:: সাইবারবার্তা ডেস্ক :: অনলাইন জুয়ার ভয়াল থাবার কবলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে এই নিষিদ্ধ ও ধ্বংসাত্মক খেলায়। উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকাতেই এই অনলাইন জুয়া খেলায় মেতে উঠেছে যুবসমাজ।
অনলাইন জুয়া বলতে এখন আর শুধু তাস বা ক্যাসিনো বোঝায় না। এই খেলাগুলোর ধরন দিনদিন পালটে যাচ্ছে। মোবাইল ফোনে নানা ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে এখন খেলা হচ্ছে ক্রিকেট, ফুটবল, তিন পাত্তি, রামি, রঙের খেলা, এভিয়েটর গেম, আইপিএল বেটিং এমনকি জনপ্রিয় লুডু খেলাটিও আজ অনলাইন জুয়ার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। দিনের পর দিন চলছে টাকা দিয়ে লুডু খেলা, যেখানে হারলেই টাকা যাচ্ছে অন্যের হাতে, আর জিতলেও শেষমেশ হারতেই হচ্ছে। অনেকেই শুরু করে মজা করে, পরে সেই মজাই ভয়াবহ আসক্তিতে পরিণত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এই অনলাইন জুয়ার আসর বসছে গ্রামের চায়ের দোকান, চালের দোকান কিংবা সুতার দোকানের ভেতর। বাইরে থেকে সাধারণ ব্যবসা মনে হলেও ভেতরে চলছে মোবাইলের পর্দায় হাজার হাজার টাকার বাজি। দুপুরে চা খাওয়ার অজুহাতে, রাতে দোকান বন্ধের পরেও একে একে হাজির হয় নির্দিষ্ট কয়েকজন। বসে যায় আড্ডা, হাতে হাতে মোবাইল, চোখ পর্দায়, আর দেদারসে চলতে থাকে জুয়া খেলা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে
বছরের পর বছর ধরে চলছে এই নিষিদ্ধ কারবার।
বিশনন্দী এলাকার এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি প্রথমে বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে শুরু করি। লুডুতে ৫০ টাকা দিয়ে শুরু, পরে একসময় হাজার টাকার ওপরে চলে যায়। জিতলে মজা লাগত, কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই হারতাম। পরে ঋণ করতে করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো দেনা হয়। এখন চাকরি নেই, ঋণের চাপে ঘুম হারাম হয়ে গেছে।”
সবচেয়ে বিপদে পড়ছে পরিবারগুলো। ঘরে শান্তি নেই, বাবা-মা সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, স্ত্রী স্বামীর ওপর আস্থা হারাচ্ছেন, ভাই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিচ্ছে। সন্তানরা পড়াশোনার বদলে সারা দিন মোবাইলে চোখ রেখে বাজির জন্য অপেক্ষা করছে। যুবকরা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে, মনোযোগ ভেঙে যাচ্ছে পড়ালেখা বা পেশাজীবনে। একদিকে আসক্তি, অন্যদিকে টাকা হারানোর চাপ, সব মিলিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছেন অনেকে।
এ বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন বলেন, “আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি। অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত অভিযোগ এলে তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।” আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, “অনলাইন জুয়া একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের উপজেলাতেও বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা আইসিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছি। জনসচেতনতাও জরুরি, তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
(সাইবারবার্তা.কম/২০এপ্রিল২০২৫/১১৪২/কম)