ড. মেহেদী মাহমুদ চৌধুরী
বিটকয়েন শব্দটি গত কয়েক মাসে আমাদের খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকও বিটকয়েনের কেনাবেচা বিষয়ে সতর্কতা জারি করে একটি সার্কুলার প্রচার করেছে। কিন্তু বিটকয়েন কী? এ বিষয়ে অনেকেরই পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। এ নিয়ে বাংলায় তেমন কোনো লেখাও চোখে পড়েনি। বিটকয়েন ও তার সঙ্গে সম্পর্কিত ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন বিষয়গুলোকে বাংলায় ব্যাখ্যার জন্যই এ লেখা।
বিটকয়েন এক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা সাংকেতিক মুদ্রা। টাকা, ডলার, ইয়েন ইত্যাদিকে যেমন হাতে নিয়ে আদান-প্রদান করা যায়, সাংকেতিক মুদ্রার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। সাংকেতিক মুদ্রার অস্তিত্ব শুধু ইন্টারনেটের জগতে তথ্য আকারে। বিটকয়েন ছাড়াও এ রকম হাজারখানেক সাংকেতিক মুদ্রা আছে। এর মধ্যে বেশ পরিচিত ইথেরিয়াম, লিটকয়েন, রিপল, অল্টকয়েন ইত্যাদি। তবে সবার পূর্বসূরি ও সবচেয়ে পরিচিত হলো বিটকয়েন।
বিটকয়েন তাহলে এক ধরনের তথ্য। যেমন ‘ক’ নামের একজন ব্যক্তির কাছে ১০০টি বিটকয়েন আছে, এটি একটি তথ্য। এ তথ্যের উৎস কী অথবা কীভাবে ‘ক’ নামের একজন ব্যক্তি ১০০টি বিটকয়েনের মালিকানা অর্জন করতে পারেন? এটা ব্যাখ্যা করতে হলে আমাদের বিটকয়েনের শুরুর দিকে তাকাতে হবে। বিটকয়েনের জনক সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের একজন, যার প্রকৃত পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তিনি ২০০৯ সালের দিকে বিটকয়েন সৃষ্টি করেন। বিটকয়েনের মূল প্রযুক্তিকে বলা হয় ব্লকচেইন। এ প্রযুক্তিতে বিটকয়েন বিনিময়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখতে হয়। এ যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তথ্যের অপ্রবর্তনীয় ব্লক। ব্যাপারটা অনেকখানি ইটের দেয়াল তৈরির মতন। একেকটি ব্লক একেকটি ইটের মতো, একবার বসানো হয়ে গেলে আর ভেঙে ফেলা যায় না। নতুন ইট যেমন বসাতে হয়, পুরনো ইটের ওপর তেমনি বিটকয়েনের নতুন ব্লকগুলো তৈরি হয় পুরনো ব্লককে ভিত্তি ধরে। সাতাশি নাকামোতো প্রথম ব্লকটি তৈরি করেন এবং বিনিময়ে ৫০টি বিটকয়েন অর্জন করেন। এভাবেই বিটকয়েনের সৃষ্টি। বিটকয়েনের মূল ব্যাপারটা হলো, যেকোনো বিনিময়কে অত্যন্ত জটিল এক ধরনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একের পর এক তৈরি হয় তথ্যের অপরিবর্তনীয় ব্লক। এ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাইনিং এবং যারা কাজটি করেন তাদের বলা হয় মাইনার। বাংলায় বলা যায়, খনন ও খননকারী। যাচাই-বাছাই আর ব্লক তৈরিতে অবদানের পুরস্কারই হলো বিটকয়েন। এজন্যই বিটকয়েনের মাইনিংকে পাহাড় খুঁড়ে স্বর্ণ বের করে আনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। সাতোশি নাকামোতো এমনভাবে তার প্রোগ্রামটি লিখেছেন যে, সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন সৃষ্টি মানে মাইন করা যাবে এবং তা হবে ২১৪০ সাল নাগাদ। অন্য সাংকেতিক মুদ্রাগুলোও এভাবে ব্লক সৃষ্টি ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মাইন করা হয়ে থাকে। ব্লকচেইন সবগুলোর মূল প্রযুক্তি।
