বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১ ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - হেমন্তকাল | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকায় বায়ু দূষণের জন্য নির্মাণখাত ৩০ শতাংশ দায়ী: গবেষণা

কাজী মুস্তাফিজ

ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের মাধ্যমে। গবেষণা বলছে— বায়ু দূষণের জন্য নির্মাণখাত ৩০ শতাংশ দায়ী। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ু দূষণ হচ্ছে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মাধ্যমে। যার হার ২৯ শতাংশ। বায়ু দূষণের তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো যানবাহনের কালো ধোঁয়া, যার শতকরা হার ১৫ শতাংশ।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানের বায়ুমান নিয়ে গবেষণা করে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

ঢাকায় বিপজ্জনক মাত্রায় ঢাকার বায়ুদূষণ: জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে বায়ু দূষণের জন্য প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট কারণকেও দায়ী করা হয়।

বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক এবং স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। সভাপতির বক্তব্যে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বায়ু দূষণের কারণে ঢাকায় একটি মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে এবং আমরা সেই উন্নয়ন চাই না যে উন্নয়ন জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।

মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা অন্যতম কারণ।

ঢাকায় নির্মাণকাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে সবচেয়ে বেশি দূষণ
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী— অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ (৩০%) থেকে সবচেয়ে বেশি বায়ু দূষণ হয়। এরপরেই আছে ইটভাটা ও শিল্প কারখানা (২৯%), যানবাহনের কালো ধোঁয়া (১৫%), আন্তঃদেশীয় বায়ু দূষণ (১০%), গৃহস্থালী ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক (৯%) এবং বর্জ্য পোড়ানোর (৭%) কারণে বায়ু দূষণ হয়ে থাকে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষেণ করে। এ সময় তারা বায়ুতে বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে।

বস্তুকণা ৪.২ গুণ বেশি, বেশি দূষণ তেজগাঁওয়ে

গবেষণায় দেখা ২০২১ সালে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ৬৩ মাইক্রোগ্রাম বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতি পাওয়া যায় যা এর বাৎসরিক আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ৪.২ গুণ বেশি।

গত বছর ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম) এবং পরের অবস্থানে রয়েছে শাহবাগ এলাকা (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। প্রত্যকটি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল নির্ধারিত মানমাত্রার কয়েক গুণ বেশি। এ ছাড়াও আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১,৬৬ এবং ৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং যা নির্ধারিত মান মাত্রার প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। ওই এলাকাগুলোতে এমআরটি ও বিআরটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ডিসেম্বরে বস্তুকণা সবচেয়ে বেশি

মাস অনুযায়ী ১০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ বিশ্লেষণে দেখা যায়— ডিসেম্বর মাসে বস্তুকণা ২.৫ এর উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি যা প্রতি ঘনমিটারে ১০২ মাইক্রোগ্রাম আর জুলাই মাসে সবচেয়ে কম যা ২৯.০১ মাইক্রোগ্রাম।

ঢাকার বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘বায়ু দূষণের জন্য প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আবহাওয়াজনিত ও ভৌগোলিক কারণ উল্লেখযোগ্য। এর বাইরেও মানবসৃষ্ট নানা কারণে বায়ু দূষণের মাত্রা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে।’

বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এস সিদ্দিকী বলেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের ফলে ঢাকার দূষণ বেশি হচ্ছে এবং এই দূষণ কমানোর জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে।

নির্মাণ কাজের মাধ্যমে দূষণ বন্ধ করতে এ সময় চলমান নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখার ও নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