নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: ই–কমার্স নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও আলাদা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। দেশেও এ ধরনের কোনো আলাদা সংস্থা না করে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও কার্যকর করে ই–কমার্সে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সভায় এই মত দিয়েছেন তারা। তাদের এই মতে সায় দিয়েছেন সভায় যোগ তেয়া আইনজীবীরাও।
তারা বলেছেন,বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে নজর দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা গেলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষাপট করণীয় নিয়ে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সিপিডি চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, আইনজীবী তানজীব উল আলম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, বিডি জবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর, চালডাল ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম, শপ আপের চিফ অব স্টাফ জিয়াউল হক, অ্যাসিক্স বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফসানা আসিফ ও ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল।
বক্তব্যে ই-কমার্সের নামে প্রতারণার পেছেনে ‘সুশাসনের মারাত্মক ঘাটতি আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষক রেহমান সোবহান। এর বাড়ন্ত অবস্থাকে বিচারহীনতা বলেও মত দিয়ছেন তিনি।
বিদ্যমান আইনে প্রায়োগিক দুর্বলতাকে বর্তমান ঘটনার পেছনে দায়ী মন্তব্য করে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেছেন, বিদ্যমান আইনেই সব সমস্যার সমাধান আছে। যথাসময়ে তৎপর হলেই এমনটা হতো না।
এর বাইরেও ক্রেতা নয় মূলত একশ্রেণীর ‘লোভী’ মানুষ এখন মূলত এই বিপর্যয়ে পড়েছেন বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।
অপরদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে বড় ধরনের সমন্বয়হীনতার বিষয়টি টেনে এনেছেন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল।
তিনি বলেছেন, আমরা তিন বছর আগেই সরকারকে বলেছিলাম এ ধরনের একটা জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমরা এসক্রো সার্ভিস চালুর কথা বলেছিলাম। ই–কমার্সে যে স্বচ্ছতা নেই, তা সরকারকে জানানো হয়েছিল। ইভ্যালিসহ অন্যদের বিজনেস মডেল নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার এখন ই-কমার্সে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন করে আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েঝে তার প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন চালডাল ডটকম সিইও ওয়াসিম আলিম।
তিনি বলেছেন, আমি এই খাতে আট বছর ধরে কাজ করছি। এই সময়ে আমরা দেখেছি এমন সঙ্কট নতুন নয়। অন্যান্য খাতেও রয়েছে। তাছাড়া ই–কমার্স নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও আলাদা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। শুনতে পাচ্ছি, ই–কমার্সে শৃঙ্খলা ফেরাতে আলাদা একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করবে সরকার। এটি ই–কমার্সকে আরও কঠিন করে ফেলবে। সরকারের বিদ্যমান যেসব সংস্থা আছে, তাদের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ালে সেটি আরও বেশি কার্যকর হবে।
একইভাবে আজকের ডিল সিইও ফাহিম মাশরুর বলেছেন, ই–কমার্সে শৃঙ্খলা আনতে হলে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে আরও কার্যকর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে জবাবদিহি করা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে তাদের শক্তিশালী করতে হবে। তার জন্য জন্য দেশে নতুন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চাই না।
অগ্রজদের সঙ্গে ঐক্যমত প্রকাশ করে শপআপ চিফ অব স্ট্যাফ জিয়াউল হক বলেন, কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নজরদারিতে আনা এবং যেসব গেটওয়ে বা চ্যানেল দিয়ে পেমেন্ট হচ্ছে তাদের তদন্তের মুখে রাখলে এমন পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যায়। মূলতো বিদ্যমান আইনগুলোর প্রয়োগ করলেই নতুন কোনো আইন বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার দরকার হবে না।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১)