শনিবার, অক্টোবর ১২ ২০২৪ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল | ৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

গুজব ছড়ানোর ৬টি কৌশল এবং সেগুলো যাচাইয়ের সহজ পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: মিথ্যা বা বিকৃত (ম্যানিপুলেটেড) ছবি উন্মোচন করা কঠিন কিছু নয়। এজন্য কিছু টুলের ব্যবহার এবং কৌশল জানা থাকতে হয়।

 

জিআইজেএন এর এই টিউটোরিয়ালে গুজব বা ভুয়া খবর ছড়ানোর ছয়টি পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা হবে এবং ধাপে ধাপে সেগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের নির্দেশনা দেওয়া হবে:

  • ১. ছবিতে কারসাজি — গুগল রিভার্স সার্চ এর মত টুল ব্যবহার করে সহজে ছবি যাচাই।
  • ২. বানোয়াট ভিডিও — এই ধাপে রয়েছে গভীরভাবে ভিডিও পর্যবেক্ষণ এবং আসল ভিডিও খুঁজে বের করা।
  • ৩. সত্যের বিকৃত উপস্থাপন — বিভ্রান্তিকর শিরোনামের দিকে খেয়াল রাখা, স্বীকৃত তথ্যের আকারে মতামত উপস্থাপন করা, বিকৃতি, কাল্পনিক তথ্য এবং সত্য এড়িয়ে যাওয়াসহ খুঁটিনাটি।
  • ৪. নকল ও কাল্পনিক বিশেষজ্ঞ, ভুয়া বক্তব্য — যেভাবে তাদের পরিচয় এবং বক্তব্য যাচাই করতে হবে।
  • ৫. গণমাধ্যমের অপব্যবহার — মূলধারার গণমাধ্যম উদ্ধৃত করে মিথ্যা দাবির দিকে খেয়াল রাখা।
  • ৬. তথ্য বিকৃতি — গবেষণা পদ্ধতি (মেথোডোলজি), প্রশ্ন, গ্রাহক, ইত্যাদি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা।

১. ছবিতে কারসাজি

ছবি বিকৃত করা বা ম্যানিপুলেশন হচ্ছে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায়। কিন্তু এটা যাচাই করার পদ্ধতিও সবচেয়ে সহজ।

ছবি ম্যানিপুলেশনের দুইটি সাধারণ পদ্ধতি রয়েছে।

 

প্রথমটি হচ্ছে অ্যাডোবি ফটোশপের মতো বিশেষ কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবি সম্পাদনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অন্য কোনো স্থানের বা সময়ের আসল ছবি ব্যবহার করা। দুই ক্ষেত্রেই, সত্য উদঘাটনের সুযোগ রয়েছে।

কখন এবং কোথায় ছবিটি তোলা হয়েছে এবং এটাকে কোনো সফটওয়্যারের মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে কিনা, তা খুঁজে বের করা সম্ভব।

১.১ ছবি এডিট করা

এটি অ্যাডোবি ফটোশপ ব্যবহার করে এডিট করা একটি মিথ্যা ছবি:

রাশিয়ায় ফেইসবুকের মত একটি সামাজিক মাধ্যম আছে, যার নাম ভিকনতাক্তে। উপরের ছবিটি তার একটি স্ক্রিনশট। রাশিয়ার সরকারপন্থী একটি গ্রুপ তাদের পেইজে এই পোস্ট দেয়। ২০১৫ সালে ছড়ানো ছবিটিতে দেখা যায়, একটি সদ্যজাত শিশুর হাত কেটে একটি স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়েছে। ক্যাপশন হচ্ছে: “স্তব্ধ! দিনিপ্রোপেত্রভস্ক এর একটি মাতৃকালীন হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, শিশুটির মা দোনবাস এলাকার একজন উদ্বাস্তু এবং এক নিহত মিলিশিয়ার স্ত্রী। এরপর তারা শিশুটির হাতে স্বস্তিকা চিহ্নের মতো করে কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিন মাস পরেও ক্ষতটি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।”

 

কিন্তু ছবিটি নকল। আসল ছবি সহজেই ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায় এবং সেখানে শিশুটির হাতে কোনো ক্ষত নেই।

 

একটি ছবি যাচাই করার সবচেয়ে সহজ উপায় হছে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ। গুগলের এই সেবা অনেক কাজে লাগে, যেমন সদৃশ ছবি এবং ভিন্ন আকৃতির একই ছবি সার্চ করা। কোনো ছবির ওপর ক্লিক করে, তাকে টেনে নিয়ে, গুগল ইমেজেস পেইজের সার্চ বারের ওপর এনে ছেড়ে দিলেই গুগল সেই ছবি ব্যবহার করে অনুসন্ধান চালায়। অ্যাড্রেস বারে ছবির অ্যাড্রেসটি কপি করে পেস্ট করলেও হয়। টুলস মেনু থেকে “ভিজুয়ালি সিমিলার” বা “মোর সাইজেস” অপশন বাছাই করা যায়।

“মোর সাইজেস” অপশনটি ব্যবহার করার পর আমরা ২০০৮ সালের একটি লেখা খুঁজে পাই। এখানেও অরিজিনাল ছবি পাওয়া যায় না, কিন্তু এটা প্রমাণ করে, ছবিটি কোনভাবেই ২০১৫ সালে তোলা নয় এবং শিশুটির হাতে কোনো স্বস্তিকা চিহ্নও নেই।

 

এবার আরও জটিল একটি ভুয়া ছবি দেখা যাক। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ইউক্রেনীয় সৈনিক আমেরিকার পতাকায় চুমু খাচ্ছে। ছবিটি ২০১৫ সালে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা দিবসের আগে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটি প্রথম দেখা যায় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ওয়েবসাইটে, ‘ক্রীতদাসের দিন‘ নামের একটি লেখায়।

এটিকে কয়েকটি ধাপে ভুল প্রমাণ করা যায়।

 

প্রথমত, ছবিটি থেকে সংযুক্ত তথ্যগুলো (সূচী, শিরোনাম, ফ্রেইম ইত্যাদি) বাদ দিয়ে দিতে হবে, কারণ এটি সার্চ ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। এই ক্ষেত্রে, জেটস্ক্রিনশট (ম্যাক ভার্সন) নামের একটি ফ্রি টুল ব্যবহার করে নিচের ডান পাশের “ডিমোটিভেটর” শব্দটি মুছে দেওয়া যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত, লুনাপিক বা এরকম কোন মিরর ইফেক্ট টুল ব্যবহার করে ছবিটি ঘুরিয়ে দেখতে হবে এবং সেইভ করে রাখতে হবে।

 

তারপর ছবিটি গুগল ইমেজেস বা অন্য কোন রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল ব্যবহার করে যাচাই করুন। এই পদ্ধতিতে ছবিটি আসল না এডিট করা, তা খুঁজে বের করা যায় এবং ছবিটির আসল তারিখ, স্থান ও প্রকাশ করার পটভূমি সম্পর্কে জানা যায়।

 

ছবিটি আসলে তোলা হয়েছিল ২০১০ সালে তাজিকিস্তানে এবং যে সৈনিকটি পতাকায় চুমু খাচ্ছেন, তিনি একজন তাজিক কাস্টমস কর্মকর্তা। তার আস্তিনের ইউক্রেনীয় পতাকাটি পরে এডিট করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এবং মিরর ইফেক্ট ব্যবহার করে ছবিটি আনুভূমিকভাবে উল্টে দেওয়া হয়েছে।

 

মাঝে মাঝে গুগল সার্চও ছবির উৎস খুঁজে বের করার জন্য যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে টিনআই নামের আরেকটি রিভার্স সার্চ টুল ব্যবহার করা যেতে পারে।

টিনআই এবং গুগল এর প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, টিনআই হুবহু অথবা এডিট করা ছবিও খুঁজে বের করে। এই পদ্ধতিতে ক্রপ করা বা একটির ওপর আরেকটি বসানো ছবিও খুঁজে বের করা যায়। একই সাথে, যেখানে ছবিগুলো প্রকাশ করা হয়েছে, সেখান থেকে ছবির উপাদান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

 

এই ছবিটি টুইটারে দশ হাজারেও বেশিবার রিটুইট এবং লাইক করা হয়েছে। এখানে দেখা যায় গম্ভীর পুতিনকে ঘিরে রয়েছেন বহির্বিশ্বের কিছু শীর্ষ নেতা। তারা পুতিনের দিকে তাকিয়ে গভীর মনোযোগে তার কথা শুনছেন। কিন্তু ছবিটি ভুয়া।

 

মূল ছবিটি টিনআই দিয়ে খুঁজলে পাওয়া যায়। সার্চ বারে ছবিটির অ্যাড্রেস লিখুন অথবা হার্ডড্রাইভে থাকা ছবিটি ক্লিক করে টেনে নিয়ে এসে ছেড়ে দিন। আপনি “বিগেস্ট ইমেজ” অপশনটি ব্যবহার করে মূল ছবিটি সহজে খুঁজে পেতে পারেন, কারণ প্রতি এডিটেই ছবির আকার ছোট হয় এবং ছবির মান খারাপ হয়ে যায়।

দেখা যাচ্ছে যে ছবিটি নেওয়া হয়েছে তুরস্কের একটি ওয়েবসাইট থেকে।

অন্যান্য টুলবার অপশন যেমন বেস্ট ম্যাচ, নিউয়েস্ট, ওল্ডেস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি মোস্ট চেইঞ্জড নামের অপশন ব্যবহার করে ছবিটিতে কী কী এডিট করা হয়েছে, সেটিও আপনি খুঁজে বের করতে পারেন।