আগের প্রশ্নে ফিরে এলে ‘ক’ নামে ব্যক্তি দুভাবে বিটকয়েনের মালিকানা পেতে পারেন। তার একটি বিটকয়েন মাইনিং এবং আরেকটি হলো, অন্যের কাছ থেকে ক্রয় করে বা উপহার হিসেবে। কিন্তু বিটকয়েনের সঙ্গে মুদ্রার সম্পর্ক কোথায়? মুদ্রার মূলকাজ হলো, পণ্যবিনিময়কে সম্ভব করে তোলা। মুদ্রার বিনিময়যোগ্যতার সঙ্গে গ্রহণযোগ্যতার সম্পর্ক আছে। একটি ৫০০ টাকার বা ১০০ ডলারের নোটের প্রকৃতপক্ষে কোনো মূল্য নেই। আমরা এগুলোকে মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করি, তাই সেগুলো মূল্যবান ও বিনিময়যোগ্য। সাংকেতিক মুদ্রার ক্ষেত্রেও তা-ই। ভেবে দেখবেন এককালে মানুষ কড়িকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করত। সাংকেতিক মুদ্রা, স্বর্ণমুদ্রা বা কাগজের মুদ্রার সেদিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই।
ব্লকচেইন প্রযুক্তির সমর্থকরা বলেন যে, সাংকেতিক মুদ্রা পণ্যের বিনিময়কে অনেক সহজ করবে। যেমন— কেউ বাংলাদেশ থেকে জাপানে কিছু রফতানি করতে চায়। রফতানির টাকা-পয়সার লেনদেন হয়ে থাকে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং এ প্রতিষ্ঠানগুলো এজন্য মোটা অংকের ফি নিয়ে থাকে। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এ ফি দেয়ার প্রয়োজন নেই, তাই খরচ অনেক কম হবে। একইভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সাংকেতিক মুদ্রা ব্যবহারে খরচ হবে অনেক কম।
তার মানে বিটকয়েনসহ অন্যান্য সাংকেতিক মুদ্রা সহজেই প্রচলিত মুদ্রার জায়গা দখল করে নিতে সক্ষম এবং নিকট ভবিষ্যতে হয়তো তা-ই ঘটতে যাচ্ছে। ব্লকচেইনের প্রযুক্তির এই তাত্পর্য নিয়ে সংশয় একেবারেই নেই। কিন্তু সাংকেতিক মুদ্রাকে কি শেয়ার, স্বর্ণ বা হীরার মতো বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত? অনেকে তা-ই করছেন এবং করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এক বছর আগে এক বিটকয়েনের দাম ছিল প্রায় ১ হাজার ডলার, এখন তার দাম প্রায় ১৪ হাজার ডলার। মানে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে অনেকে রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেছেন। এখন আমাদের বাকিদেরও কি তা-ই করা উচিত?
আমি মনে করি, বিটকয়েনসহ অন্যান্য সাংকেতিক মুদ্রাকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা একেবারেই উচিত নয়। দু-একজন হয়তো এতে লাভবান হবেন কিন্তু বেশির ভাগই মূলধন খোয়াবেন। বিটকয়েনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যা ঘটছে, তা ফাঁপা বেলুনের মতো। বেলুন যেমন একসময় ফেটে বা চুপসে যায়, বিটকয়েনের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটবে। কিন্তু কেন হবে এ পরিণতি? এ নিয়ে কথা বলতে হলে আমাদের অর্থনীতির একটি মৌলিক প্রশ্নে ফিরে যেতে হবে। প্রশ্নটি হলো, একটি জিনিসের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ হয়? যেমন— স্বর্ণ আমাদের কাছে একটি মূল্যবান ধাতব কিন্তু কেন? যেকোনো জিনিসের মূল্য নির্ধারণ হয় দুটি বিষয়ের সমন্বয়ে। একটি হলো প্রস্তুত মূল্য, অর্থাৎ একটি জিনিস তৈরিতে কেমন খরচ হচ্ছে। স্বর্ণ, হীরা ইত্যাদি খননের খরচ অত্যন্ত বেশি, এগুলোর বিক্রয়মূল্যে তার প্রতিফলন থাকে। তেমনি বিটকয়েনের মাইনিং বা খননের খরচ বর্তমানে অত্যন্ত বেশি। বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত শক্তিশালী কম্পিউটার, এর বিদ্যুৎ খরচ অস্বাভাবিক। তাই বিটকয়েনের খননমূল্য অত্যধিক। অন্যান্য সাংকেতিক মুদ্রার ক্ষেত্রে এ খরচ কিছুটা কম। বিটকয়েনের অত্যধিক মূল্যের কারণ অনেকটা এটাই।
