নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: বিশ্বের প্রথম ‘বিটকয়েন সিটি’ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে এল সালভাদর। সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশটিতে বিনিয়োগ বাড়াতে বাজির ঘোড়া হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রযুক্তিকেই বিবেচনা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট; তার ঘোষিত ‘বিটকয়েন সিটি’র প্রাথমিক তহবিল আসবে বিটকয়েন বন্ডের মাধ্যমে।
সম্প্রতি বিটকয়েন নিয়ে প্রচারণা চালাতে এল সালভাদরে ‘বিটকয়েন সপ্তাহ’ পালিত হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে চলা প্রচারণার শেষ দিনে প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ‘বিটকয়েন সিটি’তে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ছাড়া আর কোনো কর থাকবে না, শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে আগ্নেগিরির ভূতাপিত শক্তি। দেশটির পূর্বাঞ্চলে ওই প্রস্তাবিত শহরটি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
“এখানে বিনিয়োগ করুন আর ইচ্ছে মতো টাকা কামান। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটা শহর হবে যার প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেবে একটি আগ্নেয়গিরি”– বিটকয়েন সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেন বুকেলে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ভ্যাট থেকে পাওয়া করের অর্ধেক নতুন শহর নির্মাণের জন্য বন্ডের তহবিলের যোগান দেবে, বাকি অর্ধেক যাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো অন্যান্য কাজে। পুরো প্রকল্প সম্পাদনে তিন লাখ বিটকয়েন খরচ হবে বলে অনুমান করছেন বুকেলে।
সেপ্টেম্বর মাসে এল সালভাদরে ‘অনুমোদিত মুদ্রা’ হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছে বিটকয়েনের। দেশটিতে বিটকয়েন প্রচলনের পেছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে। রয়টার্স বলছে, এল সালভাদরের নাগরিকদের মধ্যে বুকেলের জনপ্রিয়তা থাকলেও বিটকয়েন প্রশ্নে সন্দিহান অনেকেই। সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিভিন্ন সময়ে সরকার বিরোধী প্রতিবাদের মূল বিষয়বস্তু ছিল বিটকয়েন প্রচলন।

ছবি: রয়টার্স
তবে, পিছপা হচ্ছেন না বুকেলে। বরং বৃত্তাকার নতুন ‘বিটকয়েন সিটি’ ঘোষণা করেছেন তিনি। বুকেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আলাদা এয়ারপোর্ট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা থাকবে শহরটিতে। শহরের কেন্দ্রে থাকবে বিশেষ দালান যেটি আকাশ থেকে দেখতে বিটকয়েন লোগোর মতো মনে হবে।
“আপনি যদি বিটকয়েনকে পুরো বিশ্বে ছড়িযে দিতে চান তাহলে আমাদের কয়েকটা আলেক্সান্দ্রিয়া বানাতে হবে”– বলেছেন বুকেলে। প্রথাগত প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তুলনা করলে অনেক দিক থেকেই আলাদা নাইব বুকেলে। সেপ্টেম্বর মাসেই রসিকতা করে টুইটারে নিজেকে এল সালভাদরের ‘স্বৈরশাষক’ বলে ঘোষণা দিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন ৪০ বছর বয়সী এই প্রযুক্তিভক্ত প্রেসিডেন্ট।
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালের শুরুতেই অভিষেক হতে পারে বিটকয়েন বন্ডগুলোর। ৬০ দিনের মধ্যেই এল সালভাদর সরকার বিটকয়েন বন্ড বাজারজাত করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে বুকেলের ঘোষণা থেকে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্লকস্ট্রিম’-এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার স্যামসন মোও জানিয়েছেন, প্রথম ১০ বছরের ‘ভলকানো বন্ড’-এর মূল্য হবে একশ’ কোটি মার্কিন ডলার; ৬.৫ শতাংশ কুপন ও বিটকয়েন সমর্থন থাকবে বন্ডগুলোতে। বন্ড বিক্রি করে সংগৃহিত তহবিলের অর্ধেক ব্যয় হবে বিটকয়েন ক্রয়ে।
বন্ড বিক্রির পাঁচ বছর পর বিটকয়েন বিক্রি শুরু করবে এল সালভাদর। বিটকয়েন বিক্রি করে পাওয়া অর্থ থেকে পরিশোধ করা হবে বিনিয়োগকারীদের কুপনের পাওনা। বিশ্বব্যাপী বিটকয়েনের মূল্য বাড়তে থাকবে বলে মন্তব করেছেন মোও। “এটা এল সালভাদরকে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রস্থলে পরিণত করবে”, বলেন তিনি।
নতুন পরিকল্পনার বাস্তাবায়ন সহজ করতে এল সালভাদর নতুন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২১ নভেম্বর ২০২১)