Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the wordpress-seo domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/cyberbar42/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the soledad domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/cyberbar42/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকের অংশগ্রহণ: পেশাদারিত্বের সুযোগ ও সংকট - CyberBarta.com
  রবিবার, ডিসেম্বর ২২ ২০২৪ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকের অংশগ্রহণ: পেশাদারিত্বের সুযোগ ও সংকট

জাকারিয়া পলাশ: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চলমান শতকের একটি নতুন ফেনোমেনা (বিষয়) হিসেবে আমাদের সামনে আবির্ভূত। যুগ যুগ ধরে আমরা দেখে আসছি তথ্য ও ধারণার প্রচার বা প্রসারের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোর (Traditional Media) ওপর নির্ভরশীল ছিল মানুষ। হঠাৎ করেই টুইটার, ফেসবুক, লিংকডইনসহ বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার শুরু হয়েছে। নতুন ধারার এ গণমাধ্যম (New Media) এসে গণমাধ্যমের মূল ধারাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। নিউমিডিয়ার এ বৈচিত্র্যময় আবির্ভাব গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা, দায়দায়িত্ব, প্রয়োজনীয়তার সীমা-পরিসীমা নিয়ে পুনর্ভাবনার তাগিদ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে এই নতুন ফেনোমেনা সাংবাদিকতার রাজনৈতিক-অর্থনীতিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

 

 

একসময় প্রচলিত গণমাধ্যমে যা কিছুই প্রচারিত হতো, তা মানুষ বিশ্বাস করতে চেষ্টা করতো বা অন্তত বিশ্বাস করতে না পারলেও চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পেতো না। কিন্তু এখন প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, প্রচালিত গণমাধ্যমের যেকোনো ত্রুটি, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত হোক না কেন, মুহূর্তেই উঠে আসছে সামাজিক গণমাধ্যমে। এই নতুন পরিস্থিতিতে নির্ভুল উপস্থাপনার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রথম চ্যালেঞ্জ।

 

 

দ্বিতীয়ত, সামাজিক গণমাধ্যমের এই সু-বিস্তৃতির আগে বলা হতো সমাজকে প্রশিক্ষিত করা (to educate) গণমাধ্যমের দায়িত্ব। একটা সময় গণমাধ্যম গড়ে ওঠার মূলেই ছিল কোনো একটি আদর্শের প্রচার আর তার আলোকে জনগণের মনস্তত্ত্ব বিকাশ করার লক্ষ্য। ফলে দাতব্য উদ্যোগ হিসেবে গড়ে উঠেছিল গণমাধ্যমগুলো। কিন্তু এখন আদর্শ প্রচার বা জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য বিকল্প গণমাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে জনগণও বিকল্প গণমাধ্যমে আগ্রহী হয়েছে। ফলে গণমাধ্যমের দায়িত্বেও এক ধরণের বড় পরিবর্তন হয়েছে।

 

 

তৃতীয়ত, এই পুরো পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি মূলত মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি করেছে। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, জনগণকে তথ্য জানানোর জন্য গণমাধ্যমের আর প্রয়োজন নেই। যতটুকু প্রয়োজন অবশিষ্ট আছে তা কেবল, তথ্যের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে। ফলে গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা একেবারে ফুরিয়ে না গেলেও বদলে গেছে। তথ্য সরবরাহের মাধ্যম হিসেবে গণমাধ্যমের এখন আর মনোপলি নেই।

 

 

ওপরের এই তিনটি চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আরেকটি উভয়সংকট মূলধারার গণমাধ্যমকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তা হলো, একদিকে মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো কাঠামোবদ্ধ, করপোরেট স্বার্থ ও সামাজিক দায়বদ্ধতাসহ রাজনৈতিক-অর্থনীতির নানা দিক বিবেচনায় সেন্সরবিহীন তথ্য ও ধারণা প্রচার করতে পারেনা। অন্যদিকে, সেন্সরবিহীন ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিপুল তথ্য-ধারণা-প্ররোচনা-প্রচারণা-উস্কানি প্রচার হওয়ার ফলে সামাজিক মাধ্যম এখন গুরুত্বপূর্ণ সোর্স হিসেবে হাজির হচ্ছে গণমাধ্যমের জন্য। অর্থাৎ, আমি চাইলেও সামাজিক মাধ্যমের মতো সবকিছু ইচ্ছামতো প্রচার করতে পারছি না, আবার আমাকেই পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।

