নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: ওঁদের কেউ তরুণ, কেউ যুবক। কেউ শিক্ষার্থী, কেউবা সংস্কৃতিকর্মী, সংগঠক, স্বেচ্ছাসেবী। ছাত্রসংগঠনের নেতাও আছেন অনেকে। আগে তাঁরা নানামুখী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। করতেন ব্যবসাও। করোনার কারণে ব্যবসাপাতি গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে। সবাই পড়েছেন আর্থিক অনটনে। কিন্তু থেমে যাননি।
দুঃসময় তাঁদের জন্য শাপেবর হয়েছে। খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। করোনাকালে অনলাইন ব্যবসায় ওঁদের আশা দেখাচ্ছে মৌসুমি ফল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে আমের ব্যবসা করছেন অনেক তরুণ।
রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের খ্যাতি আছে। এই আম সুস্বাদু ও আঁশবিহীন। গত জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরোদমে হাঁড়িভাঙা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আমের ব্যবসার জন্য অনলাইনের ব্যবহার ইতিমধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। নতুন অনেকে অনলাইনে আম ব্যবসায় নেমেছেন। শুধু রংপুরেরই শতাধিক তরুণ-যুবক গ্রুপ ভিত্তিতে এসব কাজ করছেন। লকডাউনের এ সময়েও তাঁদের আয়রোজগারও ভালোই বলে জানিয়েছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় হাঁড়িভাঙা আমগাছ রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ। এ বছর জেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৭ হাজার মেট্রিক টন হাঁড়িভাঙা আমের উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রায় ১২০ কোটি টাকার বিপণন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে আমচাষিদের ব্যবসায় ভাটা পড়লেও আশা দেখাচ্ছে, অনলাইনে তরুণদের আম ব্যবসা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর জেলায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছিল। সেই সঙ্গে আমের ফলনও হয়েছিল ভালো। প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। প্রায় ১০০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয় গত বছর।
শহরের কয়েকজন তরুণ-যুবক ‘ম্যাংগো বাজার’ নামের একটি ফেসবুক পেজ খুলে আমের ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁরা সবাই রংপুরের পরিচিত মুখ কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী, সংগঠক। তাঁদেরই একজন রেজাউল জীবন। তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে¯স্নাতকোত্তর করেছেন। বললেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে বসে আছি। করোনার আগে অন্য টুকটাক ব্যবসা করেছি। কিন্তু সেসব ব্যবসা এখন পুরোদমে বন্ধ। কয়েকজন বন্ধু মিলে ফেসবুকে “ম্যাংগো বাজার” নামে পেজ খুলি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাড়া পড়ে। হাঁড়িভাঙা আমের বেশ চাহিদা রয়েছে। জুন মাসের শেষ দিকে এই আম পাড়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এই দুই সপ্তাহে ১৩০ মণের বেশি আম অনলাইনে বিক্রি হয়েছে।’
এবারই প্রথম অনলাইনে আম ব্যবসা শুরু করেছেন আরও কয়েকজন তরুণ। তাঁরা জানালেন, ব্যবসায় ভালো সাড়া পাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে অনলাইনে ফেসবুক পেজ দেখে আম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতাদের ফোন পাচ্ছেন। ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার পেয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আম কিনে কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পাঠাচ্ছেন তাঁরা। তবে কুরিয়ারে অনেক বেশি খরচ। এটি কম হলে ব্যবসা আরও ভালো হতো বলে জানালেন তাঁরা।
রংপুর উন্নয়ন ফোরাম নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অনলাইনে আম বিক্রির একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। তাদের ভাষ্যমতে, এ বছর শতাধিক তরুণ-যুবক ও শিক্ষার্থী অনলাইনে আম ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। সংগঠনটির সদস্যসচিব রাকিবুল ইসলাম ও তাঁরা কয়েকজন বন্ধু মিলে এবারই অনলাইনে প্রথম আমের ব্যবসা শুরু করেছেন। কথায় কথায় বললেন, পড়াশোনা শেষ করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। করোনায় সেই ব্যবসা পুরোদমে লাটে ওঠে। অনেক টাকা লোকসানও গুনতে হয়েছে তাঁর। করোনার এই দুর্যোগে অনলাইনে আমের ব্যবসা করে দুই সপ্তাহেই ১৫০ মণ হাঁড়িভাঙা বিক্রি করেছেন রাকিবুল ও তাঁর বন্ধুরা। সামনে কয়েক দিন ব্যবসা আরও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
একটি ছাত্রসংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি ওসমান গণি বললেন, নিজের পায়ে দাঁড়াতেই অনলাইনে আমের ব্যবসা শুরু করেছেন। ক্রেতাদের ভালো সাড়াও পাচ্ছেন। সারা দেশে পরিচিতজনদের কাছে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করছেন। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী, রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম গত ২০ জুন থেকে পাড়া শুরু হয়েছে। পুরো জুলাই মাস চলবে এই আমের ব্যবসা।
এ বিষয়ে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, করোনার এ দুর্যোগে তরুণ-যুবকদের অনলাইনে আমের ব্যবসা তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে। এভাবেই তাঁরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠবেন।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/৫ জুলাই ২০২১)