নিজস্ব প্রতিবেদক, সাইবারবার্তা: করোনাকালে সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বৈধভাবে প্রবেশে অনেকটাই কড়াকড়ি ইউরোপের দেশগুলোতে। ব্যতিক্রম নয় ইতালিও।তবে এর পরও থেমে থাকেনি দেশটিতে অবৈধ পথে অভিবাসনের প্রচেষ্টা। সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করেই গত ছয় মাসে ইতালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আত্মসমর্পণের তালিকায় থাকা নাগরিকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশীরাই।
জার্মানিভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সরবরাহকারী সংস্থা স্ট্যাটিস্টা প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি বছরে প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করে বাংলাদেশী পরিচয়ে আত্মসমর্পণ করে নিবন্ধিত হয়েছে ২ হাজার ৬০৮ জন। এ সংখ্যা ছয় মাসে মোট আত্মসমর্পণকারীর ২১ শতাংশ। ইতালিতে ছয় মাসে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে তিউনিসিয়ার নাগরিকরা। ২ হাজার ১১৩ জন তিউনিসিয়ার নাগরিক ইতালিতে প্রবেশ করেছে, যা মোট সংখ্যার ১৪ শতাংশ।
অভিবাসনপ্রত্যাশীর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আইভোরি কোস্ট। দেশটির মোট ১ হাজার ৪১০ নাগরিক ইতালিতে পৌঁছে নিবন্ধন করেছে। এছাড়া ইরিত্রিয়া থেকে গিয়েছে ৯৭১ জন, মিসর থেকে ৯৫৮, গিনির ৯৪৫, সুদানের ৯০৫, মরক্কোর ৬২৩, মালির ৫৬৮ ও আলজেরিয়া থেকে ৪৫৬ জন নাগরিক ইতালিতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে বছরের প্রথম ছয় মাসে।
এদিকে ইতালিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনকারীর তালিকায়ও বাংলাদেশীরা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।চলতি বছরের দুই মাসে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) দেশটিতে আশ্রয় প্রার্থনা করে আবেদন করেছে ৮৫৭ জন বাংলাদেশী। এ তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের নাগরিকরা। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে মোট ৯৬৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক ইতালিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।
গত কয়েক বছরে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসনে সবচেয়ে আকর্ষণীয় রুট হয়ে উঠেছে লিবিয়া। দেশটিতে দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগ এক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে তারা। তবে এতে ঝুঁকি অনেক বেশি নিতে হয়। ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে ভিন্ন ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশে সক্ষম হয়।
লিবিয়া ও তিউনিসিয়া থেকে অভিবাসীদের ইউরোপে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পয়েন্ট ইতালি। দেশটি অভিমুখী নৌকাগুলো লিবিয়া থেকে সরাসরি না গিয়ে প্রায়ই তিউনিসিয়া উপকূল হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। আইওএমের তথ্য অনুসারে, লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টার সময় এ বছরের জানুয়ারি থেকে তিউনিসিয়ায় এক হাজারেরও বেশি অভিবাসী আটক হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীদের সিংহভাগই ইতালি প্রবেশের উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। এর প্রথম ধাপে লিবিয়া যেতে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। ইউরোপে প্রবেশের আগেই অন্য দেশে বাংলাদেশীদের উদ্ধার হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের ফেরত নিয়ে আসতে হয়।
এ প্রসঙ্গে ইতালির মিলানে বাংলাদেশ মিশনের কনসুলেট অফিসের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ বলেন, ইতালিতে ঠিক কতসংখ্যক বাংলাদেশী অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রায়ই এ-সংক্রান্ত কিছু তথ্য প্রকাশ করে আসছে।
সেটির ভিত্তিতে বলা যায়, অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের দিক থেকে বাংলাদেশীরা তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে, বিশেষ করে ইতালিতে। যাদের বেশির ভাগই এসেছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে। ইতালির পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮৯ জন বাংলাদেশী নাগরিকের ইতালিতে বৈধভাবে বসবাসের রেসিডেন্স পারমিট রয়েছে, যাদের অনেকেই ইতালির পাসপোর্ট পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তালিকায় প্রথম সারিতে আছে বাংলাদেশীরাই। আর এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারানোর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। গত জুনের শেষ সপ্তাহেই ভূমধ্যসাগরে ভাসমান নৌকা থেকে ২৬৪ অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশীকে উদ্ধার করেছে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। এসব বাংলাদেশীকে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে দেশটির উত্তর-পূর্বে এল কেটফ উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়।
(সাইবারবার্তা.কম/আইআই/৮ জুলাই ২০২১)