 

 

এতক্ষণ আমি সামাজিক মাধ্যমের বিপরীতে মূলধারার গণমাধ্যমের Contemporary Sociology তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এসব বিষয় সামনে রেখেই আলোচনা হওয়া প্রয়োজন যে, গণমাধ্যমের একজন কর্মী কতটুকু সামাজিক গণমাধ্যমে অংশ নেবেন। অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, গণমাধ্যমের একজন কর্মীও এই সমাজের প্রতিনিধি। তিনি রোবটসম কেউ নন। সুতরাং তার ব্যক্তিক একটি প্রতিবেশ থাকতে পারে। তার ব্যক্তিক এই প্রতিবেশ (Surroundings) মূল গণমাধ্যমের পেশাদারিত্বের সঙ্গে যাতে কোনো স্বার্থের দ্বন্দ্বে (Conflict of Interest) না জড়ায় সেটিই আমাদের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য।

 

 

প্রসঙ্গত, সম্ভবত আমাদের সবার সংবাদের একটা সংজ্ঞা জানা আছে যে, ‘যা কিছু লুকিয়ে রাখার চেষ্টা হয়, সেগুলো প্রকাশ করে দেওয়াই সংবাদ। বাকী সবকিছুই বিজ্ঞাপন।’ সে হিসেবে যে কোনো সংবাদকে কেন্দ্র করেই সমাজে কোনো না কোনো ধরণের স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। যেকোনো সংবাদেই দুটি বা তার বেশি সংখ্যক পক্ষ থাকতে পারে। এই বাস্তবতায় দাড়িয়ে আমাদের মনে রাখা দরকার, নিজেরা সংঘাতে না জড়িয়ে, সমাজের নানা প্রকাশ্য ও গোপন দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে বর্ণনা করাই সাংবাদিকতা। তাছাড়া, সমাজবিজ্ঞানে সংঘাতমূলক প্রেক্ষিত (Conflict Perspective) বলে একটা ধারণা আছে। তাতে বলা হয়, সমাজ মূলত নানা রকম দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়েই বিকশিত হয়। শান্তি অধ্যয়নের বিশেষজ্ঞরাও বলেন, দ্বন্দ্ব-সংঘাত সহিংস না হলে তা কল্যাণকর। কারণ, দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে নতুন ধারণার উন্মোচন ঘটে। সমাজের এই দ্বন্দ্বমুখর অবস্থায় সাংবাদিক হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে দ্বন্দ্বগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরে। তারপর সেগুলোর মধ্যে দুর্বল ও সবল দিকগুলো চিহ্নিত করে মানুষকে পরিবর্তন ও সমৃদ্ধির পথ দেখায়। কিন্তু, এই পূর্ণ যাত্রায় সাংবাদিক নিজেকে বিযুক্ত রাখে। এটাই পেশাদারিত্ব, এটাই অবজেকটিভিটি।

 

 

ওপরের এই বর্ণনার ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে আমি দাবি করতে চাই, আমাদের সমাজে সতত সংঘাত বিরাজমান। এবং, এই সংঘাতের মধ্যে জড়িত কোনো পক্ষেই সাংবাদিক থাকতে পারে না। সাংবাদিক একটি ‘এক্টারনাল এনটিটি’। তবে সাংবাদিক যেহেতু বিষয়টিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, বিশ্লেষণ করছেন, কিন্তু এতে জড়িত হচ্ছে না, সেহেতু তিনি পরোক্ষভাবে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী (Bridging Factor) হয়ে উঠছেন। কাজেই সাংবাদিক মৌলিকভাবে যেমন সমাজের কোনো বিষয়কে বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করছেন আর পরোক্ষভাবে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী বা সংযোগ স্থাপনকারী এজেন্টের ভূমিকাও পালন করছেন। সামাজিক মাধ্যমে মতপ্রকাশ করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকের এই অবস্থানটিকে মাথায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা যেতে পারে।

 

 

লেখক: গবেষক, কোয়ান্টাম কনজুমার সল্যুশন্স

 

(সাইবারবার্তা.কম/জেডআই/২৭ এপ্রিল ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