাজার ৮৩২টি পোস্ট পড়েছে এখানে। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগও পশু বিক্রির এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা আনতে সহায়তা করছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, ‘আট দিন আগে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রিন্স ডেইরি ফার্মের খামার সম্পর্কে জানতে পারি। অনেক গরুর ছবি ও ভিডিও দেখতে পাই। তাই কৌতূহলী হয়ে সেখানে ছুটে যাই। দামদর করে পছন্দ হওয়ায় ভারতীয় একটি ষাঁড় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় কিনেছি।’
সদর উপজেলার বুধল গ্রামের খামারি ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার কাছে মাঝারি গরুর সংখ্যা বেশি। ৩০টি গরু ছিল। ১৬টি গরু বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা পেয়েছি। সর্বনিম্ন ৪০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকার গরু আছে।’
জেলা শহরের গোকর্ণঘাটের প্রিন্স ডেইরি ফার্ম পরিচালনাকারী ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘অনলাইনে “বিজ্ঞাপন” দেখে অনেকে আসছেন। পছন্দ হলে দামদর করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ টাকা পরিশোধ করে রেখেও যাচ্ছেন। দূরের লোকজন গরু দেখতে আসতে পারছেন না বলে ভিডিও কলে গরু দেখানো হয়। পছন্দ হলে অনলাইনে গরুর ওজন মেপেও দেখাই। এখন পর্যন্ত ফার্মের ৫৫টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি।’
ওই ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যায়, খামারমালিকদের পাশাপাশি একটি-দুটি করে গরু পালনকারী ব্যক্তিরাও এখানে গরুর ছবি দিয়ে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। কেউ কেউ দামও লিখে দিচ্ছেন। কেউ আবার ফোন নম্বর দিয়ে বলে রেখেছেন, দাম আলোচনা সাপেক্ষে। আবার অনেক খামারমালিক ও গরু পালনকারী একাধিক গরুর ছবি ও ভিডিও দিয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাইভ ওজনে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে গরু বিক্রির কথা বলছেন। আকারভেদে গরুর দামও নির্ভর করবে বলে উল্লেখ করে দেওয়া আছে। ওই পেজে গরুর পাশাপাশি মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বিক্রির বিজ্ঞাপনও আছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় তালিকাভুক্ত ও তালিকার বাইরে খামারে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৭৭। এর মধ্যে জেলায় তালিকাভুক্ত ১২ হাজার ৩৭০টি খামারে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২৮টি গবাদিপশু মজুত আছে। এ বছর জেলায় কোরবানির চাহিদাকৃত পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬২। এ ছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে একটি-দুটি করে গবাদিপশু পালন করা অনেক ব্যক্তি আছেন, যাঁরা কোরবানির আগে বিক্রি করেন, তাঁরা এই গণনার বাইরে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, করোনাকালে হাটে না গিয়ে অনলাইনে খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কোরবানির পশু কেনার জন্য মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এতে সবাই নিরাপদ থাকতে পারবেন।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/১৪ জুলাই ২০২১)