দ্বিতীয় যে বিষয়টা মূল্য নির্ধারণ করে তা হলো, পণ্যের বিনিময়ে মানুষ কতটুকু মূল্য প্রদানে ইচ্ছুক। যেমন— আমরা স্বর্ণকে দুর্লভ ও আকর্ষণীয় ধাতব হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। স্বর্ণের কোনো বিকল্প নেই এবং এজন্য আমরা অনেক মূল্য দিতে ইচ্ছুক। বিটকয়েন বা যেকোনো সাংকেতিক মুদ্রার বিকল্পের কোনো অভাব নেই। যেহেতু সাংকেতিক মুদ্রাগুলো সহজেই একে অন্যের জায়গা নিতে পারে, তাই ব্যবহারের দিক থেকে সেগুলো সমান উপযোগী। অন্যদিকে বিটকয়েনের প্রস্তুত মূল্য বা মাইনিং খরচ অত্যন্ত বেশি। তাই পরবর্তী মুদ্রাগুলো বিটকয়েন থেকে অনেক বেশি সাশ্রয়ী। তার মানে এগুলো বিটকয়েনের জায়গা দখল করে নেবে। কিন্তু তারা এ জায়গা দখল করতে পারবে শুধু স্বল্প সময়ের জন্যই। কারণ পরবর্তী সাংকেতিক মুদ্রাগুলো হবে আরো বেশি সাশ্রয়ী। অনেকখানি কম্পিউটার কেনার মতো, আপনি যত পরে কিনবেন, প্রযুক্তি তত বেশি উন্নত হবে।
টাকা, ডলার ইত্যাদির ক্ষেত্রে মুদ্রার সরবরাহকারী হলো রাষ্ট্র। তাই পৃথিবীতে যতগুলো রাষ্ট্র আছে, তেমনি কাছাকাছি সংখ্যক মুদ্রাও আছে। প্রচলিত মুদ্রার বাজারে অর্থনীতির পরিভাষার কোনো ফ্রি এন্ট্রি বা অবাধ অনুপ্রবেশ সম্ভব নয়। সাংকেতিক মুদ্রার ক্ষেত্রে তা খাটে না। যতদিন সাংকেতিক মুদ্রায় লাভ থাকবে, ততদিন সাংকেতিক মুদ্রাবাজারে নতুন নতুন মুদ্রার অনুপ্রবেশ ঘটবে। তাই যেকোনো সাংকেতিক মুদ্রার লাভ হবে স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদে লাভ ধরে রাখতে পারবে না।
অনেকেই বলেন যে, বিটকয়েনও স্বর্ণের মতো দুর্লভ হবে। কারণ সর্বোচ্চ ২ কোটি ১০ লাখ বিটকয়েন সৃষ্টি হতে পারবে। এ ধারণার মূলে আছে এক শিশুসুলভ বিভ্রান্তি। তারা বুঝতে পারেন না যে, সাধারণ সম্পদের বিভাজ্যতার ও বহনযোগ্যতার সীমাবদ্ধতা আছে, যা সাংকেতিক মুদ্রার নেই। স্বর্ণকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত করা যায় কিন্তু বহন করা সম্ভব নয়। যেমন— একটি স্বর্ণকণাকে আমাদের পক্ষে হাতে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার কিছু সম্পদ বহনযোগ্য কিন্তু অবিভাজ্য। যেমন— ১ টাকাকে আমরা সর্বোচ্চ ১০০ ভাগে ভাগ করতে পারব। কিন্তু ১ পয়সাকে আর ভাগ করা যাবে না। শেয়ারের ক্ষেত্রেও তা সত্যি। একটি শেয়ারকে ভাগ করে দুটি অর্ধেক শেয়ার করা সম্ভব নয়। কিন্তু সাংকেতিক মুদ্রা একই সঙ্গে বহন ও বিভাজনযোগ্য। বর্তমানে একজনের পক্ষে সর্বনিম্ন ০.০০০০০০০১ বিটকয়েনের মালিক হওয়া সম্ভব। একটি কোড লিখে এটিকে আরো ক্ষুদ্র করা সম্ভব। বিটকয়েনকে সীমাবদ্ধ সম্পদ ভাবা তাই শুধুই একটা বিভ্রান্তি।
সাংকেতিক মুদ্রার আরেকটি সমস্যা মাইনিংয়ের অপরিহার্যতা। আগেই বলেছি যে, সাংকেতিক মুদ্রার বিনিময়কে কিছু জটিল যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ প্রক্রিয়াটির বিদ্যুৎ খরচ অত্যন্ত বেশি। যারা এ কাজটা করেন, তারা প্রণোদনা হিসেবে সাংকেতিক মুদ্রা লাভ করেন, যা বর্তমানে বিদ্যুৎ ও যন্ত্রপাতির খরচ বাদ দিয়ে বেশ লাভজনক। যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটা লাভজনক না হলে তারা আর যাচাই-বাছাই করবেন না। তাই কাজটি না হলে সাংকেতিক মুদ্রার বিনিময় অসম্ভব। মানে একজনের মালিকানায় ১ লাখ বিটকয়েন থাকতে পারে কিন্তু তার বিনিময়ে সে কিছু করতে পারবে না।
উপরের আলোচনাসাপেক্ষে আমি তাই মনে করি যে, ভবিষ্যতে বিটকয়েন ও অন্যান্য সাংকেতিক মুদ্রার বাজারমূল্য হবে শূন্য। স্বল্পমেয়াদে কেউ কেউ এতে বিনিয়োগ করে লাভবান হয়েছেন বা হবেন। কিন্তু সাংকেতিক মুদ্রাকে সম্পদ মনে করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অনুচিত।