আপনি ডোমেইন নির্দিষ্ট করে দিয়েও সার্চ ফলাফল ফিল্টার করতে পারেন – যেমন, টুইটার বা অন্য সাইট, যেখানে ছবিটি দেখা গেছে।

 

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যাঙ্গ করার জন্য তৈরি করা এরকম আরেকটি জটিল ভুয়া ছবি অনলাইনে দেখা যায়। সেখানে ছবি বিকৃত করে তাকে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

এটা ২০১৭ সালের অক্টোবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে যায়, এবং দাবি করা হয় যে প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে নাখোশ এবং তিনি চাননা, এটি ছড়িয়ে যাক। যদিও, ছবিটি ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই, ভিক বার্জার নামের একজন ভাইরাল ভিডিও নির্মাতা প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশ করেন।

প্রথমে মিরর ইফেক্ট টুল এবং পরে টিনআই ব্যবহার করে ছবিটির উৎস বের করা সম্ভব:

 

বার্জার এটা তৈরি করতে যে ছবি ব্যবহার করেন, সেটি ২০১১ সালে গেটি ইমেজেস এর চিত্রগ্রাহক ম্যাথিউ ক্যাভেনাও তুলেছিলেন। বার্জার মূল ছবিটি ঘুরিয়ে, ট্রাম্পের গলা বড় করে ত্বকের রঙ কিছুটা পাল্টে দেন।

ছবি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য এডিট বিশ্লেষণকারী প্রোগ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। এদের মধ্যে ফটোফরেনসিকস সবচেয়ে ভালো।

 

২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি রশিয়া ওয়ান এর সান্ধ্যকালীন সংবাদ অনুষ্ঠান ভেস্তি তে বলা হয়, ইউক্রেনের রাজনৈতিক দল সভোবোদা, হিটলারের ছবিযুক্ত একটি নতুন ১০০০ রিভনিয়ার ব্যাংকনোট প্রস্তাব করেছে।

এটা মিথ্যা। ছবিটির মূল উৎস ছিল পিকাবু ডট আরইউ ওয়েবসাইট, যেখানে ফটোশপে এডিট করা এই ছবিটি “ব্যঙ্গ” এবং “কৌতুক” ট্যাগ দিয়ে প্রকাশ করা হয়।

এই ব্যাংকনোটের মূল ডিজাইনটিতে ইউক্রেনিয়ান লেখক পান্টেলেইমন কুলিশ কে দেখা যায়।

ফটোফরেনসিকস এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেখায় যে হিটলারের ছবিসহ ব্যাংকনোটটি এডিট করা। মূল ছবির একটি অংশ মুছে সেখানে হিটলারের ছবি  এবং মূল্যমান বসানো হয়।

 

ফটোফরেনসিকস এমন একটি ওয়েবসাইট যেখানে এরর লেভেল অ্যানালাইসিস (ইএলএ) ব্যবহার করে ছবির কোন অংশ এডিট করা, তা বের করা যায়। ছবিটি বিশ্লেষণ করার পর, এই প্রোগ্রাম একটি নতুন ছবি উৎপাদন করে, যেখানে এডিট করা অংশগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেখানো হয়।

একই সাথে, প্রোগ্রামটি ছবির এক্সিফ-ডেটা (বা মেটাডেটা) প্রকাশ করে। প্রতিটি ছবিতেই কয়েক প্রকারের প্রাসঙ্গিক তথ্য এনকোড করা থাকে।

অন্যান্য তথ্যের মধ্যে মেটাডেটা তে আপনি পাবেন:

  • মূল ছবিটি তোলার তারিখ ও সময়।
  • ছবির ভৌগলিক অবস্থান।
  • ক্যামেরার মডেল এবং ছবি তোলার সময়ের ক্যামেরা সেটিংস (এক্সপোজার, অ্যাপার্চার ইত্যাদি)
  • কপিরাইট তথ্য।

উদাহরণস্বরূপ, বেলিংক্যাট এর অনুসন্ধানীরা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট এমএইচ১৭ এর ছবি যাচাই করার জন্য এটি ব্যবহার করেছিলেন। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই স্থানীয় সময় বিকাল ৪:২০ এ পূর্ব ইউক্রেনের আকাশে ২৯৮ যাত্রী এবং কর্মীসহ বিমানটিকে আঘাত করে ধ্বংস করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর নিচের ছবিটি টুইটারে আসে:

 

@WowihaY তার টুইটে বর্ণনা করেন, কীভাবে, পূর্ব ইউক্রেনের দখলকৃত তোরেজ শহরের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা থেকে নিক্ষেপ করা মিসাইলের ধোঁয়ার ছবিটি, তাকে পাঠিয়েছেন একজন প্রতক্ষ্যদর্শী। মেটাডেটা দেখাচ্ছে, ক্যামেরার ঘড়ির সময় অনুযায়ী ছবিটি বিকাল ৪:২৫ এ (বিমান ধ্বংস হওয়ার ৫ মিনিট পর) তোলা।

অবশ্য, এই প্রক্রিয়া শতভাগ সঠিক তথ্যের নিশ্চয়তা দেয়না। কারণ বেশিরভাগ মেটাডেটাই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করার সময় মুছে যায়।

এই ছবির ফলাফলে মূল ছবির মেটাডেটা নেই, কারণ এটি একটি স্ক্রিনশট। সামাজিক মাধ্যমগুলোর ছবিগুলোর ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটে।

এই অসুবিধার পরেও সার্চ ফলাফলে বেশ কিছু গুরত্বপূর্ণ তথ্য যোগ করে মেটাডেটা।

১.২ আসল ছবি, কিন্তু ভিন্ন সময়ে বা স্থানে তোলা

কোনো ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের জন্যেও বিকৃত করা হয়।

২০১৪ সালে ইজরায়েলে তোলা একটি ছবিকে, সম্প্রতি ২০১৫ সালে পূর্ব ইউক্রেনে তোলা ছবি বলে দাবি করে প্রকাশ করা হয়।

নকল ছবিটি প্রথম আবিষ্কার করেন ইজরায়েলি সাংবাদিক এবং ইউক্রেন-বিশেষজ্ঞ শিমন ব্রাইম্যান

একটি ছবির বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য শিরোনাম বা এ জাতীয় অতিরিক্ত তথ্য বাদ দিয়ে যেকোনো রিভার্স সার্চ ব্যবহার করা যায়। টিনআই এর “ওল্ডেস্ট” অপশনটি এক্ষেত্রে বেশ কার্যকর, এটি দিয়ে সার্চ করার পর ওই তারিখের এক বছর আগের অন্তত দুইটি ইজরায়েল সম্পর্কিত ফলাফল পাওয়া যায়।

অবশ্য সবসময় এভাবে ছবির উৎস খুঁজে পাওয়া যায়না। কিন্তু এরকম ফলাফল সবসময়ই আরো গভীর অনুসন্ধানের জন্য একটি সূত্র হিসাবে কাজ করে।

সার্চ ফলাফলের পঞ্চম ছবিটি ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই একটি ইজরায়েলি পত্রিকা থেকে পাওয়া, যেখানে বিস্তারিত বলা আছে, কখন এবং কোথায় ছবিটি তোলা হয়েছে। বিয়ার শেভাতে একটি রকেট আক্রমণের সময়, শিরা দে পোর্তো নামের একটি মেয়ে তার ফোনে ছবিটি তোলে। যেখানে, শিশুটির বাবা এবং আরেকজন মানুষ, তাকে নিজেদের শরীর দিয়ে ঢেকে রেখেছে।

 

সামাজিক মাধ্যমে যদি কোন সন্দেহজনক ছবি দেখা যায়, তাহলে এমবেডেড টিনআই সার্চ ব্যবহার করা যেতে পারে।

যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফরের সময় সামাজিক মাধ্যম এবং কিছু রুশপন্থী ওয়েবসাইটে ইউক্রেনের মন্ত্রিসভা ভবনের সামনে কিছু মানুষের হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকার ছবি প্রকাশিত হয়। ছবির ক্যাপশনে দাবি করা হয় যে এই মানুষগুলো কিয়েভে বসবাসকারী এবং তারা বাইডেনের কাছে আবেদন করছেন, যেন তিনি ইউক্রেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়াতসেনিউকের হাত থেকে তাদেরকে বাঁচান।  ছবিটি প্রথমবার প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর।

টিনআই ব্যবহার করে স্টপফেইক খুঁজে বের করে, এই ছবিটি ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি টুইটারে #ইউরোমেইডেন হ্যাশট্যাগসহ প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রসঙ্গ বোঝার জন্য টুইটার সার্চ টুলও ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমে “সার্চ ফিল্টারস” এ ক্লিক করে তারপর “অ্যাডভান্সড সার্চ” এ যেতে হবে।

তারপর আপনি যেকোনো তথ্য দিতে পারেন – এইক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে ওই হ্যাশট্যাগ এবং জানুয়ারি ১৮, ২০১৫ তারিখটি।

প্রথম সার্চ ফলাফলে মূল টুইট এবং ছবিটি পাওয়া যায়। এটা ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রুশেভস্কি স্ট্রিট অফ কিয়েভ এ তোলা। সেদিন হাজার হাজার মানুষ ২০১৩ সালের ইউরোমেইডেন আন্দোলনের ভিকটিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাস্তায় জড়ো হয়েছিল।

টিনআই এবং গুগল ইমেজেস ছাড়াও আরও বেশ কয়েক রকমের টুল রয়েছে, যেমন বাইডু (চাইনিজ কন্টেন্ট এর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে), ইয়ান্ডেক্স এবং ফটোফরেনসিকস এর মতো মেটাডেটা অনুসন্ধান টুল।

