শনিবার, আগস্ট ২ ২০২৫ | ১৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল | ৭ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

অনলাইনে ভুয়া সংবাদের ফাঁদ, মূল ধারার গণমাধ্যমে থাকার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার, সাইবারবার্তা: ক্রমেই ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে মাধ্যমে ছড়ানো ইন্টারনেটে কনটেন্টের ৮০ শতাংশই নকল বা ভুয়া বলে গবেষণায় এসেছে। ভুয়া সংবাদে শুধু সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতাই ছড়ায় না, ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান যেকেউ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারেন। তাই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত হতে এবং ভুয়া সংবাদের ফাঁদ থেকে রক্ষায় মূল ধারার গণমাধ্যমের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞারা।

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর উপলক্ষে রবিবার রাতে এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ’ বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী কোম্পানি সোফোসের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার প্রযুক্তিবিদ এএইচএম মোহসিন, ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের গবেষণা সহকারী ফ্যাক্টচেকার (ফ্যাক্টওয়াচ) শুভাশীষ দীপ।

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস বিষয়ক জাতীয় কমিটির (এনসিক্যাম) আয়োজিত ওয়েবিনারে মডারেটর ছিলেন কমিটির সদস্য কাজী মুস্তাফিজ। অক্টোবর মাসব্যাপী সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি, সাইবার নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান শোফোস ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়ানওয়ার্ল্ড।

এএইচএম মোহসিন বলেন, ব্যাক্তি, রাজনৈতিক গোষ্ঠী, কিংবা সাইবার দুর্বৃত্ত যেকেউ ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ ছাড়ানোর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর পেছনে। এর মাধ্যমে শুধু সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে তা নয়, বরং অসচেতনতার কারণে যেকেউ সাইবার দুর্বৃত্তদের ছড়ানো ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হতে পারেন। এতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তিনি ভুয়া সংবাদের ফাঁদ থেকে রক্ষায় মূল ধরার সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতি আস্থা রাখতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন।

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ছড়ানো কিছু ভুয়া ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছে এসব তথ্য অসত্য। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু তালিকায় থাকা কেউ তথ্য দিলেও সেটি যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিতের আগে প্রচার করা উচিত নয়।

পুলিশের এডিসি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন তথ্যের মধ্যে বসবাস করছে। সেই তথ্য কতোটা সঠিক না ভুল সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রভাব ব্যাপক। ব্যাক্তি, গোষ্ঠী, রাষ্ট্রকে টার্গেট করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। দেশের আইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য পুলিশ মামলা গ্রহণ ছাড়াও ভুয়া তথ্য ইন্টারনেট থেকে ছড়ানো বন্ধ করার বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শুভাশীষ দীপ জানান, নানাভাবে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়। আগে ছবি দেখা যেতো। এখন ভিডিও দেখা যায়, যা দেখে মনে হতে পারে সম্পূর্ণ আসল ভিডিও, মূলত কারিগরি কারসাজিতে ভুয়া ভিডিও তৈরি হচ্ছে, যা ডিপফেইক প্রযুক্তি নামে পরিচিত। ইন্টারনেটে যেকোনো কিছুতে ক্লিক করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, আগে নিজের মনকে জিজ্ঞেস করতে হবে এই তথ্যটি সঠিক না ভুল। তাহলেই সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মূল ওয়েবসাইটগুলো যাচাই করলে সঠিক বা ভুল নির্ণয় করা যাবে। তবে অনেক ভুল তথ্যই সাধারণত শনাক্ত করা কঠিন হয়।

কাজী মুস্তাফিজ বলেন, ইন্টারনেটে ছড়ানো বিভিন্ন কনটেন্টের ৮০ শতাংশই নকল বা ভুয়া বলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্টাটিসটার গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘দেখা মাত্রই ক্লিক নয়, যাচাই ছাড়া শেয়ার নয়’ –এই সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন প্রচারে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আলোচকরা ভুয়া তথ্যের বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাইবার সচেতনতায় প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবর ২০২২’ উদ্যাপন করা হয়। বাংলাদেশেও এ কর্মসূচি পালনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি পেশাজীবীদের নিয়ে গঠন হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসবিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিক্যাম)। এই কমিটি কর্তৃক ২০২২ সালে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাসের থিম বা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নিরাপদ অনলাইন কঠিন তো নয়, সতর্ক থাকলেই হয়’।

(সাইবারবার্তা.কম/১৭অক্টোবর/কেএম)

শেয়ার করুন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
আরও পড়ুন