শনিবার, জানুয়ারি ১৮ ২০২৫ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শীতকাল | ১৭ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

গ্রাহকের নামে কার্ড জালিয়াতি,আটক ৪

সাইবারবার্তা ডেস্ক: ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ইলেকট্রিক জার্নাল বা স্বাভাবিক কাজের গতি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়ে অভিনব কৌশলে প্রায় আড়াই কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি চক্র। এ চক্রের প্রধান ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এডিসি শাখার একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বেই এই চক্রটি অন্যের ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করে অভিনব উপায়ে দীর্ঘদিন ধরে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এ ঘটনায় এক নারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম। বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার।

 

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন, চক্রের প্রধান মীর মো. শাহরুজ্জামান ওরফে রনির স্ত্রী সায়মা আক্তার, রনির প্রধান সহযোগী আল-আমিন বাবু , মেহেদী হাসান, মু. মামুন ও আসাদুজ্জামান আসাদ। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

 

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, এই চক্রের মাস্টার মাইন্ড হলেন মীর মো. শাহরুজ্জামান ওরফে রনির। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ শাখায় তিনি কাজ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় একই ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জের এজেন্ট আল-আমিন বাবুকে সহযোগী বানান তিনি। এরপর বাবুর সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন অ্যাকাউন্ট খোলা হতো। আর এসব অ্যাকাউন্টের সব ধরনের নথি মূল মালিককে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু রেখে দেয়া হতো কার্ড। আর এই কার্ড দিয়েই প্রতারণার শুরু। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয় জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে প্রধান অভিযুক্ত রনি বিদেশে পলাত। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 

যেভাবে কাজ করে এটিএম মেশিন

প্রথমে কার্ড প্রবেশ করার পর পিন নাম্বার চাপতে হয়। পিন নাম্বার আইডেন্টিটি চেক হবার পর তার রিকুয়েস্ট ব্যাংকের এটিএম এর সুইচে যায়। তারপর সেখান থেকে ভেরিফাই হলে অ্যাকাউন্টের টাকা তোলা যায়। এই প্রক্রিয়া মাত্র কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। আর গ্রাহক টাকা পেয়ে থাকনে।

 

যেভাবে প্রতারণা করতো চক্রটি

বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন অ্যাকাউন্ট খোলা হতো ।এরপর সেই অ্যাকাউন্টের জন্য তৈরি করা এটিএম কার্ড রেখে দিতো তারা। সেই এটিএম কার্ড ব্যবহার করে আট ধাপে প্রতারণা করতো এই চক্রটি। প্রতারণার প্রথম ধাপে গ্রাহকের রেখে দেয়া কার্ডে ২০হাজার টাকা জমা দেয়া হতো। সেই টাকা তুলে নেয়ার সময়ে প্রতারণার আসল ধাপ আসতো।

 

চক্রের সদস্যরা টাকা তুলতে গেলে চক্রের প্রধান রনির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। রনি অফিসে বসে টাকা তোলার সময়ে এটিএমের বুথের কাজের সময়ে সৃষ্টি হওয়া জার্নাল সংরক্ষণ সার্ভারে যাওয়ার আগে পরিবর্তন করে নেয়। এই সময়ে রনি সার্ভেরের সঙ্গে ওই এটিএম বুথের সঙ্গে সার্ভার সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন করে দিতো। এতে চক্রের সদস্যরা টাকা তুলে নিলেও তার কোনো ধরনের প্রমাণ থাকতো না। এই টাকা তুলে নেয়ার পরে চক্রের সদস্যরা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কার্ড থেকে টাকা চলে গেছে উল্লেখ করে অভিযোগ করতো। যেহেতু সার্ভারে টাকা তুলে নেয়ার কোনো তথ্য থাকতো না তাই ব্যাংক গ্রাহকের ক্ষতি পূরণ হিসেবে আবার ২০ হাজার টাকা জমা করে দিতো। আর এভাবেই দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিলো এ চক্রটি। গত চার বছরে এই চক্রটি ৬৩৭ টি ব্যাংক একাউন্ট থেকে ১ হাজার ৩৬৩ টি লেনদেনে দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকা উঠিয়ে নেয়।

 

যা বলছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ

ডাচ-বাংলা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রনি ২০১০ সালে এই ব্যাংকের এটিএম শাখায় অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর থেকে তিনি গত ১১ বছর একই স্থানে কাজ করে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে বিদেশে পালিয়ে থাকা রনি নিজের স্ত্রীর নামে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার একটি বড় অংশ জমা করেছেন। আয়ের একটি অংশ সহযোগীদের ভাগ করে দিয়েছেন।

 

প্রতারণার বিষয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মশিউর রহমান  বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের একটি অডিট রিপোর্টে বিপুল টাকার প্রতারণার বিষয়টি টের পায়। এরপর এটিএম শাখার সিনিয়র অফিসার মীর মো. শাহরুজ্জামান ওরফে রনিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু রনি এর কোনো উত্তরই দেননি। এমন কি এরপর থেকে তিনি অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেন। রনির পক্ষ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

 

মামলা দায়ের হওয়ার পরই দেশে ছেড়ে পালিয়ে যান চক্রের মূল হোতা রনি। দেশে থেকে যান তার স্ত্রী ও সহযোগীরা। পরে গোয়েন্দা পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের তদন্তে বেরিয়ে আসে চক্রের প্রতারণার কৌশল। গ্রেপ্তার হন রনির অন্যতম সহযোগী আল-আমিন বাবুসহ অন্যরা। এই চক্রটি প্রতিটি লেনদেন করতো ২০ হাজার টাকার। তারা এর বেশি কখনো টাকা তুলতো না। আবার অভিযোগের সময়েও তারা ২০ হাজার টাকার কথা বলতো।

 

(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/১৭ জুন ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