যদি ছবি যাচাইয়ের কাজে এই টুলগুলো ঘনঘন ব্যবহার করতে হয়, তাহলে আইএমজিঅপস  আপনার কাজে আসতে পারে। আইএমজিঅপসে উপরোক্ত টুলগুলোর সবই আছে, এমনকি নিজস্ব টুলও এখানে যুক্ত করা যায়। এরকমই আরেকটি হচ্ছে ইমেজরেইডার ডট কম। এটি টিনআই এর মতোই কিন্তু বেশ কিছু ভিন্ন সুবিধা রয়েছে, যেমন, একই সাথে একাধিক ছবি বিশ্লেষণ করা, সার্চ ফলাফল থেকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বাদ দিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।

 

সারাংশ

  • সবচেয়ে বেশি রেজুল্যুশন এবং বড় আকারের ছবির দিকে মনোযোগ দিন। প্রতিবার এডিট করার সময় ছবির রেজুল্যুশন কমতে থাকে। তার মানে, সবচেয়ে বড় আকার বা সবচেয়ে ভালো রেজুল্যুশনের ছবিটি সবচেয়ে কম এডিট করা হয়েছে। এটাই ‘মূল’ ছবির বৈশিষ্ট্য।
  • প্রকাশের তারিখের দিকে মনোযোগ দিন। সবচেয়ে পুরনো তারিখের ছবিটিই মূল ছবি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • ছবির ক্যাপশনগুলো বারবার পড়ুন। একই রকম দুইটা ছবির বর্ণনা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
  • মিথ্যা ছবি যে কেবল ক্রপ করা বা এডিট করাই হতে হবে, তা না; উল্টে দেওয়াও (মিরর ইফেক্ট) হতে পারে।
  • চাইলে ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ডোমেইন নির্দিষ্ট করে সার্চ করতে পারেন।

২. বানোয়াট ভিডিও

সোশাল মিডিয়ার এই যুগে ছবির মতোই প্রচুর ফেইক ভিডিও আমাদের সামনে আসে, যেখানে কোনো ব্যক্তি, স্থান, ঘটনা, সময় ইত্যাদি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়। কিন্তু ফেইক ভিডিওর তথ্য উদ্ঘাটন করা বা নিশ্চিত হওয়া বেশ কঠিন। ভিডিওটি ভুয়া কিনা তা বোঝার জন্য প্রথমে ভালো করে সেটি দেখে, তার ডিটেইলসের দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। তাতে কোন সন্দেহজনক ‘কাট’ বা জোড়া আছে কিনা বা কোন সন্দেহজনক মুহূর্ত আছে কিনা যেটা দেখে সত্য বলে মনে হয়না, সেগুলো সতর্কভাবে খেয়াল করতে হবে। ভিডিও এডিট করে পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা, তা সতর্কভাবে দেখলে আমরা বুঝতে পারবো।

 

সবচেয়ে সতর্কভাবে দেখতে হবে ছায়া, প্রতিবিম্ব এবং ভিডিওর বিভিন্ন উপাদানের শার্পনেস এর পরিমাণ। ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে, তা বোঝা যেতে পারে গাড়ির নাম্বারপ্লেট, দোকানের চিহ্ন বা নাম, রাস্তার নাম ইত্যাদি দেখে। ভিডিওতে কোন অদ্ভুত বা অন্যরকম ভবন বা স্থাপনা আছে? থাকলে সেটা গুগল ম্যাপস এ স্ট্রিট ভিউ মোডে গিয়ে চেক করে দেখা জরুরী।

 

আপনি চাইলে কোন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় আবহাওয়া কেমন ছিল, সেটাও ওয়েদার ফোরকাস্টিং ওয়েবসাইটের আর্কাইভ থেকে জানতে পারবেন। যদি ভিডিওতে দেখেন যে কোন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু আপনি চেক করে দেখলেন যে সেখানে সে সময়ে রোদ থাকার কথা ছিল, তাহলে ধরে নেবেন সেই ভিডিও বিশ্বাসযোগ্য না।

 

এরকম আবহাওয়া চেক করার একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড। এখানে আপনি আর্কাইভ থেকে কোন নির্দিষ্ট জায়গার নির্দিষ্ট সময়ের আবহাওয়া কেমন ছিল, তা জানতে পারবেন।

ভিডিওসহ ফেইক নিউজ তৈরি করতে নিচের এই পদ্ধতিগুলোই সাধারণত ব্যবহার করা হয়।

২.১ পুরানো ভিডিও ব্যবহার করে নতুন ঘটনার জন্ম দেওয়া

২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার তিনটি টার্গেটে বিমান হামলার অভিযোগ আনা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচুর ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করা হয়। যেমন এই ভিডিওতে ভোরবেলা আকাশপথে দামাস্কাসের জামরায়া রিসার্চ সেন্টারের ওপর এমনই এক তথাকথিত আক্রমণের ঘটনা দেখা যায়।

 

অনেকসময় দেখা যায় যে কোন একটি সংবাদে একটি ভিডিও এমবেড করা থাকে। সেই ভিডিওর অরিজিনাল সোর্স যদি হয় ফেইসবুক, টুইটার বা ইউটিউব, তাহলে সেই ভিডিওটির অরিজিনাল পোস্টে গিয়ে আপনি সেখানকার কমেন্টগুলো পড়তে পারেন। টুইটার, ফেইসবুক বা ইউটিউবের অনলাইন দর্শকরা খুবই সক্রিয়। কমেন্ট সেকশনে আপনি এমন তথ্য পেয়ে যেতে পারেন, যেটা আপনাকে সংবাদ এবং ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।

 

এর মাধ্যমে আমরা অরিজিনাল ভিডিওর মূল উৎস বা সরাসরি মূল ইউটিউব ভিডিওটির লিঙ্কই পেয়ে যেতে পারি। এই অরিজিনাল ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার স্থান ঠিকই আছে, কিন্তু সেটা ঘটেছিল ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। এবং তার জন্য দায়ী ছিল ইজরায়েল।

 

ভিডিও যিনি পোস্ট করেছেন, আপনি তার প্রোফাইল থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। কারণ সেখানে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পূর্ববর্তী সোশাল মিডিয়া কার্যকলাপ দেখতে পাবেন। সে যদি আগেও সন্দেহজনক কোন পোস্ট বা মিথ্যা পোস্ট দিয়ে থাকে, তাহলে তার ভিডিওর ওপর সন্দেহ আরও বাড়বে।

 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইউটিউব ডেটাভিউয়ার নামের একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে আপনি অরিজিনাল ইউটিউব পোস্ট খুঁজে বের করতে পারবেন। এই সাইট আপনাকে কোনো ভিডিও আপলোডের প্রথম তারিখটি নির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারে।

 

এবার উপরে উল্লিখিত ঘটনার মূল ভিডিওটি আপলোড করার সময় সম্পর্কে ইউটিউব ডেটাভিউয়ার থেকে জানা যাক। নিচের ছবিতে আমরা দেখতে পাই, তারা ভিডিওটি আপলোড করার তারিখ এবং সময়, নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করছে এবং ২০১৩ সালে আপলোড করার বিষয়টি এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।

 

ভিডিও ভেরিফিকেশনের পরবর্তী ধাপটি ছবি ভেরিফিকেশনের মতোই। সেটা হচ্ছে রিভার্স ইমেজ সার্চ। ভিডিওর মূল বা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল ইমেজেস বা টিনআইতে সেগুলো দিয়ে সার্চ করতে হবে। অবশ্য, আপনি আরও সহজে কাজটি করতে পারেন। ইউটিউব ডেটাভিউয়ার ভিডিওর যে থাম্বনেইল দেখায়, সেগুলো দিয়ে আপনি মাত্র এক ক্লিকেই সার্চ করতে পারেন।

 

২০১৮ এর ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্স ২৪ এর অবজার্ভাররা একটি ভিডিওর সত্যতা উদ্ঘাটন করে, যেখানে দেখা যায়, কিছু তুর্কী জঙ্গি বিমান সিরিয়ার আফরিনে বোমা হামলা করছে। একটি এফ১৬ বিমানের ককপিট থেকে ধারণ করা এই ভিডিও ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি একাধিক ইউটিউব অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়।

তারা ইউটিউব ডেটাভিউয়ারে বিষয়টি যাচাই করে এবং তাতে ফলাফল আসে এরকম:

দেখা যাচ্ছে, মূল ভিডিওতে ক্যামেরার পেছনের টার্কিশ ভাষার কথাগুলো নেই। এটা পরে যোগ করা হয়েছে। এই ভিডিওর পেছনের ‘সত্য’ হচ্ছে, এটি আমস্টার্ডামে অনুষ্ঠিত একটি এভিয়েশন ডিসপ্লের সময়ে ধারণ করা।

২.২ ভিডিওর অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার

কোনো ভিডিওকে মিথ্যা বলে প্রমাণ করার জন্য মাঝে মাঝে আনুষঙ্গিক আরো তথ্য খুঁজে বের করতে হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৫ সালের ২২ অগাস্ট ইউটিউবে প্রকাশ করা এই ভিডিওর কথা। এটি আটটি দেশে ছড়িয়ে গিয়েছিল। তাতে দেখা যায়, গ্রিস এবং মেসিডোনিয়ার সীমান্তে মুসলিম অভিবাসীরা রেড ক্রসের দেওয়া ত্রাণ-খাদ্য হারাম বলে প্রত্যাখ্যান করছে। কারণ, তাতে ‘ক্রস’ চিহ্ন ছিল।

