বুধবার, এপ্রিল ৯ ২০২৫ | ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বসন্তকাল | ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংকগুলো এখনও নারী উদ্যোক্তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করছে না: নাসরিন ফাতেমা আউয়াল 

:: নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা.কম :: ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাংকগুলো এখনও সেভাবে এগিয়ে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় নারী উদ্যোক্তা নাসরিন ফাতেমা আউয়াল। নারী উদ্যোক্তাদের উঠে আসতে সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংকগুলোসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।  

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে তিন দিনের মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন ওয়েব (উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। এ উপলক্ষে সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর সোনারগাঁও রোডে অ্যাংকর টাওয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন ওয়েব সভাপতি ও মাল্টিমোড গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ফাতেমা। 

রাজধানীর গুলশান শ্যুটিং ক্লাবে ৬ থেকে ৮ মার্চ এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সারাদেশের দেড়  শতাধিক উদ্যোক্তা অংশ নেবেন। এর মধ্যে কয়েকজন বিদেশি উদ্যোক্তাও থাকবেন।

ওয়েব সভাপতি বলেন, ‘সব ব্যাংক এখনও নারী উদ্যোক্তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করছে না, কিছু কিছু ব্যাংক করছে। ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্যে বলব আপনারা নারীদেরকে ক্ষুদ্র ঋণ দেন, যা ফেরত পাচ্ছেন। নারীরা খুব বড় অংকের ঋণ নেন না। অথচ বড় ব্যবসায়ী হাউজগুলো এতো বড় অংকের ঋণ নেন গুণতেও পারবো না, তাদের রিশিডিউল বার বার করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো যেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উঠে আসতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। ক্ষুদ্র ঋণ যারা নিচ্ছেন, তারা আস্তে আস্তে একটু বড় ঋণ নেবেন, এতে ব্যাংকও উপকৃত হবে।’

‘ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়, কিছুটা না; কারো প্রতি নমনীয়, কারো প্রতি না, সেই জিনিসটা ব্যাংকের দূর করতে হবে।’ বলেন তিনি।  

নাসরিন ফাতেমা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তারা ২০২০ সালে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করলেও করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েন। সব পণ্য পড়ে ছিল। তাদের মূলধন আটকে যায়। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। অনেকে আবার নতুন করে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। অল্প পুঁজির উদ্যোক্তারা এখন পথে বসে গেছেন। নিঃস্ব হয়েছেন ৮০ শতাংশ নারী ব্যবসায়ী। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অনেক নারী উদ্যোক্তা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। 

তিন দিনের মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি বাহারি হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, নকশা করা কাপড়, নান্দনিক গহনা ও নানা ধরনের সৃজনশীল পণ্য প্রদর্শিত হবে। পাশাপাশি ৩০০ শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মেলা চলাকালে নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের তিনশত শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়। 

এই মেলার মাধ্যমে তার সিলভার জুবলি উদযাপন করতে যাচ্ছে ওয়েব। গত ২৫ বছরে সংগঠনটি দেশের হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। 

জুলাই কর্নার: সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের মেলার বিশেষ আকর্ষণ হলো জুলাই কর্নার, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া নারীদের সম্মানে তৈরি করা হয়েছে। এই কর্নারের মাধ্যমে সেইসব নারীদের সাহসিকতা ও অবদানকে তুলে ধরা হবে।

ওয়েব সভাপতি বলেন, এই মেলা নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন এবং উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি শুধু নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্যই নয় বরং সমাজে নারীদের অবদানকে আরও গতিশীল করবে। 

সংবাদ সম্মেলনে মেলার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শেখ আবদুল বাকির বক্তব্য দেন। এছাড়াও ওয়েবের অন্যান্য নারী উদ্যোক্তা ও সংগঠকরা এতে উপস্থিত ছিলেন।  

 

নারী দিবস: আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ। ১৮৫৭ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারসহ তাদের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন করলে তারা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। ১৯১০ সালে এ দিনটিকে নারী দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব করেন জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন। 

১৯১১ সালে প্রথম বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে দিনটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সরকারিভাবে নারী দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশও ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করে থাকে এবং দিনটিতে নারী সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। 

ওয়েব: নাসরিন ফাতেমা আউয়ালের উদ্যোগে ২০০০ সালে দেশের প্রথম নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় উইমেন এন্টারপ্রেনার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব)। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য রাজধানীর কলাবাগানে গড়ে তোলেন ‘সেঁউতি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। সেঁউতিতে সারাদেশের নারী উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী কোনো কমিশন ছাড়াই বিক্রি করতে পারেন। 

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