প্রায়ই শোনা যায় ক্রেডিট কার্ড বা ডেভিড কার্ড হ্যাক হয়ে গেছে। এক্যাউন্ট থেকে টাকা কমে গেছে ইত্যাদি। অনেকে বুঝতে পারে আবার অনেক বুঝতে পারে না। অভিনব উপায়ে আপনার কষ্টে উপার্জিত টাকা কার্ড থেকে চুরি করে সাইবার ক্রিমিনালরা মোজ-মাস্তি করছে।
আসল কথা হচ্ছে এই অপরাধগুলি আগে বাইরের দেশে সংঘটিত হতো। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে টাকার মান একটু কমও বটে। সুতরাং অধিক পরিমান টাকা থাকতে কে চায়, অল্প টাকা ইনকাম করতে কে চায়। সে চোর-ডাকাত, রাজা-বাহাদুর যার কথাই বলেন না কেন সবাই চায় মোটা অঙ্ক। অর্থাৎ ডলার কামাতে।
তাই উন্নত দেশগুলোতে বরাবরই সাইবার ক্রিমিনালদের দৌরত্ব একটু বেশিই ছিল। সেখানে সাইবার ক্রিমিনালরা বিগত কয়েক বছর আরাম আয়েশে দিন কাটিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে উন্নত দেশগুলোও সাইবার অপরাধের বিষয়ে একটু নড়ে চড়ে বসেছে। এবং তাদের নেটওয়ার্ক সিকুরিটিকে যথেষ্ট জোরদার করেছে এবং আইন তৈরি করে তার সৎ ব্যাবহার করছে।
এতে ছোটখাটো প্রফেশনাল সাইবার ক্রিমিনালদের অবস্থা কিছুটা নাজেহাল হয়ে পাড়েছে। তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি গুলো অকার্য হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া হাতেও টাকা নেই। তাই উপায় না পেয়ে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলকে তাদের ঘাটি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে । সাথে সাথে তারা কিন্তু স্থানীয় ক্রিমিনালদের দলে নিচ্ছে। অনেকে আবার ব্যাহিত পুরানো ডিভাইসগুলো দেশীয় অপরাধিদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। তাই অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে।
যেভাবে একজন ক্রিমিনাল ডেভিড বা ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং করে তার কিছু তথ্য দেয়া হল-
স্ক্রিমিং পদ্ধতি: কার্ডে সংরক্ষিত তথ্য চুরি করা যায়।
ক্লোনিং পদ্ধতি: একই রকমের আরেকটি কার্ড তৈরি করা যায় ক্লোন করে।
আমরা যে ডেভিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করি তা দুই ধরনের হয়ে থাকে।
যেমন- ম্যাগনেটিক: এক্ষেত্রে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিছনে একটা ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে কালো বা খয়েরি রঙের। সেখানে কার্ডের নম্বর থেকে শুরু করে আপনার যাবতীয় তথ্য রেকর্ড করা থাকে।
মাইক্রো চিপ: এক্ষেত্রে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের পিছনে একটা মাইক্র-চিপ বসানে থাকে ঠিক আপনার মোবাইলের সিমের কার্ডের মত। ব্যাবহার কারীর যাবতীয় তথ্য এই চিপের মধ্যে সংরক্ষন করা থেকে।
এবার আসুন হ্যাকিং করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যাক-
কার্ডের তথ্য সংগ্রহের জন্য স্ক্রিম্মিং ডিভাইস ব্যাবহার করা হয়। স্কিরমিং ডিভাইস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। স্ক্রিমিং ডিভাইস প্রথমে দেখলে আপনার কাছে মনে হতে পারে তা একধরনের ডিজাইন অথবা অতিরিক্ত কাভার। আমরা যেমন আমাদের স্মারটফনের সুরক্ষার জন্য কাভার ব্যাবহার করি ঠিক তেমন।
আপনি যখনি এরকম কাভার জুক্ত কোন বুঠ বা পাঞ্চিং মেসিনে আপনার কার্ড পাঞ্চ করবেন তখনি আপনার তথ্যগুলো স্ক্রিমিং ডিভাইসের মধ্যে রেকর্ড হয়ে যাবে। আর পাসওয়ার্ড সংরক্ষনের জন্য ছোট্ট ক্যামেরা স্থাপন করা হয় এবং ভিডিও দেখে সনাক্ত করা হয় ভিক্টিমের পাসওয়ার্ড।
এছাড়াও পাসওয়ার্ড সংরক্ষনের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কি-লগার ব্যাবহার করা হয়। সুতরাং আপনি বুঝতেই পারতেছেন আপনার ব্যাংক এক্যাউন্ট ও গচ্ছিত টাকা ঝুকির মধ্যে আছে। এখন আপনার করণীয় কী?
যা করতে পারেন –
১। এটিএম বুথে থেকে টাকা তোলার আগে দেখে নেয়া উচিত, কার্ড ঢোকানোর জায়গাটা কি আলগা বা একটু ব্যাতক্রম কি না। সেটা কি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে, না কি এটা ওপর কিছু একটা লাগানো হয়েছে? দরকার হলে হালকা টান দিয়ে দেখেন ঐটা আলগা কি না।
২। পিন কোড টাইপ করার সময়ে কীবোর্ডটা আলগা নাকি দেখে নিন।
৩। পিন কোড টাইপ করার সময়ে কোন কী চাপছেন সেটা অন্য হাত দিয়ে ঢেকে নিন।
৪। রেস্টুরেন্টে বা কোথাও কেনাকাটার সময় অন্যের হাতে নিশ্চিন্তে কার্ড দিয়ে নিজেকে বাহাদুর ভাববেন না। একটু কষ্ট করে কাউন্টারে গিয়ে সামনে উপস্থিত থাকা অবস্থায় বিল পরিশোধ করুন। রেস্টুরেন্ট যত নামিদামিই বা পরিচিত হোক না কেন, বিশ্বাস করবেন না।
লেখক: মেহেদি হাসান, অ্যাডভাইজার, সিসিএ ফাউন্ডেশন