রবিবার, জানুয়ারি ১৯ ২০২৫ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিক মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতারাই অসামাজিক

সাইবারবার্তা ডেস্ক: টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটডান্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাং ইমিং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এর বেশ কয়েকটি কারণের একটি হিসাবে বলেছেন, তিনি খুব একটা সামাজিক নন। একা করা যায়, এমন কাজেই বরং বেশি আগ্রহী। অথচ টিকটকের মতো বিশাল এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে সামাজিক করার অভিযানে নেমেছেন তিনি। অবশ্য কেবল জাং ইমিং নন, জনপ্রিয় অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উদ্যোক্তাই ‘অসামাজিক’। শব্দটি কিছুটা নেতিবাচক। এর চেয়ে বরং অন্তর্মুখী এবং লাজুক বলা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ সম্পর্কেও সে কথা প্রযোজ্য।

 

 

ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে ২০১০ সালে বলেছিলেন, মার্ক বেশ লাজুক এবং অন্তর্মুখী। অপরিচিত লোকের সান্নিধ্যে তাঁকে প্রায়ই বেশ শীতল মনে হয়। তবে তিনি কিন্তু বেশ বন্ধুবৎসল। ফেসবুকের কর্মীদের ব্যাপারে বেশ ভাবেন ও।

 

 

এবার ফেসবুকের প্রধান প্রতিযোগী টুইটারের কথাই ধরা যাক। সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ডরসিকে দেখে অবশ্য লাজুক বলে মনে হয় না মোটেও। তবে শৈশবে এমন ছিলেন না। নিজের তোতলামির জন্য একপর্যায়ে কথা বলা কমিয়ে দেন, যতটা সম্ভব একা থাকা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠেন। আর এখন দেখুন, বিশ্বের অন্যতম সফল প্রতিষ্ঠানগুলোর একটির প্রধান তিনি।

 

 

জাকারবার্গ কিংবা ডরসির মতো ইভান স্পিগেল আমাদের দেশে খুব পরিচিত নন। সেটার মূল কারণই তিনি পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে চান না। তরুণদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ন্যাপচ্যাটের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, যোগাযোগের দক্ষতা উন্নয়নে তাঁকে আরও কাজ করতে হবে। সঙ্গে বলেছেন, যোগাযোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তা তিনি ধরতে পারেননি। তা ছাড়া স্ন্যাপচ্যাট কেমন চলছে, তা বিনিয়োগকারীদের আরও ভালোভাবে বোঝানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছিলেন।

 

 
মাইক ক্রিগার ক্যামেরার ফ্রেমের ভেতর থাকার চেয়ে পেছনে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অ্যাকাউন্ট দেখলেই তা বোঝা যায়। কদাচিৎ সেখানে নিজের ছবি দিতেন, বেশির ভাগই তাঁর পোষা কুকুর জুনো আর প্রকৃতির ছবি। ব্যাপারটি অদ্ভুত। কারণ, ছবি শেয়ার করার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামের সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। অন্য সহপ্রতিষ্ঠাতা কেভিন সিসট্রোম যতটা বহির্মুখী, মাইক ততটাই অন্তর্মুখী স্বভাবের। জীবনে যে অল্প কটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তার একটিতে বলেছেন, মাঝেমধ্যে তাঁর যে বহির্মুখী হতে ইচ্ছা করে না, তা না। তবে নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী সঠিক কাজটিই তিনি করছেন। তিনি ইনস্টাগ্রামের কারিগরি দিকটি দেখতেন। এখন অবশ্য দুই সহপ্রতিষ্ঠাতার কেউই আর ইনস্টাগ্রামে কাজ করেন না। মূল প্রতিষ্ঠান ফেসবুকের জাকারবার্গের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ইনস্টাগ্রাম ছাড়েন তাঁরা।

 

 

এদিকে অন্তর্মুখী বলেই হয়তো পিন্টারেস্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির সহপ্রতিষ্ঠাতা বেন সিলবারম্যান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অন্তর্মুখী স্বভাব নিয়ে বলেছেন, একটা মজার ব্যাপার হলো, অনেক মানুষ ইন্টারনেট-নির্ভর প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। কারণ, তাঁরা কিছুটা অন্তর্মুখী। যখন তাঁরা খুবই ভালো করেন, তখন তাঁরা মুখোমুখি হন বহির্মুখী দুনিয়ার সঙ্গে। এই অভিজ্ঞতা অদ্ভুত।

তবে অসামাজিক বলি আর অন্তর্মুখী, এখানে যাঁদের কথা বলা হলো, তাঁরা সবাই যশ আর খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছেছেন। আর অর্থের ব্যাপারটি যদি আসেই, তবে তাঁরা সবাই বিলিয়নিয়ার, বেশির ভাগই মাল্টি-বিলিয়নিয়ার। অর্থাৎ, অন্তর্মুখী স্বভাব তাঁদের জীবনে কখনো বাধা তৈরি করেনি। সবচেয়ে বড় কথা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করে মানুষকে যোগাযোগের সুযোগ করে দিয়েছেন তাঁরা।

 

(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/২৪ মে ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