সাইবারবার্তা ডেস্ক: প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমাদের ব্যবহারও পরিবর্তন হচ্ছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে যেকোনো সময় আমাদের সুরক্ষা জালও পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন কোনো অ্যাপ ব্যবহারের সময় আপনি কখন যে আপনার ঠিকানা সেখানে ব্যবহার করে ফেলেন তা খেয়াল রাখেন কী? অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত ছবি শেয়ারের মাধ্যমে আপনি আপনার অবস্থান জানান দিচ্ছেন না কি?
অনলাইন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান পিনড্রপের শীর্ষ নির্বাহী বিজয় বালাসুব্রমানিয়ান জানান, অনলাইনে উপস্থাপিত যেকোনো ব্যক্তিগত তথ্যই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে হ্যাকার বা প্রতারকরা। তিনি আরো বলেন, আপনার ছবি, ভিডিও ও অডিওর মাধ্যমে যে আইডেনটিটি তৈরি হয় এর মাধ্যমে আপনার মতো সম্পূর্ণ আরেকটি ডিজিটাল পার্সোনালিটি তৈরিতে সক্ষম হ্যাকাররা।
আপনার অনলাইন বিচরণ নিরাপদ করতে অবশ্যপালনীয় পাঁচটি পদক্ষেপ:
১. কখনই দুর্বল পাসওয়ার্ড নয়
আট ক্যারেক্টার বা তার চেয়ে কম ক্যারেক্টারের পাসওয়ার্ড হলো দুর্বল পাসওয়ার্ড। সিকিউরিটি ডট ওআরজি নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে প্রায় ৪৫ শতাংশ আমেরিকানের পাসওয়ার্ড এ রকম দুর্বল পাসওয়ার্ড। এছাড়া বিভিন্ন সাইটে একই ধরনের পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেছে অধিকাংশ আমেরিকান। দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে হ্যাকাররা সহজেই তা অনুমান করতে পারে। একই পাসওয়ার্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ সব জায়গায় ব্যবহার হলে কোনো একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে আপনার পুরো ডিজিটাল দুনিয়াই হুমকিতে পড়বে।
২. মাল্টিফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহার করুন
আপনি যত শক্তিশালী পাসওয়ার্ডই ব্যবহার করেন না কেন হ্যাকার যদি কোম্পানি সার্ভার নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, তাহলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দখলে নেয়া কঠিন নয়। এজন্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মাল্টিফ্যাক্টর অথেন্টিকেশনের পরামর্শ দেন। এটা দুই ধাপের ভেরিফিকেশন হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। ফেসবুক, জিমেইলসহ বেশির ভাগ আধুনিক ব্যাংকই অ্যাকাউন্টে দুই ধাপের এ ভেরিফিকেশন ব্যবহার করে থাকে। যদি কোনো কোম্পানির এ মাল্টিফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার না করাই উচিত বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বালাসুব্রমানিয়ান।
৩. অতিরিক্ত শেয়ার নয়
প্রাত্যহিক ক্যামেরার প্রয়োজন আমরা এখন হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়েই সারি। কিন্তু মনে রাখতে হবে স্মার্টফোনগুলো আমাদের সম্পর্কে অনেক ডাটা সংগ্রহ করে। যেমন বিভিন্ন ক্যামেরা সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি তোলার স্থান লেখা হয়ে যায়। এটা সুবিধার চেয়ে অনেক সময় আপনার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
৪. আপনার বন্ধুর ডাটা শেয়ার নয়
কোনো অ্যাপে অ্যাড্রেস বুক শেয়ারের সময় আপনি সম্ভাব্য সব জিনিসই শেয়ার করেন। আবার অনেক অ্যাপে আপনার বন্ধুদের ইনভাইট করা যায়। এর মাধ্যমে আপনার বন্ধুর ডাটাও ওই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
৫. কোনো প্রতিষ্ঠানকেই অন্ধ বিশ্বাস নয়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক যখন ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে, তখন তা অনেকেরই নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় এবং সেখানে সব ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত শেয়ার করতে শুরু করে। কিন্তু ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কাণ্ডের পর সামনে চলে আসে কীভাবে ফেসবুক লাখো লাখো ব্যবহারকারীর ডাটা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ রকম ঘটনা বেশির ভাগ আইটি জায়ান্টের বেলাতেই ঘটছে। এজন্য সব নিরাপত্তা বিশ্লেষকের অভিন্ন পরামর্শ, ‘কাউকে বিশ্বাস নয়’।
কারো কাছ থেকে আসা ই-মেইলে যদি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে কোনো লিংক পাঠানো হয়, তাহলে সেখানে কখনই ক্লিক দেয়া যাবে না। সুত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
(সাইবারবার্তা.কম/আরআই/জেডআই/২৯মার্চ,২০২১)