এরকম ভিডিও সম্পর্কে আরও আনুষঙ্গিক তথ্য পাওয়ার জন্য শক্তিশালী একটি রিভার্স সার্চ টুল আছে, সেটা হলো ইনভিড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন টুইটার, ফেইসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, ভিমিও, ডেইলিমোশন, লাইভলিক বা ড্রপবক্সের ভিডিও আপনি এর মাধ্যমে যাচাই করতে পারেন। আপনার ব্রাউজারে ইনভিড প্লাগইন ডাউনলোড করুন। তারপর কোন ভিডিওর লিঙ্ক কপি করে ইনভিড এর “কি-ফ্রেম” উইন্ডো তে পেস্ট করুন। তারপর “সাবমিট” এ ক্লিক করুন।

তারপর যে ফলাফল আসবে, তার থাম্বনেইলে এক এক করে ক্লিক করে রিভার্স ইমেজ সার্চ দিয়ে খুঁজতে থাকুন।

আসলে, সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে দুঃখ-দূর্দশার মধ্যে অপেক্ষায় থাকতে বাধ্য করার প্রতিবাদে, অভিবাসীরা সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ইতালিয়ান সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে মানবাধিকার কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে, এ ব্যাপারে লিখেছিলেন। যেই সাংবাদিক ঘটনাটি ভিডিও করেন, তিনি আমাদেরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওয়েবসাইটে এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল “সীমান্ত পার হতে না পেরে সারা রাত বৃষ্টিতে আটকে থাকার প্রতিবাদে খাদ্য-সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে শরণার্থীরা।”

এ ধরণের ফেইক পোস্টের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, গ্লোরিয়া ডট টিভিতে প্রকাশিত জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের ভিডিওটি। ৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, জার্মান চ্যান্সেলর কেবল একটি কথাই বলছেন। ভিডিওর শিরোনাম হচ্ছে “অ্যাঙ্গেলা মার্কেল: জার্মানিকে বিদেশীদের হিংস্রতা মেনে নিতে হবে।”

কিন্তু সত্য হচ্ছে, কথাটি প্রসঙ্গ ছাড়া উদ্ধৃত করা হয়েছে এবং শিরোনামটি বক্তব্যের অর্থ উল্টে দিয়েছে। এটি খুঁজে বের করে বাজফিড নিউজ অ্যানালাইসিস। এ ব্যাপারে তাঁর পুরো বক্তব্যটি ছিল:

বিষয়টা হচ্ছে স্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং একই সাথে সমাজের হিংস্রতার কারণগুলো দূর করা। সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য, কিন্তু আমাদের এটা মানতেই হবে যে অপরাধের প্রবণতা কমবয়সী অভিবাসীদের মধ্যেই বেশি। সেখান থেকে, একীভবনের এই ধারণাটি সমাজের সকল ক্ষেত্রের হিংস্রতা দমনের সাথেই যুক্ত।

জার্মান ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইট মিমিকামা লিখেছে, এই ভিডিও ২০১১ সালের একটি প্লটের অংশ ছিল।

এমন ভিডিওর উৎস খুঁজে বের করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে গুগল এর মতো সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা।

আবার অনেক সময়, কোনো একটি ভিডিও থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়ে প্রসঙ্গ ছাড়াই আলাদা করে পোস্ট করা হয়। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই অর্থ বদলে যায় এবং সেটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

২.৩ সম্পূর্ণ একটি ফেইক ভিডিও তৈরি করা

এমনও হতে পারে, উপরের কোনো পদ্ধতিতে না গিয়ে একটি সম্পূর্ণ ফেইক ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিডিও তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর জন্য অনেক অর্থ, প্রযুক্তি ও সময় প্রয়োজন। যেমনটা দেখা যায়, রুশ প্রোপাগান্ডা তৈরির ক্ষেত্রে।

 

একটি উদাহরণ হচ্ছে ইউক্রেনের স্পেশাল অপারেশনস রেজিমেন্ট ‘আজভ’-এ, জঙ্গি দল ইসলামিক স্টেট সদস্যদের উপস্থিতির তথাকথিত ‘প্রমাণ’। এটি ‘সাইবারবেরকাট’ নামের একটি হ্যাকার দলের উদ্ঘাটিত তথ্য বলে উপস্থাপন করা হয়। সাইবারবেরকাট হ্যাকাররা দাবি করেন, আজভ রেজিমেন্টের এক সৈনিকের স্মার্টফোনে প্রবেশ করে, তারা বিষয়টি খুঁজে পেয়েছেন।

 

তারা ছবির ভৌগলিক অবস্থান বা হ্যাক করার প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুই জানাননি। কিন্তু উইকিম্যাপিয়ার জিওগ্রাফিক সার্ভিস ব্যবহার করে ছবির অবস্থান বের করেছে বিবিসি

 

আপনি চাইলে অন্যান্য ম্যাপিং সার্ভিস যেমন গুগল ম্যাপস ব্যবহার করে ছবির বা ভিডিওর দৃশ্যমান অবস্থানের সাথে সত্যিকারের অবস্থান তুলনা করে দেখতে পারেন। যেখানে সম্ভব, সেখানে গুগল স্ট্রিট ভিউ সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারেন।

ওই ঘটনার সত্যিকার অবস্থান ছিল পুর্ব ইউক্রেনের দখল করে রাখা আইসোলিয়াতসিয়া আর্ট সেন্টার।

ফেইক ভিডিও বেশিরভাগ সময়েই দুর্বল আর জড়তাপূর্ণ, তাই এগুলো উন্মোচন করাও সহজ। শুধু একটু মনোযোগী হলেই যথেষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, পূর্ব ইউক্রেনের দোনেতস্ক অঞ্চলের ক্রামাতরস্ক শহরের স্কুলগুলোতে “রাইট সেক্টর” সৈনিকরা “রুশ ভীতির শিক্ষা” দিচ্ছে – এমন একটি খবর ছড়াতে থাকে রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলো।

 

এই ভিডিও প্রথমে সামাজিক মাধ্যম, ইউটিউবে এবং পরবর্তীতে রুশ মূলধারার গণমাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। একজন স্কুল ছাত্র ঘটনাটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করে বলে ধারণা দেয়া হয়। ভিডিওতে ব্রিটিশ সামরিক পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে “রুশোফোবিয়া কী?” নামক অনুচ্ছেদটি ছাত্রদেরকে পড়তে বাধ্য করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এই ধরণের শিক্ষা রাশিয়ার ছেড়ে যাওয়া এলাকার সব শিক্ষাকেন্দ্রে থাকবে।

 

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা খেয়াল করেন, তাতে স্কুল ছাত্রদের বয়স স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে মনে হচ্ছে। ভিডিওর লোকটি “Thor mit uns” লেখা স্ট্রাইপওয়ালা কনডোর স্টাইলের সামরিক জ্যাকেট পরা, যা যে-কোনো অনলাইন দোকান থেকে কেনা যায়।

 

সত্যিটা হলো, ভিডিওটি একজন ক্রামাতরস্ক কর্মীর উস্কানি ছিল। তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, রাশিয়ার গণমাধ্যম কোনরকম যাচাই ছাড়াই এটা ব্যবহার করে কিনা। পরে এই ভিডিওর নির্মাতা আন্তন কিস্তোল স্টপফেইকের কাছে, তার খসড়া ভার্সন ও ভিডিও ধারণের স্থিরচিত্র প্রকাশ করেন।

 

এভাবে উপরে দেওয়া টুলগুলো সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে পারলে অনুসন্ধানী নজর এড়াতে পারবেনা ম্যানিপুলেটেড কোনো ভিডিওই।

 


৩. সত্যের বিকৃত উপস্থাপন

৩.১ সত্য সংবাদ মিথ্যা শিরোনাম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহু মানুষ পুরো সংবাদ না পড়ে শুধু শিরোনাম পড়েই সংবাদ শেয়ার করে। সত্যি সংবাদে একটি মিথ্যা শিরোনাম ব্যবহার করে প্রকাশ করা, ভুয়া খবর ছড়ানোর বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতির একটি।

 

আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে প্রসঙ্গ ছাড়াই কোনো উদ্ধৃতির অংশবিশেষ ব্যবহার করা।  যেমন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রুশ মিডিয়া ঘোষণা করে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনেছে। রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভস্তিভেস্তি এবং ইউক্রাইনা ডট আরইউ – তাদের খবরে দাবি করে, ইইউকে চক্রান্ত ও এমনকি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সন্দেহ করছে ইউক্রেন।

তারা ফাইনান্সিয়াল টাইমসকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ওলেনা জেরকালের দেয়া একটি সাক্ষাৎকার উদ্ধৃত করেন:

“এটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ্বাসযোগ্যতার পরীক্ষা… আমি এখন ডিপ্লোমেটিক হচ্ছিনা। বিষয়টা একরকম বিশ্বাসঘাতকতা বলেই মনে হয়… বিশেষত, যখন ভাবি, আমরা ইউরোপীয় আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কেমন মূল্য দিয়েছি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোন দেশেরই এতো মূল্য দিতে হয়নি।”

 

ওই সময়টাতে ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ দিতে ইইউ রাজি হয়েছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। ইউক্রেন সব ধরণের শর্ত পূরণ করার পরও এই প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে জেরকাল তার হতাশা প্রকাশ করছিলেন। তিনি আসলে ইইউকে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দায়ী করছিলেন না।

 

আরো একটি উদাহরণ দেওয়া যায় ফ্রি স্পিচ টাইম ব্লগ থেকে। ৬ মে ২০১৮ তারিখে “দেখুন: ট্রাম্পের ইউকে সফরের সময় মুসলমানদের দাঙ্গা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন, লন্ডনের মুসলিম মেয়র।” নামে একটি লেখা প্রকাশ করে তারা। লেখাটি শুরু হয়, এভাবে:

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইসলাম-ভিত্তিক ঘৃণা ছড়িয়েছেন লন্ডনের মুসলিম মেয়র। ইসলাম ধর্মের সমালোচনা এবং সন্ত্রাসীদের আমেরিকা প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য তিনি ট্রাম্পের প্রতি আক্রমণাত্মক কথা বলেন। এখন তিনি ট্রাম্পকে যুক্তরাজ্য না আসার জন্য হুঁশিয়ার করেন। তিনি এলে “শান্তির ধর্ম” পালনকারী “শান্তিপ্রিয়” মুসলিমরা দাঙ্গা, সমাবেশ এবং প্রতিবাদ করতে বাধ্য হবেন। সাদিক খান নিজেই ব্রিটিশ মুসলিমদের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ান। লন্ডনের মুসলিম মেয়রের জন্য যা লজ্জাজনক।

 

প্রমাণস্বরুপ সেই পোস্টে একটি ভিডিও রয়েছে। যাই হোক, সেই লেখায় শিরোনামের বক্তব্যের সমর্থনে কিছুই পাওয়া যায় না।  ভিডিওতে একটি সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ রয়েছে, যেখানে মেয়র খানকে বলতে দেখা যায়: “আমার মনে হয় এর প্রতিবাদ হবে। আমি সপ্তাহের প্রতিদিনই লন্ডনবাসীদের সাথে কথা বলি এবং আমার মনে হয় তারা তাদের বাকস্বাধীনতা প্রয়োগ করবে।”

 

এমন প্রতিবাদকে “সমর্থন” করছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: “তাদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণ এবং আইনানুগ হতে হবে – এটাই মূল বিষয়।” তিনি সেই ভিডিওতে “মুসলিম”, “মুসলিমগণ” বা “ইসলাম” শব্দগুলো একবারও উচ্চারণ করেননি, মারটেন শেংক লিড স্টোরিজ এ যেমনটা লিখেছেন।

 

কোন উক্তি যাচাই করতে হলে গুগল অ্যাডভান্সড সার্চ এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আপনি সময় এবং ওয়েবসাইট নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন। অনেক সময় প্রাথমিক উৎস থেকে সংবাদ সরিয়ে ফেলা হয়, কিন্তু অন্যান্য উৎসের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। গুগল ক্যাশ সার্চ ব্যবহার করে বা তারিখ ব্যবহার করে আর্কাইভে খুঁজে, আপনি সরিয়ে ফেলা উপাদানগুলো বের করে ফেলতে পারেন।

৩.২ মতামতকে প্রকৃত ঘটনা হিসাবে উপস্থাপন

যখন কোনো লেখা পড়ছেন, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: এটা কি প্রকৃত ঘটনা না কি কারো মতামত?

একটি রুশ মিডিয়া বলেছিল, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ন্যাটো থেকে তুরস্ককে বের করে দেওয়া হবে। ইউক্রাইনা লিখেছে: “তুরস্কের ন্যাটোর সদস্য হওয়া উচিৎ নয়; তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিৎ।” এই বক্তব্য অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন মেজর জেনারেল এবং ফক্স নিউজের সিনিয়র সামরিক বিশ্লেষক পল ভ্যালেলির।

 

স্টপফেইক ব্যাখ্যা দিয়েছে, ন্যাটো বা তার সদস্যদের হয়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা কোনো বিবৃতি দিতে পারেননা। ভ্যালেলি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসমূহের সমালোচক ছিলেন। ওবামা তুরস্কের পক্ষে কথা বলেছিলেন

৩.৩ তথ্য বদলে ফেলা

রাশিয়া টুডে নামক একটি নিউজ চ্যানেল রাবাই মিহাইল কাপুস্তিন এর বরাত দিয়ে প্রচার করে, ইউক্রেনের নতুন সরকারের ইহুদি-বিদ্বেষের কারণে ইহুদিরা কিয়েভে পালিয়ে যাচ্ছে।

 

কিন্তু একটি সাধারণ সার্চ দেখায় যে তিনি র‌্যাবাই (যাজক) ছিলেন মূলত ক্রিমিয়ার একটি সিনাগগের;  কিয়েভের কোনো সিনাগগের নয়। রাশিয়ার হাত থেকে ইউক্রেন এবং ক্রিমিয়াকে রক্ষার ডাক দিয়ে তিনি নতুন রুশ সরকারের ভয়ে ক্রিমিয়া ছেড়ে পালাচ্ছিলেন বলে জানতে পারে স্টপফেইক।

৩.৪ বানোয়াট তথ্যকে সত্য বলে প্রচার

সাধারণ সার্চের মাধ্যমেই সাধারণত মিথ্যা তথ্য উন্মোচন করা যায়।

অন্যতম একটি উদাহরণ হচ্ছে ইউক্রেনের তথাকথিত “ক্রুশবিদ্ধ বালক”। ২০১৪ সালে ক্রেমলিনের সরকারি টিভি চ্যানেল ওয়ান-এ একজন মহিলা এমন দাবি করেন। কিন্তু স্টপফেইক এর ভাষ্যমতে, এর পেছনে কোন প্রমাণ ছিল না। পরে জানা যায়, সেই মহিলা একজন রাশিয়াপন্থী জঙ্গির স্ত্রী।

 

২০১৭ সালে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে ইউক্রেনে তথাকথিত আইসিস প্রশিক্ষণ ক্যাম্প নিয়ে অনেক রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু স্টপফেইক জানায়, গুগল সার্চ করে তারা এর কোনো প্রমাণ পায়নি।

বানোয়াট সংবাদ প্রস্তুতকারীরা উদ্ধৃতি বিকৃত করার চেষ্টা করে, এমনকি সেগুলো তৈরিও করে।

 

ফেইসবুকের সাবেক উপনির্বাহী জেফ রথসচাইল্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি “ পৃথিবীর ৯০ শতাংশ মানুষ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ” চেয়েছেন। কিন্তু তথাকথিত উদ্ধৃতিটি প্রথম পাওয়া যায় অ্যানার্কেডিয়া ব্লগে, যার কোনো ভিত্তি নেই বলে জানায় তথ্য-যাচাইকরণ সাইট স্নোপস ডট কম

৩.৫ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এড়িয়ে সংবাদের প্রসঙ্গ বদলে ফেলা

২০১৭ সালের মার্চে বাজফিড একটি সংবাদ প্রকাশ করে যেখানে দাবি করা হয়, ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ভোলোদিমির গ্রয়সম্যান বলেছেন, ইউক্রেন তুরস্ককে সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের বিষয়ে সাহায্য করবে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইউক্রিনফর্ম এর একটি খবরের বরাত দিয়ে বাজফিড কন্ট্রিবিউটর ব্লেইক অ্যাডামস বলেন, ইউক্রেন তিনটি উদ্বাস্তু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে। সেখানে মিডল ইস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউ এর পরিচালক আইহর সেমিভোলোসকেও উদ্ধৃত করা হয়। কিন্তু সেমিভোলোস একটি ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, তিনি উদ্বাস্তু কিংবা উদ্বাস্তু কেন্দ্র সম্পর্কে কোনো কথাই বলেননি।

 

বাজফিডের সেই সংবাদে ভিসে নভোস্তি ব্লগের লেখক ইউরি কোভালের এবং মাইকোলা ডোব্রিনিউক নামের অপর একজনের ফেইসবুক পোস্টের কথা বলা হয়, যেখানে দুইজনই দাবি করেন, তুরস্ক থেকে সিরিয়ান উদ্বাস্তুদের নিতে রাজী হয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু সন্দেহজনকভাবে, কোভাল বা ডোব্রিনিউক, কারোই ইন্টারনেটে আর কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি।

স্টপফেইক এই মিথ্যা সংবাদ উদ্ঘাটন করার পর বাজফিড তাদের সাইট থেকে সেটি সরিয়ে ফেলে।

 


৪. নকল ও কাল্পনিক বিশেষজ্ঞ, ভুয়া বক্তব্য

মিথ্যাচারের পরবর্তী পদ্ধতিটি হলো নকল বিশেষজ্ঞ ব্যবহার করা বা আসল বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা।

৪.১ চেনা বিশেষজ্ঞ, অচেনা প্রতিষ্ঠান

প্রকৃত বিশেষজ্ঞরা সাধারণত নিজ এলাকা এবং পেশাদারী সমাজে সুপরিচিত হন। তাঁরা সতর্কতার সাথে নিজেদের খ্যাতি বজায় রাখার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, নকল বিশেষজ্ঞরা হঠাৎ হাজির হয়ে আবার উধাও হয়ে যান।

 

একজন বিশেষজ্ঞ আসল কিনা যাচাই করার জন্য – তার ইতিহাস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট, ওয়েবসাইট, লেখা, অন্যান্য গণমাধ্যমে তার ব্যাপারে মন্তব্য এবং তার কাজকর্ম নিয়ে সহকর্মীদের অভিমত – খুঁজে দেখা গুরুত্বপুর্ণ।

 

২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভেখেরনিয়ায়া মস্কোভা সংবাদপত্রটি লাটভিয়ান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এইনার্স গ্রাউডিনসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেখানে তার পরিচয় দেয়া হয় “ওএসসিই বিশেষজ্ঞ” হিসেবে। কিন্তু এই ব্যক্তির সাথে  অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই) এর কোন সম্পর্কই ছিল না। ওএসসিই মিশন ইন ইউক্রেন তাদের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

 

প্রথমে এই ধরণের বিশেষজ্ঞদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখুন। যদি কিছু পাওয়া না যায়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করুন। এর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, ফেইসবুক বা টুইটার। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো চায় না, তাদের বা তাদের বিশেষজ্ঞদের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হোক।

 

গণমাধ্যমে প্রায়ই কিছু নকল বিশেষজ্ঞ এসে হাজির হন। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ, রাশিয়ার এনটিভি একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। খবরের বিষয়বস্তু ছিল, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্য নিয়ে “পশ্চিমের ঝড়ো প্রতিক্রিয়া”। রিপোর্টে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর শীর্ষ সামরিক শক্তি নয়। সেখানে এই মতামত দেন ড্যানিয়েল প্যাট্রিক ওয়েলশ নামের এক ব্যক্তি। তার পরিচয় দেওয়া হয় মার্কিন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে।

কিন্তুআপাতদৃষ্টিতে বিখ্যাত মনে হওয়া থিংক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

 

আটলান্টিক কাউন্সিলের জেষ্ঠ্য সদস্য ব্রায়ান মেফোর্ড, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত পরিচয় উদ্ঘাটন করেন। সেন্টার ফর গ্লোবাল স্ট্রাটেজিক মনিটরিং নামের সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে তাঁকে নিজস্ব বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দেওয়া হচ্ছিল। তিনি সেই ওয়েবসাইট থেকে নাম সরিয়ে ফেলার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

 

মেফোর্ড বলেন, প্রথম দেখায় মনে হবে, ওয়েবসাইটটিতে বেশ চিন্তাশীল সংবাদ ও মতামত রয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝে ফেলা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নকল। প্রথমত, ওয়েবসাইটটি বিভিন্ন খ্যাতিমান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণ বিনা অনুমতিতে পুণঃপ্রকাশ করে। তারপর সঠিক তথ্যের সাথে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত উৎস থেকে পাওয়া “খবর” সূত্র ছাড়াই মিশিয়ে দেয়। ওয়েবসাইটটি সুপরিচিত চিন্তাবিদদের নামে মিথ্যা লেখাও প্রকাশ করে।

৪.২ যে বিশেষজ্ঞের অস্তিত্ব নেই

মাঝে মাঝে রাজনৈতিক মত প্রচার কিংবা দর্শককে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করতে, কোনো ব্যক্তিকে  বিশেষজ্ঞ সাজিয়ে গণমাধ্যমে আনা হয়।

 

যেমন, “পেন্টাগনের সিনিয়র রাশিয়া অ্যানালিস্ট এলটিসি ডেভিড জিউবার্গ”। তার একটি জনপ্রিয় ফেইসবুক পেইজ রয়েছে। ইউক্রেন ও রুশ গণমাধ্যমে তাকে পেন্টাগনের ভেতরের সূত্র হিসাবে প্রায়ই উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি “ডেভিড জিউবার্গ” নামে, সত্যিকারের ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এমনকি রাশিয়ার বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সদস্যও তাকে একজন সম্মাানিত বিশ্লেষক হিসাবে উদ্ধৃত করেছেন।

 

কিন্তু বেলিংক্যাট তাদের অনুসন্ধানে দেখতে পায়, জিউবার্গ আসলে একজন কাল্পনিক ব্যক্তি এবং মার্কিন বিনিয়োগকারী ড্যান কে. র‍্যাপোপোর্টের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ব্যক্তিগত ও পেশাগত কয়েকজন বন্ধু এই বানোয়াট চরিত্র তৈরিতে তাকে সাহায্য করেছেন। জিউবার্গকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, ব্যবহার করা হয়, র‍্যাপোপোর্টের কলেজ জীবনের এক বন্ধুর ছবি। আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে, অন্য বন্ধুরা জিউবার্গ সম্পর্কে নানা কথা লিখে গেছেন ধারাবাহিকভাবে।

 

আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ড্রিউ ক্লাউড, যাকে অনেক সময় মার্কিন শিক্ষা ঋণের সেরা “বিশেষজ্ঞ” অ্যাখ্যা দেওয়া হয়। সম্প্রতি উন্মোচিত হয়, এই ব্যক্তিও নকল। শিক্ষা ঋণের বিভিন্ন গল্প পাঠিয়ে, তিনি ইমেইলে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিতেন সংবাদমাধ্যমগুলোকে। ক্লাউড প্রায়ই বিভিন্ন অর্থনৈতিক-পরামর্শ বিষয়ক সাইটে অতিথি লেখক বা সাক্ষাৎকারদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি কোন কলেজে পড়েছেন, তা কাউকে বলেন না। শুধু বলেন, ঋণ নিয়ে তার কী লাভ হয়েছে। কেউ বুদ্ধি চাইলে, তিনি তাদেরকে নতুন করে ঋণ নিতে পরামর্শ দেন।

 

শেষ পর্যন্ত ক্রোনিকল অফ হায়ার এডুকেশন উদ্ঘাটন করে, ক্লাউড একজন কাল্পনিক ব্যক্তি। তাকে তৈরি করেছে দা স্টুডেন্ট লোন রিপোর্ট নামের এক শিক্ষা-ঋণ প্রতিষ্ঠান।

৪.৩ বিশেষজ্ঞ সঠিক, মতামত বিকৃত 

প্রায়ই তথ্য বিকৃতিকারীরা অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিশেষজ্ঞদের মতামতের অপব্যাখ্যা করে থাকে।

২০১৮ এর মে মাসে যৌনতা বিষয়ক শিক্ষাবিদ ডিয়ান কারসনের একটি টেলিভিশন বক্তব্য টুইটার, ব্লগ ও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায়, তিনি বলছেন, বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন করার আগে বাবা-মায়ের উচিৎ তার অনুমতি নেওয়া। অনেকেই তার সেই উপদেশমূলক বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

 

কিন্তু সেটা ছিল অতিরঞ্জন। তিনি আসলে বলেছিলেন, বাবা-মায়েরা চাইলে ডায়াপার পরিবর্তনের আগে শিশুদেরকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন, যাতে তারা বুঝতে শুরু করে যে তাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ডায়াপার পরিবর্তন নিয়ে শিশুদের মতামত চাওয়া হয়নি – এমনটাই বিশ্লেষন স্নপস এর।

 

এমন ঘটনাও ঘটে যেখানে সত্যিকারের বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা হয়। যাচাইয়ের জন্য সেই বিশেষজ্ঞ, যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তার ওয়েবসাইট খুঁজে দেখুন। বিশেষজ্ঞের গবেষণা, বক্তব্য বা লেখার মূল বিষয়টি বিশ্লেষণ করুন। সেগুলোর সাথে কি সংবাদের মিল পাওয়া যাচ্ছে?

 

এর একটি দারুণ উদাহরণ হচ্ছে সিজিএস মনিটর (ওয়েবসাইটটি এখন বন্ধ) এর “আমেরিকান ভিকটিমস অফ টেরর, ডিমান্ড জাস্টিস” শীর্ষক সংবাদটি। প্রতিবেদনটি ছিল মার্কিন-সৌদি মৈত্রীকে আক্রমণ করে লেখা। এবং অভিযোগ ওঠে, সেটি লিখেছেন ব্রুকলিন ইনস্টিটিউটের খ্যাতিমান মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল। কিন্তু রিডেল নিশ্চিত করেন, লেখাটি তিনি লেখেননি।

 

আটলান্টিক কাউন্সিল বলেছে, লেখক যে জন্মসূত্রে ইংরেজি-ভাষী কোনো ব্যক্তি নন, তার বহু সূত্র সেই লেখাতেই রয়েছে। বাক্যের ভুল জায়গায় বিশেষ্যের ব্যবহার এবং “এ” ও ”দ্য” এর মত নির্দেশকের অনুপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে, লেখক আসলে একজন রুশ ভাষাভাষী।

 

কৌশলগত কারণে সিজিএস মনিটর আগেই ব্রুস রিডেল এর বেশ কিছু লেখা অবিকৃত অবস্থাতেই রিপোস্ট করেছিল। যাতে রিডেলের অনেক আসল লেখার ভিড়ে, একটি বানোয়াট লেখা শনাক্ত না করা যায় এবং তাকেও আসল মনে হয়। প্রতারণার এমন কৌশল হয়ত ওই অঞ্চল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের বোকা বানাতে পারবে না। কিন্তু এটি কোনো গবেষক বা উইকিপিডিয়া সম্পাদককে প্রভাবিত করতে পারে, যেমনটি এই উদাহরণগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

৪.৪ বিশেষজ্ঞ বক্তব্যের ভুল অনুবাদ

ইংরেজি থেক অন্য ভাষায় অনুবাদ করার সময় এই পদ্ধতি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। এই ধরণের বিকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে, মূল লেখাটি খুঁজে বের করুন এবং সেটি আবার অনুবাদ করে দেখুন।

 

২০১৪ সালের মার্চে ক্রিমিয়া দখল করার পর রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়, জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমেয়ারের ক্রিমিয়া বিষয়ক বক্তব্য, রুশ প্রতিলিপিতে বদলে ফেলে ক্রেমলিন। মূল বক্তব্যের “দখল” শব্দটি, রুশ অনুবাদে হয়ে যায় “পুনর্মিলন”।

 

একই ধরণের “দোভাষীর ভুল” দেখা যায় ২০১৫ এর ২ জুন, যখন ফাইনান্সিয়াল টাইমস ব্লগের একটি লেখার ওপর ভিত্তি করে খবর প্রকাশ করে রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ নোভস্তি। স্টপফেইক খুঁজে পায়, আরআইএ নোভস্তির লেখায় রাশিয়ার জন্য নেতিবাচক বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়। সেখানে অনুবাদ ছিল বিকৃত এবং (ক্রিমিয়া) দখলের বিষয়টিকে দেখানো হয় ইতিবাচকভাবে।

 