আমাদের আরেকটু আলোচনা করা উচিত সাংকেতিক মুদ্রার মূল প্রযুক্তি ব্লকচেইন বিষয়ে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা। ব্লকচেইন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। বলা হয়ে থাকে যে, ব্লকচেইন মানুষ কীভাবে একে অন্যকে বিশ্বাস করতে পারে বা নিশ্চয়তা দিতে পারে, তা পরিবর্তন করে ফেলেছে। বর্তমানে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বাস ও নিশ্চয়তা আসে মধ্যস্থতাকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। ব্লকচেইনের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছাড়াই কম খরচে ও কম সময়ে বিশ্বাসযোগ্য বিনিময় সম্ভব। তাই ব্লকচেইন ভবিষ্যতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকে খর্ব করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ইন্টারনেট যেমন তথ্য ও সংবাদের আদান-প্রদানকে অত্যন্ত সহজ করে তুলেছে, তেমনি ব্লকচেইন সহজ করে তুলবে অর্থের আদান-প্রদান। তাই ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমের ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন হতে পারে। শুধু দু-একটি সার্কুলারের মাধ্যমে এ ঝড় ঠেকানো সম্ভব হবে না। উট পাখির মতো এখানে মুখ গুঁজে থেকে লাভ হবে না। অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
তাই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের উচিত এখনই সুপার কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি সাংকেতিক মুদ্রার মাইনিং সেল গঠন করে ব্লকচেইন প্রযুক্তির সব দিক সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নেয়া। সুপার কম্পিউটার, মাইনিংয়ের যন্ত্রপাতি ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক সিস্টেমের জন্য আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা লাগবে। কাজটি করার জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনার প্রয়োজন নেই, দরকার নেই বিদেশ ভ্রমণের। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগ করেই এটা করা সম্ভব।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি এখন তার শৈশবে। ইন্টারনেট যখন চালু হয়েছিল বা নব্বইয়ের দশকের দিকে ভবিষ্যতে কী হবে কেউ তা বুঝে উঠতে পারেনি। অথচ আজ ফেসবুক, ইউটিউব, অ্যামাজন, গুগল, উইকিপিডিয়া, স্মার্টফোন ইত্যাদি আমাদের জীবনকে বৈপ্লবিকভাবে বদলে ফেলেছে। ব্লকচেইনের ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটবে বলে সুজান এইথিসহ প্রথিতযশা অনেক অর্থনীতিবিদ অনুমান করেছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং ও ব্লকচেইন ইত্যাদি নতুন প্রযুক্তি এরই মধ্যে উন্নত বিশ্বের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা শুরু করেছে। বাংলাদেশের মতো দেশ আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যেই এর প্রভাব টের পেতে শুরু করবে। কী ঘটবে তা আমরা জানি না কিন্তু বড় কিছু ঘটবে তা নিশ্চিত। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তাই এখন থেকেই এসব বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য বিনিয়োগ শুরু করা উচিত। এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া এবং সেভাবে কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা ভবিষ্যতে টিকে থাকার জন্য হবে অত্যন্ত জরুরি।
লেখক: যুক্তরাজ্যের বোর্নমাউথ ইউনিভার্সিটিতে অর্থশাস্ত্রের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক