:: সাইবারবার্তা ডেস্ক ::
যেসব ক্রিকেটার তথ্য-পরিসংখ্যানকে ঠিকঠাক কাজ লাগায় না ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্য নেয় না, ক্রিকেটে তাদের ক্যারিয়ার খুব বেশি দূর এগোবে না বলে মনে করেন ভারতীয় ক্রিকেটার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। একইসঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কই বড় অস্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে শেষ হয়েছে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস এআই কনক্লেভ ২০২৫। প্রযুক্তিজগতের সেই সম্মেলনেই ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে কথা বলেছেন অশ্বিন। সেখানেই ক্রিকেটে এআই ও ডেটা বা তথ্য-পরিসংখ্যানের প্রভাব নিয়ে বলেছেন জনপ্রিয় এই খেলোয়াড়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিজের এই ধারণা কতোটা সঠিক তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অশ্বিন। বলেছেন, ‘অন্যতম বড় কারণ হবে প্রচুর মানুষ ডেটার সাহায্য নেবে ও ডেটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
অশ্বিনের মতো করেই ভাবছেন ভোগলেও, ‘শুরুর দিকে তো বলের হিসাবেও নয়, ব্যাটসম্যানকে মাপা হতো রান ও মিনিটে। স্ট্রাইক রেটের তো কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু আজ আমরা সবকিছুই বিশ্লেষণ করছি—ওয়াগন হুইলস, বিহাইভস, সুইং পারসেন্টেজ, এমনকি কী হতে পারে সেই প্রেডিকটিভ মডেলও।’
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে তৎক্ষণাৎ কোনো বিষয় নিয়ে জানাবে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভোগলে। বলেছেন, টেস্ট ম্যাচের প্রথম সেশনের প্রথম আধা ঘণ্টা পরেই হয়তো একজন বোলারের পক্ষে সর্বোচ্চ কত সুইং করানো সম্ভব বলা যাবে।
প্রকৌশলবিদ্যায় পড়াশোনা করা অশ্বিন বললেন, কোন ডেটা ব্যবহার করতে হবে, সেটি জানাও গুরুত্বপূর্ণ, ‘অকাজের তথ্য ও কাজের তথ্যের পার্থক্য আমি বুঝি। ওয়াগন হুইলের মতো জিনিস আমার কাছে শুধুই একটি ছবি। একজন বোলার হিসেবে আমি কাজে লাগানোর মতো তথ্য চাইব, এমন তথ্য চাইব, যা দিয়ে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। যেমন কী করলে ঋষভ পন্তের মতো ব্যাটসম্যানকে আটকানো যাবে। লেগ সাইডে ওর স্ট্রাইক রেট ১৫০–এর ওপরে কিন্তু অফ সাইডে তার কষ্ট হয়।’
তবে অশ্বিন এটাও মনে করেন, ডেটা বিশ্লেষণ অনেকের জন্য বুমেরাং হতে পারে, ‘কীভাবে খেলোয়াড়ের কাছে ডেটা পৌঁছে দেবেন, সেটি একটি বিষয়। আপনি যদি একজন ব্যাটসম্যানকে বলেন সে বেশির ভাগ রানই লেগসাইডে করছে ও অফসাইডে ভালো খেলছে না তবে দুটি বিষয় হতে পারে। হয় ওই ব্যাটসম্যান নিজের খেলার উন্নতি করবে, নয় চাপে ভেঙে পড়বে।’
তবে সব সময় শুধু ডেটা দিয়েই যে কাজ হবে না, সেটিও জানেন অশ্বিন। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথের উদাহরণ টানলেন, ‘স্মিথ কীভাবে ব্যাটে গতি তোলে, সেটি বুঝতে আমি অনেক দিন তার হাতের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করেছি। আমি তার অনন্য কৌশল বুঝতে চাইছিলাম। শুধু ডেটা আমাকে সাহায্য করতে পারেনি, আমাকে এমন কিছু খুঁজে নিতে হয়েছে, যা মাঠে সাহায্য করবে।’
অশ্বিন মজা করে বলেন, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ইউটিউব চ্যানেল তাকে অনেক সাহায্য করেছে। অশ্বিন জানান, তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখেন। এ কথা শুনে ভোগলে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার মাথার র্যাম কত টেরাবাইটের?’ অশ্বিনের উত্তর, ‘আমার মাথা এআই।’
তবে শুধু ডেটা ব্যবহারই নয়, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকেও বড় করে দেখেন অশ্বিন, ‘ক্রিকেট মাথারও খেলা। এম এস ধোনির মতো ক্রিকেটার যদি বুঝে যায় আপনি কী পরিকল্পনা করেছেন, তবে তিনি তো আপনাকে টেক্কা দেবেন। ডেটা আপনাকে পথ দেখাতে পারে, তবে আপনার সহজাত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ম্যাচ জেতাবে।’
প্রযুক্তির গুণগান করলেও তাই শেষ পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্ককেই সবচেয়ে বড় অস্ত্র ভাবেন অশ্বিন, ‘শেষ পর্যন্ত খেলাটা খেলোয়াড়দের ও তাদের মানিয়ে নেওয়া, নতুন কিছু করা ও চাপের মুখে ভালো কিছু করার বিষয়। ডেটা একটা উপকরণমাত্র, তবে শেষ পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।’
(সাইবারবার্তা.কম/২৬জানুয়ারি২০২৫/০৯৪৮)