৫. গণমাধ্যমের অপব্যবহার

বিখ্যাত গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করার এবং তাদের সমালোচনা না করার একটি সহজাত প্রবণতা রয়েছে আমাদের। এই প্রবণতাকেই প্রচারণাবিদ এবং প্রতারকেরা ব্যবহার করে থাকে।

৫.১ অখ্যাত গণমাধ্যম বা ব্লগের খবর ব্যবহার

 

মূলধারার বাইরে অখ্যাত গণমাধ্যম থেকে প্রায়ই সন্দেহজনক সংবাদ ছড়ানো হয়। এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোর নাম দেখে গুরুত্বপুর্ণ মনে হয় এবং তাদের ছড়ানো গুজবকেও মূলধারার গণমাধ্যমের সংবাদ বলে দাবি করা হয়।

 

ইউক্রেনে যুদ্ধের সময় নিহত ১৩ জন মার্কিনীর লাশ প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব নিয়ে খবর প্রচার করার সময় বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদপত্র ভিজগ্লিয়াদ ও বেশ কিছু রুশ গণমাধ্যম “ওয়েস্টার্ন মিডিয়া” কে উদ্ধৃত করেছে।

 

কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন টাইমস এবং স্টপফেইক জানায়, এই “ওয়েস্টার্ন মিডিয়া” একটি বিশ্বাস-অযোগ্য অনলাইন। তাদের লিংকগুলোতে ক্লিক করলে, হোয়াটডাজইটমিন ডট কম সাইটে নিয়ে যেত। এই সংবাদের লেখক ছিলেন সোরশা ফাল, যেই চরিত্রটিকে তৈরি করা হয়েছিল গুজব ছড়ানোর জন্য।

 

এই ধরণের ম্যানিপুলেশন মোকাবেলার জন্য সংবাদগুলোর উৎসগুলোতে যেয়ে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে হবে।

স্টপফেইক বলেছে, রুশ গণমাধ্যমগুলো নামপরিচয়হীন ব্লগপোস্টও উদ্ধৃত করছে। ২০১৫ সালের ১৬ অগাস্ট রাশিয়ার আরআইএ নোভস্তি মালয়েশিয়ান বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করে, যার উৎস ছিল জার্মান অনলাইন গণমাধ্যম প্রোপাগান্ডাশাউ। সেই গণমাধ্যমে “ডক” ছদ্মনামের একজনের লেখা একটি মতামত এবং প্যাট্রিক আর্মস্ট্রং নামের রাশিয়ার কানাডিয়ান দূতাবাসের একজন প্রাক্তন রাজনৈতিক উপদেষ্টার লেখা প্রকাশ করে। সেটা প্রো-রুশ সাইট রাশিয়া ইনসাইডারেও প্রকাশিত হয়।

 

আরআইএ নোভস্তি এবং আরটি, “ডক” এর মতামতকে বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ বলে প্রকাশ করেছে। রুশ গণমাধ্যম আর্মস্ট্রং এর লেখা নিয়েও কিছু উল্লেখ করেনি, যার মধ্যে পূর্বে ভুল প্রমাণিত অনেক কিছুর উপস্থিতি রয়েছে।

৫.২ সত্য খবর পাল্টে বলা

প্রকৃত গণমাধ্যমের সঠিক সংবাদকে বদলে দিয়ে প্রকাশ করতে পারে “ফেইক নিউজ” সাইট।

যেমন স্নপস এবং পলিটিফ্যক্ট লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেস সদস্য ম্যাক্সিন ওয়াটার্সের তথাকথিত একটি উক্তি সিএনএন এর একটি ছবির মধ্যে যুক্ত করা হয়। কিন্তু উক্তিটি আদৌ তার নয় এবং যে ছবিতে সেটি বসানো হয়েছে, সেটিও ভিন্ন একটি সাক্ষাৎকার থেকে নেয়া।

৫.৩  আসল গণমাধ্যম থেকে কাল্পনিক উদ্ধৃতি

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়া ও মলদোভিয়ার কিছু সাইট, ক্রিমিয়াতে স্বর্ণের খনি আবিষ্কারের একটি সংবাদ ছড়ায়। মলদোভিয়ার গাগাউজইয়েরি ডট এমডি ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রকাশিত খবরে জানায়, রুশ ভূতত্ত্ববিদরা বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ-খনি আবিষ্কার করেছে।

 

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই খবরের উৎস ব্লুমবার্গ। কিন্তু হাইপারলিঙ্কে ক্লিক করার পর, তা ব্লুমবার্গে যায় না। এটাই হলো খবরটি মিথ্যা হওয়ার প্রথম লক্ষণ। ব্লুমবার্গের সাইট এবং গুগলে, আলাদাভাবে সার্চ করেও এমন কোন সংবাদ পায়নি স্টপফেইক।

 

আরেক ঘটনায় দেখা যায়, ভারতে একটি ভুয়া নির্বাচনী জরিপের নাম দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠানো হচ্ছিল। সেই বার্তায় বিবিসির হোমপেইজের লিঙ্ক দেওয়া ছিল বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য। যদিও বুম এর বিশ্লেষণ বলছে বিবিসি সেই জরিপ নিয়ে কোন সংবাদই প্রকাশ করেনি।

 


৬. তথ্য বিকৃতি

সামাজিক জরিপ এবং অর্থনৈতিক সূচকের ডেটাও বিকৃত করা সম্ভব।

৬.১ গবেষণায় পদ্ধতিগত বিকৃতি

জরিপের পদ্ধতিতে দূর্বলতা থাকতে পারে।

যেমন, ২০১৮ সালের মার্চে রুশ গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, ইউক্রেনে ইহুদি-বিদ্বেষ বেড়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে “সতর্কতার সাথে ধামাচাপা দিচ্ছে।”

 

রুশ ওয়েবসাইট ইউক্রেন ডট আরইউ ইজরায়েলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৭২ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে, যেখানে দেখানো হয়, ইউক্রেনের ইহুদিরা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে শারীরিক ও বাচনিক আক্রমণের শিকার হয়েছে বেশি।

 

কিন্তু রিপোর্টটি কোনো পদ্ধতিগত জরিপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনে জেনোফোবিয়া মনিটর করছে, তাদের তথ্যও লেখকরা পর্যালোচনা করেনি। লেখকরা, শুধু সোর্সের বক্তব্যের ভিত্তিতে ঘটনার একটি সরল হিসাব দাঁড় করিয়েছেন। ঘটনার গভীরতা বা তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা হিসাব করেননি। উদাহরণস্বরূপ, বিক্ষোভের সময় সম্পত্তির ক্ষতি সাধন এবং মৌখিক অপমান – দুই ধরণের ঘটনাই সমগুরুত্বে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 

এই রিপোর্টের সবচেয়ে জোরালো বক্তব্যটি ছিল আগের বছরের তুলনায় ইউক্রেনে ইহুদি-বিদ্বেষী ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু মনিটরিং প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইহুদি-বিদ্বেষী হামলা বৃদ্ধি পেলেও তার পরিমাণ সামান্য – ১৯ থেকে ২৪। ন্যাশনাল মাইনরিটি রাইটস মনিটরিং গ্রুপ, যারা ইউক্রেনে দশ বছরের বেশি সময় ধরে বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধ পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের সংগ্রহ করা তথ্য এটাই নির্দেশ করে। রেডিও লিবার্টিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জানান, ২০১৭ সালে ইহুদি-বিদ্বেষের কোনো ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়নি এবং ২০১৬ সালে কেবল একটি ঘটনা ছিল।

 

সতর্ক দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়, রিপোর্টটিতে পরিস্থিতির গভীর পর্যালোচনা অনুপস্থিত। যাই হোক, ইহুদি-বিদ্বেষের ধারণা ইউক্রেন-বিরোধী প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেইনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল, যেটি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে সমর্থন করার জন্য ক্রেমলিন ব্যবহার করছিল। একারণে রিপোর্টের মূল বক্তব্যটি রুশ প্রোপাগান্ডা গণমাধ্যম সাথে সাথেই লুফে নেয়।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের ১৮টি দেশে জরিপ চালিয়ে দেখেছে, ইউরোপ মহাদেশে ইহুদি-বিদ্বেষের হার সবচেয়ে কম ইউক্রেনে। নথিপত্র বলছে, রাশিয়াতে এই হার এর চেয়ে তিন গুণ বেশি।

 

অবশ্য ইউক্রেন ডট আরইউ পিউ-র গবেষণা পদ্ধতির সমালোচনা করে বলেছে,  “আপনি কি ইহুদিদের আপনার দেশের নাগরিক হিসাবে দেখতে চান?” প্রশ্নটি ইহুদিদের প্রতি ভালোবাসা বা ঘৃণা, কোনটাই নির্দেশ করেনা।

 

পিউ রিসার্চ সেন্টারের মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জাতীয়তাবাদ  শীর্ষক জরিপটিতে গবেষণা পদ্ধতি নামের একটি অংশ রয়েছে, যেখানে গবেষণাটি কীভাবে করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা রয়েছে। ভুয়া খবর যাচাইয়ের জন্য গবেষণা পদ্ধতি বিশ্লেষণ করা এবং বোঝা খুবই জরুরী।

৬.২ ফলাফলের ভুল ব্যাখ্যা

প্রোপাগান্ডার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেটি সত্য এবং আসল সংবাদের মতো হয়। তাই প্রোপাগান্ডা-বিদ ব্যক্তিদের দাবিগুলো প্রায়ই বিভিন্ন জরিপের বিকৃত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

 

রাশিয়ার প্রো-ক্রেমলিন সাইট ইউক্রাইনা, ইউক্রেন সম্পর্কে ফিচ রেটিংসের সর্বশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে। সেখানে সার্বিক স্থিতিশীল অবস্থার পূর্বাভাস সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে কেবল নেতিবাচক উপাদানগুলোতেই জোর দেওয়া হয়। ফিচ রিপোর্টের কেবল প্রথম বাক্যটি ব্যবহার করে ইউক্রাইনা দাবি করে যে আজারবাইজান এবং নাইজেরিয়ার পর ইউক্রেন পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ছায়া অর্থনীতি।

 

ফিচ রিপোর্টের প্রথম বাক্য ছিলঃ “ইউক্রনের রেটিং – তার দূর্বল বাহ্যিক তারল্য, উচ্চ সরকারী ঋণের বোঝা, কাঠামোগত দূর্বলতা, দূর্বল ব্যাংকিং খাত, প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা এবং ভূ-রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঝুঁকিকে প্রকাশ করে।”

 

এই বাক্যের পরে যা আছে তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে ফিচ আউটলুক থেকে এই একটি তথ্যই কেবল ইউক্রাইনা গ্রহণ করেছে। এই বাক্যের পরে আছে: “নির্ভরযোগ্য নীতিমালা, সার্বভৌম-ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তার ধারাবাহিকতা – এসব ঝুঁকিতে ভারসাম্য এনেছে।”

এমন অপব্যাখ্যাকে ভুল প্রমাণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সম্পূর্ণ রিপোর্টটি খুঁজে বের করে, পড়া।

 

ইউক্রাইনার এমনই আরেক দাবি হচ্ছে ইউক্রেনের বেশিরভাগ নাগরিক ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণে আগ্রহী নয়। এই মিথ্যা দাবির উৎস হচ্ছে ডেমোক্রেটিক ইনিশিয়েটিভস ফাউন্ডেশন এর একটি জরিপ, যেটি ২০১৮ এর জুনে পরিচালনা করা হয়।

 

তার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল: “ইইউ দেশগুলোতে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ ব্যবস্থার বিষয়টি আপনার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?” উত্তরে দেখা যায়, ১০ শতাংশ মানুষ বলেছে “খুব গুরুত্বপূর্ণ”, ২৯ শতাংশ বলেছে “গুরুত্বপূর্ণ”, ২৪ শতাংশের জবাব ছিল “সামান্য গুরুত্বপূর্ণ” এবং ৩৪ শতাংশ বলেছে “গুরুত্বপূর্ণ নয়”। চার শতাংশ উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।মাত্র ৩৪ শতাংশ মানুষ বলেছে যে ইইউ দেশগুলোতে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

কিন্তু রুশ গণমাধ্যম “সামান্য গুরুত্বপূর্ণ” এবং “গুরুত্বপূর্ণ নয়” একসাথে যোগ করে সেটিকে ৫৮ শতাংশ দেখায় এবং দাবি করে যে ইউক্রেনের বেশিরভাগ মানুষ এই সুযোগ নিতে আগ্রহী নয়।

যাই হোক, যখন “খুব গুরুত্বপূর্ণ”, “গুরুত্বপূর্ণ” এবং “সামান্য গুরুত্বপূর্ণ” উত্তরগুলি যোগ করা হয়, সেটি ৬৩ শতাংশতে গিয়ে দাঁড়ায়। এটার অর্থ হচ্ছে ৬৩ শতাংশ ইউক্রেনবাসী মনে করে যে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ ব্যবস্থার গুরুত্ব রয়েছে।

৬.৩ অকার্যকর তুলনা

ইউক্রাইনা,একটি লেখায় দাবি করেছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের খাবারের মূল্য ইউরোপের অন্যান্য এলাকার সাথে সমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দাবির উৎস হচ্ছে ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাইকোলা আজারভ এর একটি ফেইসবুক পোস্ট। আজারভ এর দাবিটির ভিত্তি হচ্ছে আরআইএ নোভস্তির একটি আকর্ষনীয় কিন্তু সন্দেহজনক ইনফোগ্রাফিক।

 

নুমবেও এর জীবনযাত্রার ব্যয় সূচক অনুযায়ী মলদোভা, মেসিডোনিয়া এবং আলবেনিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেন ইউরোপের সবচেয়ে সস্তা দেশ। এই সাইটটি পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের খাবারের দামের তুলনা করে, যেখানে দেখা যায় যে ইউক্রেনের গড় মূল্য ইউরোপীয় গড় মূল্যের স্তর থেকে অনেক নিচে। স্টপফেইক এক্ষেত্রে দাবি করে, অন্যান্য নির্দেশকগুলো আমলে না নিয়ে কেবল সংখ্যা দ্বারা বিচার করলে সেটি সঠিক হয়না।

 

ভুয়া খবর থেকে সঠিক সংখ্যা ও তথ্য আলাদা করার চেষ্টা করতে হবে। এ ধরণের মিথ্যায় প্রায়ই সঠিক, সন্দেহজনক ও মিথ্যা সংখ্যা মেশানো থাকে।

২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কানাডার এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বলা হয়, কানাডা অবসরভোগীদের চেয়ে উদ্বাস্তুদের জন্য বেশি অর্থ খরচ করে।কানাডার সরকারি তথ্য বলছে এটি সঠিক নয়। কিছু সরকারি-সহায়তা পাওয়া উদ্বাস্তু, কানাডায় তাদের প্রথম বছরে একটি ছোট মাসিক ভাতা পায়, যেটি মাথাপিছু প্রায় ৮০০ ডলার এবং সংস্থাপন ভাতা হিসাবে এককালীন পায় প্রায় ৯০০ ডলার। তারা ভাড়া বা অন্য কিছু জমা রাখার মাধ্যমে আরও কিছু ডলার ঋণ পেতে পারে। গর্ভবতী নারীদের, সদ্যজাত শিশু এবং স্কুলগামী শিশুদের জন্য কিছু ক্ষুদ্র এককালীন ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সরকারী-সহায়তা প্রাপ্ত উদ্বাস্তুরা কানাডা আসা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ সুদসহ ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।

 

কানাডার আশ্রয়-প্রার্থীরা স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে প্রাদেশিক সামাজিক সহায়তার যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত কোনো সামাজিক সহায়তা পান না। বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া উদ্বাস্তুরা কোনো সামাজিক সহায়তার জন্যই যোগ্য না – পৃষ্ঠপোষকতার সময়ে তাদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব তাদের পৃষ্ঠপোষকদের, যেটি সাধারণত প্রায় এক বছর হয়ে থাকে।

 

অন্য দিকে, সরকারি ওয়েবসাইট বলছে, সর্বনিম্ন উপার্জন স্তরের বয়স্ক সিঙ্গেল কানাডিয়রা গ্যারান্টিড ইনকাম সাপ্লিমেন্ট এবং ওল্ড এজ সিকিউরিটি পেনশন এর মাধ্যমে মাসিক অন্তত ১৩০০ ডলার করে ভাতা পান। এবং ২০০৪ এর একটি গবেষণা বলছে, কানাডায় আগমনের ৭ বছরের মধ্যে উদ্বাস্তুদের উপার্জনের বেশিরভাগ অংশ আসে কর্মসংস্থান থেকে, সামাজিক সহায়তা থেকে নয়। তারা অনেকসময় বিজনেস-ক্লাস বা ফ্যামিলি-ক্লাস অভিবাসীদের থেকে ভালো সামর্থ্য রাখে।

সারাংশ

জনমত জরিপ এবং অন্যান্য গবেষণা পড়ার সময় আপনার যেসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে:

  • গবেষণা পদ্ধতি কি বর্ণনা করা হয়েছে?
  • প্রশ্নগুলো কিভাবে তৈরি করা হয়েছে? মাঝে মাঝে তারা নির্দিষ্ট উত্তর পেতে উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্ন সাজানোর চেষ্টা করেন।
  • উত্তর প্রদানকারী ব্যক্তিদের নমুনা কি ভিত্তিক: বয়স, বসবাসের স্থান ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য? নমুনা কি পরিসংখ্যানগত ভাবে সঠিক?
  • গবেষকের খ্যাতি কেমন? তিনি কি পেশাদার সমাজে পরিচিত?
  • গবেষণাটির জন্য কে অর্থায়ন করেছে? সত্যিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গবেষণালব্ধ তথ্য প্রচারের সময় কখনো দাতার তথ্য গোপন করে না।
  • আগে পাওয়া তথ্যের সাথে গবেষণার ফলাফল তুলনা করে দেখুন। যদি বড় পার্থক্য থাকে, তাহলে সেই ফলাফল অবশ্যই সন্দেহজনক।

প্রাথমিক চিকিৎসা

এসব পরামর্শের উদ্দেশ্য হল, তথ্য নিয়ে প্রতারণার বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো, যাতে যে কেউ দ্রুত সত্যতা যাচাই করতে পারেন। “তথ্য যাচাইয়ের এই ফার্স্ট এইড কিট”, এমন একটা জায়গা যেখান থেকে যে-কোনো দিকে আরও গভীর অনুসন্ধান শুরু করা যেতে পারে।

পাঠকদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আপনাদের প্রতিক্রিয়া জানান এবং সম্পূরক তথ্য থাকলে দিন। আমি ইমেইলটুইটার এবং ফেইসবুকে আপনাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।

তথ্য যাচাই সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে আপনাদেরকে স্টপফেইক ওয়েবসাইটের টুলস সেকশনটি দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

আরো দেখুন তথ্য যাচাই ও ভেরিফিকেশন নিয়ে জিআইজেএনের রিসোর্স পেইজ

 

(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/৩ আগস্ট ২০২১)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন

নতুন প্রকাশ